বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার শেখ ফরহাদ হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ফারদিনের মাথায় ও বুকে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমরা ধারণা করছি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা তার ভিসেরা টেস্টের পর বিস্তারিত আরও জানতে পারব।’
রাজধানীর রামপুরা থেকে নিখোঁজের তিন দিন পর সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বুয়েটের ছাত্র ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ সদরের সিদ্ধিরগঞ্জ বনানী ঘাট এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
ফারদিন নূর পরশ রাজধানীর ডেমরা থানার শান্তিবাগ এলাকার সাংবাদিক কাজী নুর উদ্দিন রানার ছেলে। তিনি বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানাসহ স্বজনদের আহাজারি। ছবি: নিউজবাংলা
নৌ পুলিশের নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে নৌ পুলিশের টিম গিয়ে বনানী ঘাট এলাকায় নদীতে ভাসমান অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানা বলেন, ‘শুক্রবার দুপুরে বুয়েটে যাওয়ার জন্য ফারদিন বাসা থেকে বের হয়। রাতে বুয়েটের হলে থেকে পরদিন পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার কথা। শুক্রবার রাত ১১টার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর থেকে নিখোঁজ সে।
‘পরে রামপুরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। আজ (সোমবার) সন্ধ্যার দিকে খবর পাই যে পরশের মরদেহ পাওয়া গেছে। তারপরই থানায় আসি। সে নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমার ধারণা, তাকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে।’
ফারদিনের চাচা আবু ইউসুফ জানান, ঘটনার দিন বিকেলে বাসা থেকে বের হওয়ার পর ধানমন্ডিতে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এক মেয়ে বন্ধুর সঙ্গে ঘোরাফেরা করে ফারদিন। তারপর সেখান থেকে সে নীলক্ষেতে যায়। পরে রামপুরা বনশ্রীতে ওই বন্ধুকে তার বাড়িতে দিয়ে আসার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তার সহপাঠী আরিফুজ্জামান শাফি বলেন, ‘ফারদিনের সঙ্গে ডিবেট ক্লাব থেকে পরিচয় হয় ওই মেয়েটির। তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব ছিল। ঘটনার দিন বিকেলে তারা এক সঙ্গে ছিল৷ ফারদিনের সঙ্গে সবশেষ আমাদের বন্ধুদের কথা হয় সন্ধ্যার আগে৷ রাতে জানতে পারি সে নিখোঁজ৷’
নৌ পুলিশের নারায়ণগঞ্জের সুপার মিনা মাহমুদা জানান, মরদেহ সুরতাহালের সময় ফারদিনের পকেট থেকে তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও ব্লুটুথ উদ্ধার করা হয়েছে। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এটি আসলে হত্যা কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর।
তিনি জানান, এ ঘটনায় ফারদিনের বাবা হত্যা মামলা করবেন৷ মামলার পর তদন্তে যাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।