বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আইএমএফ-বিএসইসি বৈঠকের দিনে পতন পুঁজিবাজারে

  •    
  • ৭ নভেম্বর, ২০২২ ১৫:২৫

আজ হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ২৩৫ কোটি ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকার শেয়ার, বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকা কম। রোববার লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৩১ লাখ ১২ হাজার টাকার।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের বৈঠকের দিনে পতন দেখা গেছে পুঁজিবাজারে।

ফ্লোর প্রাইস থেকে আরও কয়েকটি শেয়ার বেরিয়ে এলেও দরপতনের সঙ্গে লেনদেন কমেছে সামান্য।

চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার সূচক বেড়ে লেনদেন হলেও আইএমএফ বৈঠকে কী হয়, তা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। ওই দিন লেনদেন কমে নেমে আসে ১ হাজার ২০০ কোটির ঘরে।

সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সোমবার হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ২৩৫ কোটি ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকার শেয়ার, বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকা কম। রোববার লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৩১ লাখ ১২ হাজার টাকার।

আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি আগেই চূড়ান্ত ছিল, তাই বৈঠকে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল বিনিয়োগকারীদের। বৈঠককে ঘিরে উৎকণ্ঠার বিষয় দেখা গেছে দিনভর লেনদেনেও।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইতে সোমবার সূচকের উত্থান দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। ২৮ মিনিট পর্যন্ত সূচক বেড়েই লেনদেন হয়, তবে এরপর শুরু হওয়া ব্যাপক দরপতন চলতে থাকে দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত।

বেলা ১১টা ২৮ মিনিটে সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩১ পয়েন্ট কমে দিনের সর্বনিম্ন ৬ হাজার ৩৮৪ পয়েন্টে অবস্থান করে। এরপর থেকে শেয়ারগুলো কিছুটা দর ফিরে পেতে থাকে। লেনদেন শেষ হওয়ার আগেই আইএমএফ-বিএসইসি বৈঠক শেষে কোনো নেতিবাচক খবর না আসায় আরও কিছু শেয়ারের দাম বেড়ে লেনদেন শেষ হয়।

শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ২২ পয়েন্ট কমে সূচক দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৯৩ পয়েন্টে।

দিনভর হাতবদল হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে যতগুলোর দর বেড়েছে, কমেছে তার দ্বিগুণ। ৪৮টি শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৯৮টির। অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হওয়ার সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কমে এসেছে।

২০৮টি শেয়ারের লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে, যার দুই-একটি বাদে সবই গড়াগড়ি খাচ্ছে ফ্লোর প্রাইসে। গতকাল এই সংখ্যাটা ছিল ২১৩।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিপর্যয়ের মধ্যে পুঁজিবাজারে পতন ঠেকাতে ৩১ জুলাই প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় বিএসইসি। এরপর পুঁজিবাজারে উত্থান দেখা দিলেও এর প্রভাব সমভাবে পড়েনি।

৩০টির মতো শেয়ারের উত্থানের মধ্য দিয়ে সূচক বাড়তে থাকে। এর মধ্যে বিপুলসংখ্যক শেয়ারের ফ্লোর প্রাইসে লেনদেনের সঙ্গে ক্রেতা সংকটে ভুগতে থাকে পুঁজিবাজার।

এরই মধ্যে গত ১১ অক্টোবর ব্রোকারেজ হাউসে চেক জমা দিয়ে নগদায়নের আগে শেয়ার কেনা যাবে না মর্মে নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। এতে করে ফের অস্থিরতা দেখা দেয় পুঁজিবাজারে। সেটি আমলে নিয়ে ৩০ অক্টোবর এক বৈঠকে নির্দেশনা পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

সেই সিদ্ধান্তেও দরপতন থামেনি পুঁজিবাজারে। নতুন ইস্যু হিসেবে সামনে আসে আইএমএফ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার আশায় সংস্থাটির সঙ্গে সরকারের বৈঠক ইস্যু।

আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে কোনো ধরনের বাইরের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে। বর্তমানে দরপতন ঠেকাতে ‘ফ্লোর প্রাইস’ নামে সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দিয়ে যে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, সেটি নিয়ে আইএমএফ কথা তুলতে পারে, এমন শঙ্কার কথা বলাবলি হতে থাকে।

শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস আলোচ্যসূচিতে নেই-নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে এ বিষয়টি জানানোর পর ১ নভেম্বর পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান ঘটে, তবে বিপুলসংখ্যক কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকে।

পরের দুই কর্মদিবসে ফ্লোর ভেঙে শেয়ারগুলো বের হয়ে আসার প্রবণতা দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার ২২ কর্মদিবস পরে লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করে, তবে রবি ও সোমবার ফের বিনিয়োগকারীদের আলোচনায় ছিল আইএমএফ ও বিএসইসির বৈঠকের বিষয়টি, যার প্রভাব দেখা যায় লেনদেনে।

এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে পুঁজিবাজারের পতনের পেছনে দুটি কারণ কাজ করেছে। প্রথমত, আইএমএফ ও বিএসইসির মধ্যকার বৈঠকে কী হয়, তা নিয়ে একটা উৎকণ্ঠা কাজ করেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। অনেকেই সাইডলাইনে ছিলেন, বাজার পর্যবেক্ষণের উদ্দেশে। দ্বিতীয়ত, গত কয়েকদিন উত্থানের পরে প্রফিট টেকিং করেছেন অনেকেই।’

সূচকে প্রভাব যাদের

বেশি ৫ দশমিক ০২ পয়েন্ট সূচক কমেছে লাফার্জা হোলসিমের দরপতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট কমেছে বেক্সিমকো ফার্মার কারণে। শেয়ার প্রতি দাম কমেছে ১ দশমিক ৯২ শতাংশ।

ওরিয়ন ফার্মার দর ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৪১ পয়েন্ট।

এ ছাড়া ডোরিন পাওয়ার, বিকন ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইউনিক হোটেল, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন ও কোহিনূর কেমিক্যালের দরপতনে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ২৮ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট।

বিপরীতে ৩ দশমিক ১৬ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে নাভানা ফার্মা। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

জেনেক্স ইনফোসিসের দর ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট।

বসুন্ধরা পেপার সূচকে যোগ করেছে ২ দশমিক ০২ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে লুবরেফ বাংলাদেশ, জেএমআই সিরিঞ্জেস, আইটি কনসালট্যান্টস, মীর আকতার, এমজেএল বাংলাদেশ, ইস্টার্ন ক্যাবলস ও প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট।

শীর্ষ ৫ খাত যেমন

তৃতীয় স্থান থেকে আবারও শীর্ষ উঠে এসেছে প্রযুক্তি খাত। লেনদেন হয়েছে ২৪৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা আগের দিনে ছিল ১৭৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ৮টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে। ২টি কোম্পানির দরপতন হয়েছে।

১৭৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা লেনদেন করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। আগের দিনে লেনদেন ছিল ২১১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ২টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৭টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে, ১২টির দরপতনে।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিবিধ খাত। হাতবদল হয়েছে ১০১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, আগের দিনে এটি ছিল ২০৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ৩টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে আগের দরে ৭টির ও দরপতনে লেনদেন হয়েছে ৩টির।

চতুর্থ সর্বোচ্চ ৯৫ কোটি ১০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে প্রকৌশল খাতে। ৬টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৩টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে। ১২টির লেনদেন হয় দর কমে।

পাঁচে থাকা জ্বালানি খাতে হাতবদল হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। ৬টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১২টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে। ৫টির লেনদেন হয়েছে দরপতনে।

দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০

সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ দর বেড়ে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০৫ টাকা ৭০ পয়সায়, যা আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ৯৬ টাকা ১০ পয়সায়।

তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল নাভানা ফার্মা। ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ১২০ টাকা ২০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ১০৯ টাকা ৩০ পয়সা।

আইটি কনসালট্যান্টসের দর ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়ে ৪৩ টাকা ১০ পয়সায় শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে। আগের দিনের সমাপনী দর ছিল ৩৯ টাকা ২০ পয়সা।

এ ছাড়া দরবৃদ্ধির দশে ছিল- অগ্নি সিস্টেমস, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লুবরেফ বাংলাদেশ, লাভেলো আইসক্রিম, জেএমআই সিরিঞ্জেস ও ইস্টার্ন ক্যাবলস।

দরপতনের শীর্ষ ১০

সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ কমে ডোরিন পাওয়ারের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬১ টাকায়, যা আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ৬৮ টাকা ৩০ পয়সায়।

ইন্দোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ কমে ১৮ টাকা ৯০ পয়সায় প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। পূর্বের দর ছিল ২০ টাকা ৫০ পয়সা।

৬ দশমিক ১১ শতাংশ দর কমে ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং স্টেশনের শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে ৪৬ টাকা ১০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ৪৯ টাকা ১০ পয়সা।

এ ছাড়াও পতনের তালিকায় শীর্ষ দশের মধ্যে ছিল দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট।

এ বিভাগের আরো খবর