বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফারদিনের স্বপ্ন ছিল বুয়েটের শিক্ষক হওয়ার

  •    
  • ৮ নভেম্বর, ২০২২ ১৬:১২

ফারদিনের বাবা বলেন, ‘সাংবাদিকতায় জড়িত থাকায় তেমন অর্থবিত্ত নেই আমাদের। তাই ফারদিন প্রাইভেট পড়িয়ে পড়ালেখার খরচ চালাত। আমার সেই ছেলেটাকে হত্যা করা হলো। আমি এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষে বিদেশ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক হওয়ার। সোমবার তার মরদেহ ভাসতে দেখা যায় শীতলক্ষ্যার পানিতে।

ছেলের মরদেহ নিয়ে মর্গের বাইরে কাঁদছিলেন ফারদিনের বাবা। কিছুক্ষণ পরপরই ছুটে আসছিলেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে। বলছিলেন, ‘আমার ছেলেটার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। যারা আমার ছেলেকে মারছে, আল্লাহ... তুমি বিচার কইরো।’

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে বারটার দিকে ফারদিনের মরদেহ বের করা হয় মর্গ থেকে। ছেলের মরদেহ দেখার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বাবা। তাকে ধরে রাখা আত্মীয়-স্বজনরাও তখন কাঁদছিলেন। মরদেহটি লাশ বহনকারী গাড়িতে ওঠানোর পর স্বজনরা গাড়ির সামনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করে হাসপাতাল থেকে বের হন। পরে মরদেহ নিয়ে তারা রওনা হন বুয়েটের পথে। সেখান থেকে মরদেহ নেয়া হবে ফারদিনের ডেমরার বাড়িতে। তারপর ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকায় ফারদিনের পৈত্রিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

ফারদিনের বাবা সাংবাদিক কাজী নুর উদ্দিন রানা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় ফারদিন তৃতীয় ছিল। সে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে নেই। সারাক্ষণ পড়াশোনা আর ডিবেট ক্লাবে নিয়ে চিন্তা করত। এবার স্পেনে তার একটি আর্ন্তাজাতিক অনুষ্ঠানে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার কথা ছিল। ফারদিনের ইচ্ছে ছিল বুয়েটের শিক্ষক হওয়ার। এ জন্য পিএচডি করতে চেয়েছিল বিদেশে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকতায় জড়িত থাকায় তেমন অর্থবিত্ত নেই আমাদের। তাই ফারদিন প্রাইভেট পড়িয়ে পড়ালেখার খরচ চালাত। আমার সেই ছেলেটাকে হত্যা করা হলো। আমি এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে।’

এর আগে ছেলের ময়নাতদন্ত চলার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যখন বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন থেকেই আমরা ভয়ে থাকতাম। আমি আর আমার স্ত্রী ভয়ে ফারদিনকে বুয়েটের হলে থাকতে দেইনি। আমাদের কষ্ট হলেও তাকে বাসা থেকে পড়িয়েছি। ফলাফল কী হলো? আমার ছেলেটারেও তো হত্যা করা হলো।’

ফারদিন নূর পরশ বুয়েটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি এলাকায়। তবে তারা সপরিবারে বর্তমানে রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়া শান্তিবাগ এলাকায় থাকতেন।

ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্য রিভারাইন-এর সম্পাদক ও প্রকাশক। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন ফারদিন। তার মেজ ভাই আবদুল্লাহ নূর ইউল্যাব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই তামিম নূর এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।

ফারদিনের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, পড়াশোনায় মেধাবী ফারদিন এসএসসি ও এইচএসসিতে সব বিষয়ে পেয়েছিলেন জিপিএ-৫। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে তার আগ্রহ ছিল গবেষণায়। তিনি কোচিং ও টিউশনি করতেন। সেখান থেকে যা আয় হতো, তা দিয়ে ছোট ভাইদের খরচ চালাতেন ও নিজে পড়াশোনা করতেন।

বুয়েটে পড়াশোনার পাশাপাশি ফারদিন যুক্ত হন ডিবেটিং ক্লাবে। সেখানে পরিচয় হয় বিভিন্ন বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে। পড়াশোনা আর ডিবেটিং ক্লাব নিয়েই তার ব্যস্ততা ছিল। ফারদিন ছিলেন ডিবেটিং ক্লাবের সম্পাদক।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ফারদিনের মতো মেধাবী ছেলে আমাদের গর্ব ছিল। বুয়েটের ছাত্র-শিক্ষকরা তাকে নিয়ে গর্ব করতেন। আমরা সকলে শোকাহত।’

মেধাবী ফারদিনের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার স্বজনরাও।

চাচা ইউসুফ আলী বলেন, ‘ফারদিন নিখোঁজের পর থেকে আমাদের কারো চোখে ঘুম নেই। থানায় গিয়ে জিডি করার পর গোয়েন্দা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে অনেক জায়গায় খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। শেষে আমাদের ছেলেটার লাশ পেলাম। কেন এত ছাত্র হত্যা? মেধাবী ছাত্রগুলোকে কেন হত্যা করা হচ্ছে? ফারদিন হত্যা বিচার শুধু পরিবার নয় সকল ছাত্র-শিক্ষকের দাবি।’

গত শুক্রবার রামপুরা এলাকা থেকে নিখোঁজ হন ফারদিন। তিন দিন পর সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর সিদ্ধিরগঞ্জ বনানী ঘাট এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। পরে নেয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে। ময়নাতদন্ত শেষে তিন সদস্যের চিকিৎসক দল জানান, ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার শেখ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ফারদিন নূর পরশের মাথায় ও বুকে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মাথার সামনে-পেছেনেসহ পুরোটা জুড়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অন্তত পাঁচ থেকে সাতটি আঘাত আছে। বুকের পুরাটা অংশে আঘাত। এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু বা দুর্ঘটনা নয়। আমাদের ধারণা থেকে আমরা এটুকু পরিষ্কার করে বলতে পারি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ফারদিনের মৃত্যু আঘাতে নাকি অন্য কোনোভাবে হয়েছে, তা ভিসেরা পরীক্ষার ফলাফলের পরপরই বলা যাবে।’

ফারদিন হত্যা রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতিমধ্যে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মরহেদ দাফনের পর হত্যা মামলা করবেন ফারদিনের বাবা। মামলার পরপরই তদন্ত আরও গভীরে যাবে। হত্যার রহস্য উদঘাটন সহ জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর