মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় এখন রাস উৎসবের আমেজ। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই মহারাসলীলা। উৎসবটি মণিপুরিদের হলেও দিনে দিনে তা হয়ে ওঠেছে সার্বজনীন।
এ দিনটিতে তুমুল হইচই, আনন্দ-উৎসাহ, ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল, শঙ্খ ধ্বনি আর নাচ-গানের মধ্য দিয়ে রাধার সঙ্গে হিন্দু ধর্মের অবতার শ্রীকৃষ্ণের প্রেমলীলাকে স্মরণ করা হয়।
মণিপুরী সম্প্রদায়ের মূল বাসস্থান মণিপুরের বাইরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাধবপুরে সর্বপ্রথম মণিপুরি রাসলীলার প্রচলন ঘটে ১২৪৯ বঙ্গাব্দে (১৮৪২ সাল)। তবে এরও বহু আগে থেকেই এই উৎসব প্রচলিত।
বর্তমানে বৃহত্তর সিলেটের নৃগোষ্ঠীগুলোর অন্যতম মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব এই রাসলীলা।
এই উৎসব পালন করতে মহারাসলীলানুকরণ জোড়ামণ্ডপের মাঠে কলাগাছে সুসজ্জিত তিনটি মঞ্চে তিনটি গোষ্ঠলীলা অনুষ্ঠিত হয়। বালকেরা রাখাল সেজে নৃত্য ভঙিমায় কৃষ্ণের বাল্যজীবনের বহু ঘটনা ফুটিয়ে তোলে।
এই নকশাখচিত মণ্ডপে যুবতী গোপীনীদের নাচে প্রাণময় হয়ে ওঠে রাসের রাত। ভক্ত-পুণ্যার্থীরা গোষ্ঠলীলা ও রাসলীলা দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে বাতাসা, টাকা-পয়সা ‘পুষ্পবৃষ্টি’ বা হরিলুট করতে থাকেন নৃত্যরত রাখাল ও রাধা-কৃষ্ণ ও গোপিনীদের ওপর।
মহারাসলীলা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাসের দিন দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড়ামণ্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে।
আয়োজকেরা জানান, মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব- রাসলীলা। তবে এ উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।
মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা হাজারও নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যটক, বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী লোকজনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকেন।
এবার মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে ১৮০তম রাস উৎসব হবে। অন্যদিকে, আদমপুরে হবে ৪০তম রাস উৎসব।
রাস উৎসবকে সফল করতে প্রায় মাসখানেক ধরে ছয়টি বাড়িতে রাসনৃত্য এবং রাখালনৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলেছে। গোপীবেশী শিল্পীদের বয়স ১৬ থেকে ২২ বছর। শুধু রাধার বয়স ৫ থেকে ৬ বছর। নৃত্যের প্রতিটি দলে অন্তত ১২ জন অংশ নেন। একইভাবে রাখাল নৃত্যের ক্ষেত্রেও প্রতিটি দলে ১৪/১৫ বছর বয়সী ২০ থেকে ২২ জন কিশোর অংশ নেয়।
মাধবপুর মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবারের রাসোৎসব আমরা বড় পরিসরে আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এ উৎসবে এবার প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।’