বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অফিস নেই, ঠিকানা ভুল, তবু নিবন্ধনের বাসনা

  •    
  • ৮ নভেম্বর, ২০২২ ১০:৫৩

 গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে গেলে নতুন রাজনৈতিক দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবশ্যই থাকতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশনে যে ৯৩টি নতুন দল এবার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, তাদের বেশ কয়েকটির উল্লেখ করা ঠিকানায় গিয়ে নিউজবাংলার প্রতিবেদক তুলে এনেছেন এক করুণ চিত্র।

ঢাকার পল্টনের তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজা। সেই ভবনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা দিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন চেয়েছে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলন’ (বিজিএমএ) নামের একটি রাজনৈতিক দল। ঠিকানা ধরে সেই ভবনে গিয়ে জানা গেল, এ দলের নামে সেখানে কোনো অফিস নেই।

শুধু ‘বিজিএমএ’-ই নয়, এমন অনেক দল পাওয়া গেছে, যাদের ঠিকানা অনুযায়ী কার্যালয় পাওয়া যায়নি। কেউ অন্যের অফিসের একাংশ ভাড়া নিয়ে দায়সারা অফিস বসিয়েছে। অনেকে নিজের পেশাগত কাজে ব্যবহৃত অফিসকেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বলে ঘোষণা দিয়ে আবেদন করেছেন।

নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা কয়েকটি নতুন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনে নেই দলের কোনো সাইনবোর্ড। দেখে বোঝার উপায় নেই সেগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের অফিস। কোনো স্টিকার বা পোস্টার নেই। কোনো কোনোটি মাত্র এক রুমের অফিস। তাতে ১৫ থেকে ২০ জনের বসার জায়গা হয় না।

সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার কোনো নজির বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি এমন কার্যালয়ও চোখে পড়েছে। কেউ আবার ওষুধপত্র বিক্রির দোকানকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয় দাবি করছেন। কোনো দলের আবার যে ঠিকানা দেয়া হয়েছে, সেখানে কোনো কার্যালয়ই নেই। কোনো দল আবার নিজস্ব কার্যালয়ের ঠিকানাই দেয়নি।

এমনও রাজনৈতিক দল পাওয়া গেছে, যেটির কার্যালয় ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী পর্যন্ত জানেন না এই ভবনে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয় আছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে গেলে নতুন দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবশ্যই থাকতে হবে। শুধু তা-ই না, সারা দেশে অন্তত ২১টি প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি থাকতে হবে।

এবার ৯৩টি দল নির্বাচন কমিশনে তাদের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। এগুলোর মধ্যে ৯টি পাওয়া গেছে যাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগরীর বাইরে বিভিন্ন জেলায়। জেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, জয়পুরহাট, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ। তবে বেশির ভাগ দলই ঢাকা মহানগরের পল্টন, তোপখানা রোড ও মতিঝিল এলাকায়।

নতুন দলগুলোর কাছে গত ২৬ মে আবেদন আহ্বান করে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। পরে অবশ্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী অনুরোধ করে আসার পর নতুন দলের নিবন্ধনের সময় দুই মাস বাড়ায় কমিশন।

গত রোববার আবেদনের সময় শেষ হওয়ার পর ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয় ৮০টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। তবে পরদিন সোমবার সংস্থাটির জনসংযোগ পরিচালক জানান আবেদনকারী নতুন রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮। পরে আবার সংশোধন করে নতুন তালিকা তৈরি করে ইসি। সে হিসাব অনুযায়ী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩টি দলে।

মেহেরবা প্লাজায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলন (বিজিএমএ) নামে কোনো অফিস এ ভবনে কোনোকালে ছিল না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এখানকার এক নিরাপত্তাকর্মী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ নামে কোনো অফিস তাদের ভবনে নেই।’

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলনের (বিজিএমএ) চেয়ারম্যান আশরাফ হাওলাদার দাবি করেন, তারা অল্প কিছুদিন হলো ভবনটি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অফিস ছেড়ে দিয়েছি নিবন্ধনের আবেদন জমা দেয়ার পর। নতুন অফিস নিব।’

অফিসবিহীন একটি দলকে নিবন্ধন দেয়া উচিত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার, তাদের এখতিয়ার।’

