বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের অনুসারীরা তার ওপর হামলায় জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের পেছনে চন্দ্রিমা উদ্যান রোডে জিয়াউর রহমানের কবর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে অপসারণের দাবিতে ‘মায়ের কান্না’ আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই অভিযোগ করেন।
বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘খুনি জিয়াউর রহমানকে আমি একটি রায়ে ঠান্ডা মাথার খুনি বলে রায় দিয়েছিলাম। যে রায়টি সারা জীবন বেঁচে থাকবে। এ কারণেই জিয়াউর রহমানের যারা অনুসারী তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত এবং এই কারণেই কয়েকদিন আগে আক্রমণ করেছে।
‘এই খুনি জিয়ায় কবর পবিত্র সংসদ ভবনের চত্বরে থাকতে পারবে না। সোমবার একটি অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান নূর ভাই এই দাবিটি তুলেছিলেন। জিয়া যে দলটির প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেই দলের বাংলাদেশের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নাই। মুক্তিযোদ্ধা চেতনার বিষয়ে জামায়াত এবং বিএনপির চেতনার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। জামায়াত যেমন মুক্তিযুদ্ধে চেতনার বিরুদ্ধে তেমনি বিএনপিও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রাজাকারের সন্তান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিষ্ঠিত রাজাকারের ছেলে। তার বাবা চোখা মিয়ার নাম রাজাকারের লিস্টে অনেক আগে থেকেই রয়েছে। অন্য যারা বিএনপির নেতৃত্বে আছে তাদের আছেন, বংশপরিচয় আপনারা খুঁজে দেখবেন; তারা সবাই রাজাকারভুক্ত।’
২ নভেম্বের রাজধানীর ফকিরাপুল বাজার মোড়ে বিচারপতি মানিকের ওপর হমলার ঘটনা ঘটে। তার অভিযোগ, ওই সময়ে বিএনপির একটি মিছিল থেকে তার ওপর হামলা করা হয়।
মানববন্ধনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার বজলুল হক বলেন, ‘খুনি জিয়ার কবর সংসদ ভবন এলাকায় থাকলে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা শান্তি পাবে না।’
অবিলম্বে জিয়ার কবর অপসারণের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা বেঁচে আছি, আমাদের কষ্ট হয় এখান দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে। আমি আশা করব, এই মায়ের কান্না বঙ্গবন্ধুকন্যা শুনতে পাবেন।’
১৯৭৭ সালে ২ অক্টোবর সেনা ও বিমান বাহিনীর ফাঁসি হওয়া সদস্য, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত সদস্য এবং তাদের পরিবারবর্গের সংগঠন হচ্ছে মায়ের কান্না। মনাববন্ধনে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিট অংশ নেয়।
মানববন্ধন থেকে ৭টি দাবি জানায় মায়ের কান্না সংগঠন। এগুলো হলো ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য যারা জিয়ার সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের নির্দোষ ঘোষণা করা; তাদের প্রত্যেককে স্ব-স্ব পদে সর্বোচ্চ র্যাঙ্কে পদোন্নতি দেখিয়ে বর্তমান স্কেলে বেতন-ভাতা, পেনশনসহ সরকারি সব সুযোগসুবিধা দেয়া; যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা এবং বিমান বাহিনী সদস্যদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি হয়েছে তাদেরকে শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা এবং কবরস্থান চিহ্নিত করে কবরস্থানে নামসহ স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা।
এ ছাড়া দাবি করা হয় ওইসব সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের পূর্নবাসিত করার লক্ষ্যে তাদের পোষ্যদের যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ; জিয়ার মরণোত্তর বিচার করা এবং জিয়ার তথাকথিত কবর জাতীয় সংসদ এলাকা থেকে অপসারণ করা।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ বীর বিক্রম, মাহাবুব উদ্দীন আহমদ বীর বিক্রম, ১৯৭৫ সালে ৭ নভেম্বর শহীদ কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে নাহিদ এজাহার খান, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমের কন্যা মাহজাবিন খালেদ, মায়ের কান্নার আহ্বায়ক মো. কামরুজ্জামান মিঞা লেলিন ও সে সময়কার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।