৭ নভেম্বর বিপ্লব বা ক্যু-এর নাম করে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে তাদের বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
সোমবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবসের’ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘৭ নভেম্বর বিপ্লব বা ক্যু-এর নাম করে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। অনেক সন্তানের বাবাকে, কারও স্বামীকে কারও, দাদাকে হত্যা করা হয়েছে।
‘কারণে-অকারণে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছেন তাদের বিচারও এই বাংলার মাটিতে হবে। এই বিষয়ে একটা রুলও জারি করা হয়ে গেছে। তদন্ত কমিটিও হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীসহ আরও অনেকের বিচার করেছেন। ৭ নভেম্বর হত্যার শিকার হওয়ার ব্যক্তিদের স্বজনেরা জীবিত থাকতে তাদের বাবা-ভাই স্বামী হত্যার বিচার দেখে যাবেন ইনশা আল্লাহ।’
‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ উপলক্ষে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর হত্যার শিকার শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরূপ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া; এই ষড়যন্ত্র, এই রক্তের হোলি খেলা যারা করেছেন তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।'
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা ধ্বংসস্তূপ ছিল। ব্রিজ ছিল না, টাকা ছিল না। এমনকি আজকে যে আমরা কাপড় পরছি সেটাও ছিল না। কাপড়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধের পর লাইন ধরে দাঁড়াতে হতো।
‘সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করালেন। সাড়ে তিন বছরে তিনি যে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছেলেন সর্বক্ষেত্রে; এখনও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেগুলোকে কার্যকর মনে করছেন। ওই দিকনির্দেশনাগুলোর জন্য আজকে তাকে অনেক কিছু চিন্তা করতে হচ্ছে না।’
মন্ত্রী বলেন,‘বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেন নাই; সেগুলোই আজকে তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একে একে বাস্তবায়ন করছেন বলেই বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে গিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করা হয়েছে। তাদের আশঙ্কা ছিল, যার মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত হবে সেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তাদের আশঙ্কা ঠিকই ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা আজকে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর জেল হত্যা এবং ৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা একই সুতোয় গাঁথা। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা উত্থাপনের মাধ্যমেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। যার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে একদল এখনো সচেষ্ট। এরা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চায়।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যে দল বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছে; গণতন্ত্রের নামে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ চালায়, ধর্মের নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে সেই দলের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে অনেকে মুক্তিযোদ্ধা বলেন৷ তিনি বরং আমাদের ভেতর অনুপ্রবেশকারী ছিলেন৷ জিয়াউর রহমানকে সীমান্তে কোনো সম্মুখযুদ্ধে পাওয়া যায়নি৷ তার অনুপ্রবেশ একটি দীর্ঘমেয়াদি সুদূরপ্রসারি ষড়যন্ত্রের ফল।’
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমের মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমের মেয়ে মাহজাবিন খালেদ।
এ ছাড়াও, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সশস্ত্র বাহিনীতে হত্যাকাণ্ড নিয়ে গবেষক আনোয়ার কবির।