পরীবাগ ডিসিসি সুপারমার্কেটে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা দিয়েছে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট (পিডিএ)। সেই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় দুটি কক্ষ রয়েছে, যেখানে কোনো সাইনবোর্ড বা কোনো পরিচিতিমূলক চিহ্ন নেই। একটি কক্ষে একটি টেবিল, দুটি চেয়ার। আরেক কক্ষে দুটি টেবিল ও কিছু চেয়ার রয়েছে। দুজন লোক আলাপচারিতায় ছিলেন। তাদের কাছে রাজনৈতিক দলের নেতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, ‘ওনারা এখানেই বসেন। ফোন দিয়া আইসেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের চেয়ারম্যান মহিনউদ্দীন চৌধুরী বিপ্লব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের কোনো সাইনবোর্ড নেই এটা সত্য।’ কার্যালয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা মূলত আমরাই ব্যবহার করি। আসলে আমাদের কোনো বাইরের ফান্ড নাই। চাঁদাবাজি করি না। তবে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম আছে। নিবন্ধন দেয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি করতে পারছি বলেই আবেদন করছি।'

পরীবাগে ডিসিসি সুপারমার্কেটে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট (পিডিএ) পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ছবি: নিউজবাংলা

‘মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন’ নামে আরেকটি দল শাহবাগ চাঁদ মসজিদ কমপ্লেক্সের যে ঠিকানা দিয়েছে, সেখানে গিয়ে সার্ভোয়ার ডেন্টাল ওষুধ বিক্রির একটি দোকানের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই দোকানের স্বত্বাধিকারী তানভীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই বিব্রতকর। আমার এখানে আগে এ রকম একটা কিছু ছিল শুনেছিলাম। কিন্তু এখনো সেই ঠিকানা ব্যবহার করছে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বিব্রতকর।’

ঠিকানা অনুযায়ী মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হওয়ার কথা থাকলেও গিয়ে পাওয়া যায় ওষুধের দোকান। ছবি: নিউজবাংলা

‘মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন’-এর সভাপতি স্বরূপ হাসান শাহীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনা দিয়া ডেন্টালের দোকান আছে। ডান হাতের কোনা দিয়া অফিস আছে। কোনো সাইনবোর্ড নাই। আপনি শুক্রবার আসেন। শুক্রবার আমরা অফিস করি।’

বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় হলেও এখানে গিয়ে দেখা যায় বাংলাদেশে কর্মসংস্থা্ন দলের ব্যানার। এর চেয়ারম্যানই জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান। ছবি: নিউজবাংলা

একটি রাজনৈতিক দলের অফিস শুধু শুক্রবার খোলা থাকে কেন– এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা অদলীয় রাজনৈতিক সংগঠন। আমাদের অন্য কাজ থাকে।’

এমন দলকে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন দেয়া উচিত কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এগুলো কথা ওভারফোনে বলার দরকার নাই।’

বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভোলোফমেন্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরের সাইনবোর্ড থাকলেও রুমের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় বাংলাদেশে কর্মসংস্থা্ন দলের ব্যানার। এটির চেয়ারম্যান যিনি, তিনিই আবার জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলোপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান। ছবি: নিউজবাংলা

‘বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’র অফিসের ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায় একটি আবাসিক ভবনের ৯ তলার ফ্ল্যাটের বাইরে একটি ছোট সাইনবোর্ড ঝুলছে। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, অন্য নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানার, যাতে লেখা: ‘বাংলাদেশ কর্মসংস্থান আন্দোলন’।

এ বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তারা কর্মসংস্থানের নামেই গত নুরুল হুদা কমিশনে আবেদন করেছিলেন। সেটার মামলা চলমান থাকায় এবার আরেকটি দলের নামে নিবন্ধন আবেদন করেছি, যে দলটি এ বছরই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।’

দেলোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দলের কোনো সাইনবোর্ড নাই, এটা সত্য। তবে সারা দেশে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম আছে। সেখানে অফিস আছে। তবে কোনো সাইনবোর্ড নাই।’

নির্বাচন কমিশন তদন্ত শুরুর আগে তারা সাইনবোর্ড লাগিয়ে ফেলবেন দাবি করে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে সাইনবোর্ড টানাইলে লোকজন বাধা দিতে পারে। সরকারি দলসহ অন্যান্য দলের অতি উৎসাহী কিছু লোকজন, যারা ঝামেলা করবে, তাদের ভয়ে।’

এখনকার বাস্তবতায় গ্রামগঞ্জে নতুন একটা দলের আলোচনা করা মুশকিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ জনমত পার্টির ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায় একটি আইনজীবীর অফিস। যেখানে পার্টির কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। ছবি: নিউজবাংলা

‘বাংলাদেশ জনমত পার্টি’র তোপখানা রোড সেগুনবাগিচার ঠিকানা ধরে একটি ভবনের সংকীর্ণ সিঁড়ি বেয়ে উঠে দেখা যায়, সেটি একটি ফ্ল্যাট। তিন-চারটি টেবিল আর রুমজুড়ে আইনবিষয়ক বই। দেখে বোঝা যায়, এটা উকিলের চেম্বার।

উপস্থিত এক ব্যক্তির কাছে জনমত পার্টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটাই পার্টির অফিস।’

