বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গভীর রাতে বসে যে হাট

  •    
  • ৭ নভেম্বর, ২০২২ ১১:২৩

গভীর রাতে কেন এই বাজার? কৃষক আবদুল মোত্তালিব বলেন, ‘রাইতে নিরিবিলি একটা পরিবেশ থাকে। কোনো পেরেশানি নাই। তরিতরকারি লইয়া আই। যে বেডার পছন্দ হে বেডায় কিনে। টেকা লইয়া বাইত যাই।’

রাত প্রায় ২টা। ঘুটঘুটে অন্ধকার আর কুয়াশা ভেদ করে শাক-সবজি নিয়ে জড়ো হচ্ছেন কয়েকজন। কিছুক্ষণ পর রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।

গভীর রাতে এই হাটের দেখা মিলেছে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কোটবাড়ী পাহাড়ের পাহাড়তলী এলাকায়। স্থানীয়দের মতে, প্রায় ২০ বছর ধরে এই হাট বসছে। সস্তায় সব পাওয়া যায় বলে বিভিন্ন উপজেলার পাইকাররা গভীর রাতে এই হাটে আসেন।

পাহাড়তলী বাজারের পাশেই উজিরপুর, বাখরাবাদ, হাতিগড়া, রাইচর, দিঘলগাঁও, কালিরবাজার, আনন্দপুর ও অলিরবাজার গ্রাম। এসব গ্রামের গৃহস্থরা নিজেদের ক্ষেতের সবজি এই হাটে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। আর সস্তায় পাওয়া যায় বলে বিভিন্ন উপজেলা বিশেষ করে শহর থেকে পাইকাররা এখানে আসেন সবজি নিতে।

আনন্দপুর এলাকার রাকিবুল হাসান নিজের ক্ষেতের লাউ নিয়ে এসেছেন হাটে। আকারভেদে প্রতিটি তিনি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করেছেন।

রাকিবুল জানান, এ বাজারে সব কিছু পাইকারিতে বিক্রি হয়।

বাখরাবাদ গ্রাম থেকে শিং নাথ বেগুন এনেছেন ওয়াহিদ মিয়া। পাইকারদের কাছে প্রতি কেজি বেগুন তিনি বিক্রি করেছেন ২০ টাকায়।

ওয়াহিদ বলেন, ‘এবার জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি ভালো লাভ পাব।’

কুমিল্লা নগরীর রানীরবাজারের পাইকার আবদুল কুদ্দুস এসেছেন পাহাড়তলী বাজারে। ২০০ পিস লাউ কিনেছেন তিনি। নিয়েছেন বরবটি, শশি, ঝিঙা, লালশাক, পুঁইশাকও।

কুদ্দুস জানান, এই বাজারে সাশ্রয়ীমূল্যে শাক-সবজি পাওয়া যায়। গাড়িভাড়াসহ প্রতিটি লাউয়ের জন্য গড় খরচ হয় ৩৫ টাকা। বাজারে নিয়ে প্রতিটি লাউ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।

১০ বছর ধরে এই বাজার থেকেই সবজি কিনে শহরে নিয়ে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।

গভীর রাতে কেন এই বাজার? কৃষক আবদুল মোত্তালিব বলেন, ‘রাইতে নিরিবিলি একটা পরিবেশ থাকে। কোনো পেরেশানি নাই। তরিতরকারি লইয়া আই। যে বেডার পছন্দ হে বেডায় কিনে। টেকা লইয়া বাইত যাই।’

আরেক গৃহস্থ সুরুজ মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন তো আর সবাই আইয়ে (আসে) না। যার যে দিন ক্ষেতে তরিতরকারি বড় অয় হেদিন তারা আইয়ে। আমডা (আমরা) বিহালে (বিকেলে) তরিতরকারি ক্ষেতের থাইক্কা তুইল্লা রাহি। রাইত ৮টা বা ৯টার সময় ঘুমাইয়া লাই। ১টার দিকে উইঠ্ঠা মাথাত কইরা তরকারি লইয়া বিড়ি টানতে টানতে বাইর অই।’

এই হাটের কোনো কমিটি নেই। কাউকে কোনো খাজনা দিতে হয় না বিক্রেতাদের।

হাটের পাশে একটি মুদি দোকান আছে। এর মালিক রজ্জব আলী। তার দাবি, পাহাড়তলীর বাজারের শুরুটা তার হাত ধরেই।

রজ্জব বলেন, ‘কুড়ি বছর আগে আমিসহ আরও কয়েকজন এখানে গভীর রাতে শাক-সবজি বিক্রির জন্য নিয়ে আসতাম। আমাদের দেখাদেখি অন্যরা আসতেন। তখন পাইকাররা আসতেন না।

‘এলাকার লোকজন আমাদের থেকে শাক-সবজি কিনতেন। আস্তে আস্তে বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাইকাররা আসা শুরু করেন। ওই সময় আমার নামে মানে রজ্জব আলীর বাজার নামেই এটা পরিচিত ছিল। এখন পাহাড়তলী বাজার নামে সবাই চেনে।’

এই বাজারে ছাউনি নাই। বৃষ্টির দিনে এ কারণে বেশ ভোগান্তি হয় বলে জানান গৃহস্থরা।

কালিরবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সমস্যাটা শুনেছি। আমি চেষ্টা করব একটি ছাউনির ব্যবস্থা করতে। যাতে বৃষ্টির রাতে বাজারে এসে কোনো গৃহস্থকে সমস্যায় পড়তে না হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর