বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিহত শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের প্রথম নামাজে জানাজা হয়েছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। জানাজা শেষে সেখানে মানববন্ধনে অংশ নেন তার সহপাঠীরা। তারা ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে এই ঘটনার দ্রুত তদন্তের দাবি জানান।
নামাজে জানাজা শেষে ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, নিখোঁজ হওয়ার আগে গত শুক্রবার বাড়ি থেকে গ্রুপ স্টাডি করার কথা বলে বের হয়েছিলেন ফারদিন।
ফারদিন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি এলাকায় হলেও তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়া শান্তিবাগে। সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পুলিশ ফারদিনের লাশ উদ্ধার করে।
বুয়েটে জানাজার নামাজ শেষে ফারদিনের বাবা গণমাধ্যমে কথা বলতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। অশ্রুভেজা কন্ঠে তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে সে বাড়ি থেকে খাওয়া দাওয়া করে বের হয়েছে। সে তার মাকে বলেছে, আম্মু কাল পরীক্ষা আছে। আমি আজ গ্রুপ স্টাডি করব, আজকে বাসায় আসব না। শনিবার দুপুরে পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসে আবার ভাত খাব।
‘ওর মা জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিল, আমার ছেলে যায়। কিন্তু সে ছেলে আর আসলো না। আমি সবার দোয়া চাই এবং আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমি চাই না আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়।’
তিনি বলেন, ‘এটি কারা করেছে সেটি আমরা ধারণা করতে পারছি না। আমার কোনো শত্রু আছে বলে আমি মনে করি না। আমি কারও কোনো ক্ষতি করিনি। আমি সাংবাদিকতা করেছি, কিন্তু এমন কোনো রিপোর্ট করিনি, যাতে কেউ আহত হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘দেশ অনেক ডিজিটাল হয়েছে। কীরকম ডিজিটাল, সেটা আমি দেখতে চাই। ট্র্যাকিং সিস্টেমটা ডেভেলপ করতে হবে। সেটা করতে পারলে তার সাথে কার কমিউনিকেশন ছিল, বিস্তারিত সব বের হয়ে আসবে। আমি কাউকে ইঙ্গিত করতে চাচ্ছি না।’
বুয়েটে মানববন্ধনে সকল শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে তিন শিক্ষার্থী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
এতে বলা হয়, ‘আমাদের বন্ধু ফারদিন নূর পরশ গত ৪ নভেম্বর শুক্রবার আনুমানিক রাত সাড়ে এগারোটার দিকে নিখোঁজ হয়। পরবর্তী দিন শনিবার ফারদিনের সেশনাল কুইজ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও সে অনুপস্থিত থাকে এবং আমরা তার ক্লাসমেটরা ফারদিনের ব্যাপারে তার পরিবারকে অবহিত করি এবং বুয়েট প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে জানানো হয়। ওই দিনই পরিবারের পক্ষ থেকে রামপুরা থানায় জিডি করা হয়।
‘সর্বশেষ গতকাল ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের ভাষ্য থেকে স্পষ্ট যে, এটা একটা হত্যাকাণ্ড। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এই ব্যাপারে প্রশাসন এবং মিডিয়াসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ফারদিন ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত মেধাবী এবং নির্ঝঞ্ঝাট একজন মানুষ ছিল। এরই মধ্যে আমরা কয়েকটি প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যবিশিষ্ট সংবাদ দেখেছি, যা অপ্রত্যাশিত। চলমান তদন্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা সকলকে অনুরোধ করছি, এ ধরণের ভুল তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকতে।’