তার পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জনমত পার্টির কেউ না। শুনছি তারা নাকি এইটা অফিস বানাবে। আমার বস যে মালিক আজিজ উল্লাহ, উনি বলতে পারবেন। পুরোপুরি ডিটেইলস জানি না। এই তিনটা টেবিলে পার্টির কার্যক্রম চালাবে।’

হাতিরপুলের ইস্টার্ন প্লাজা মার্কেটে ডেমোক্রেটিক পার্টির অফিস। গিয়ে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। বাইরে গিয়ে ভিন্ন দুটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড চোখে পড়ে। ছবি: নিউজবাংলা

রাজধানীর ইস্টার্ন প্লাজা মার্কেটের পাশের ভবনেই ‘ডেমোক্রেটিক পার্টি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় বলে নির্বাচন কমিশনে ঠিকানা দেয়া হয়েছে। এ ঠিকানায় গিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির অফিস কয় তলায় জানতে চাইলে নিরাপত্তা প্রহরী আক্তার-উজ-জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডেমোক্রেটিক পার্টি আবার কবে খুলল? এই নামে তো কোনো অফিস নাই।’

পরে দলটির আহ্বায়ক এস এম আশিক বিল্লাহর সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানান, সেখানে তার একটা অফিস আছে। তার নির্দেশনা অনুযায়ী গিয়ে দেখা যায়, একটি কাচঘেরা অফিসকক্ষের বাইরে ‘ঢাকা কনসালট্যান্সি লিমিটেড’ ও ‘এবি বাজার ডট কম.বিডি’ নামে একটি পোস্টার লাগানো। কক্ষটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে পার্টির আহ্বায়ক এস এম আশিক বিল্লাহর সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা হলে ফোনের ওপাশ থেকে বলা হয়, তিনি ঘুমাচ্ছেন। পরে ফোন দিতে হবে। পরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ‘অস্থায়ী’ কার্যালয়। এখানে গিয়ে অফিস তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। ছবি: নিউজবাংলা

তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজায় অস্থায়ী কার্যালয় দেখিয়ে নিবন্ধন পেতে চাওয়া রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। সেখানে গিয়ে দলটির একটি অফিসের দেখা মিললেও সেটি ছিল বন্ধ।

‘বৈরাবরী পার্টি’র জন্য নিবন্ধনের আবেদন করেছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার পীর সৈয়দ আলমগীর হোসেন। নিউজবাংলার টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তরিকার পাশাপাশি জনসেবাই আমাদের দলের আদর্শ। দলের আর্থিক সচ্ছলতা নেই। ব্যাংক হিসাব আছে, কিন্তু কোনো টাকা নেই। আমাদের মূল সম্পদ হচ্ছে বৈরাবরী পীরের ভক্তরা। অর্থের অভাবে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিতে পারি নাই। তাই মির্জাপুরের কুড়িপাড়া নিজ বসতবাড়ির ঠিকানা দিয়ে দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি।’

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়। এগুলো হলো: ১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনো জাতীয় নির্বাচনে যদি আগ্রহী দলটির অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন; ২. যেকোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পান। ৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ [২১টি] প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানার প্রতিটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনসংবলিত দলিল থাকে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, নতুন দলের নিবন্ধন পেতে তৃতীয় শর্তটি পূর্ণ করতেই হবে। ১ ও ২ নম্বর শর্ত নতুন দলের পূরণের সুযোগ নেই।

নিবন্ধিত দলগুলোকেই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর কে এম নুরুল হুদা কমিশন নিবন্ধন শর্তের প্রথম দুটি বাদ দেওয়ার জন্যে খসড়াও প্রস্তুত করে। কিন্তু তা আর চূড়ান্ত রূপ পায়নি।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসে। নিবন্ধন পাওয়ার আশায় সেবার ১১৭টি দল আবেদন করেছিল। যাচাই-বাছাইয়ের পর নিবন্ধন পায় ৩৯টি দল।

শামসুল হুদা, কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ ও কে এম নুরুল হুদা তিন কমিশন মোট ৪৪টি দলকে নিবন্ধন দিয়েছিল। তাদের মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ও আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিলও করা হয়। ফলে বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৩৯টি।

২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করা নিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন। ওই সময় ৭৬টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। তবে কোনো দলকে ইসি নিবন্ধন দেয়নি। পরে আদালতের আদেশে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি ববি হাজ্জাজের জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এবং একই বছরের ৯ মে বাংলাদেশ কংগ্রেসকে নিবন্ধন দেয় ইসি।

এ পর্যন্ত যে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে সেগুলো হলো: জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ফ্রিডম পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিডিপি) ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।

এ বিভাগের আরো খবর