রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৭ ডিসেম্বর। নির্বাচনকে ঘিরে নগরজুড়ে ভোটের আমেজ। পাড়ায়-মহল্লায় সভা-সমাবেশ চলছে প্রার্থীদের। নির্বাচিত হলে কে কেমন উন্নয়ন করবেন, তার ফিরিস্তি দিচ্ছেন প্রার্থীরা।
স্থানীয় এই নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে বলে জাতীয় পার্টি আগেভাগেই তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আর অন্যসব দলের নজর এখন কেন্দ্রের দিকে। দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিং চলছে বহুদিন ধরে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের এটি তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন। এর আগে দুটি নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে। বিএনপি খুব একটা সফলতা দেখাতে পারেনি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে না এলে এবারও মূল লড়াইটা হবে আওয়ামী লীগ ও তার রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টির সঙ্গে।
২০১২ সালের ২৮ জুন রংপুর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করে সরকার। একই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন প্রয়াত সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট পেয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। আর ২০১৭ সালের নির্বাচনে মেয়র ঝন্টুকে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। নির্বাচনের কয়েক মাসের মধ্যে মারা যান ঝন্টু।
স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, প্রথম মেয়র ঝন্টু বেঁচে থাকলে এবারের নির্বাচনে লড়াই হতো শেয়ানে শেয়ানে। সেই সুযোগ এবার থাকছে না। আওয়ামী লীগ খুঁজছে নতুন মুখ।
এদিকে ৭ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রংপুর সিটি নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করেন ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। তফসিল অনুযায়ী রংপুর সিটিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর, বাছাই ১ ডিসেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ করা হবে ২৭ ডিসেম্বর।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দুই সপ্তাহ আগেই ২৫ অক্টোবর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের তাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নাম ঘোষণা করেছেন।
তফসিল ঘোষণার আগের রাতে অর্থাৎ ৬ নভেম্বর মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা নগরীতে বিশাল মোটরসাইকেল শোডাউন করেন। তিনি নিজেই তাতে নেতৃত্ব দেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী কে হবেন, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলের হাইকমান্ড ঘোষণা না দিলেও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন অন্তত ডজনখানে প্রার্থী। চূড়ান্ত প্রার্থী পেতে নগরবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান এমন নেতাদের মধ্যে পোস্টার ছেপে নগরবাসীর দোয়া চেয়েছেন রংপুর নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিয়ার রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন, অ্যাডভোকেট অনারুল ইসলাম, লতিফুর রহমান মিলন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আতাউর জামান বাবু, রংপুর মহানগর যুবলীগের সভাপতি সিরাজুম মুনির বাসার ও শ্রমিক লীগের নেতা এম এ মজিদ।
এ ছাড়া নগরীতে পোস্টার-ফেস্টুন না সাঁটালেও লোকমুখে আছে আরও তিনজনের নাম, যারা দলের হাইকমান্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন। এরা হলেন চৌধুরী খালেকুজ্জামান, রাশেক রহমান ও রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু।
প্রার্থী হতে চান এমন নেতাদের অনেকে সভা-সমাবেশ করছেন নিয়মিত। বর্তমান মেয়র মোস্তফার ব্যর্থতাগুলো তুলে ধরছেন ভোটারদের কাছে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘আমি রংপুর সিটির দ্বিতীয় মেয়র। আমি এই নগরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি, নগরীর এমন কোনো সড়ক নেই, যেখানে সংস্কার করা হয়নি, ড্রেনেজ করা হয়নি। সড়কবাতি দেয়া হয়েছে নতুন এলাকাগুলোতে।’
তিনি বলেন, ‘আমি যে উন্নয়ন করেছি, তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমি মনে করি, আমার উন্নয়নের কারণে মানুষ আমাকেই ভোট দিবে।’
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিয়ার রহমান সাফি বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে এই পর্যন্ত উঠে এসেছি। আমি রংপুরের জনগণের সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসতেছি। মানুষের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও পারিবারিক কর্মকাণ্ড এবং সবকিছুর সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছি। স্বচ্ছ রাজনীতি করি। আমি বিশ্বাস করি, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। মনোনয়ন দিলে আমি দলের সম্মান রক্ষা করতে পারব।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাখাওয়াত হোসেন সফিক বলেন, ‘শুধু সিটি করপোরেশন নির্বাচন নয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আমার দল চূড়ান্ত পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। আমরা প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় রংপুর সিটি নির্বাচন বিচ্ছিন্ন কোনো অংশ নয়।’
তিনি বলেন, ‘বিগত দিনের চেয়ে রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ অনেক সুসংগঠিত। আমরা খুব শিগগিরই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।’