সিলেট নগরীতে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল হত্যার জেরে বিক্ষোভ মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে।
নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এর পরপরই বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা জানান, রাতের মধ্যে ছবি ভাঙচুরকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে ১৯ নভেম্বর হতে যাওয়া বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ প্রতিহত করা হবে।
নগরের বড়বাজার এলাকায় রোববার রাত ৯টার দিকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল। ঘটনার পরপরই জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় এক ছাত্রদল নেতাকে। পুলিশ জানায়, ব্যাবসায়িক বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।
কামাল হত্যার প্রতিবাদে রাতে এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলে অংশ নেন অনেকে।
এরপর রিকাবীবাজার এলাকায় মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির বিলবোর্ড ভাঙচুর করা হয়। নগরের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত তোরণ ও ব্যানার-ফেস্টুনও ভাঙচুর করা হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা উপলক্ষে রিকাবীবাজারের কবি নজরুল অডিটরিয়াম ও নগরের বিভিন্ন এলাকায় এসব বিলবোর্ড ও ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়েছিল।
বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল। ছবি: সংগৃহীত
এই ভাঙচুরের খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রিকাবীবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ।
মিছিল শেষে সমাবেশে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘বিএনপির সন্ত্রাসীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। আজ (রোববার) রাতের মধ্যে এই সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার না হলে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ প্রতিহত করা হবে।’
সমাবেশে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিনা উসকানিতে মিছিল থেকে কবি নজরুল অডিটরিয়ামে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভার ফটকে ভাঙচুর চালায়।’
যা ঘটেছিল
নগরের আম্বরখানা বড়বাজার এলাকায় রোববার রাত ৯টার দিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় কামালকে।
আ ফ ম কামাল ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক। তার বাড়ি নগরের সুবিদবাজার এলাকায়।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘নিহত কামালের ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা ছিল। ব্যবসা নিয়ে নগরীর কয়েকজনের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরে গত ১৫ অক্টোবর নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার আল মারজান শপিং সেন্টারের সামনে দুই পক্ষের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
‘হাতাহাতির পরদিন কামালসহ কয়েকজনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন বিএনপি নেতা আজিজুর রহমান সম্রাট। নগরের বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা এই সম্রাট। আজকের হত্যাকাণ্ড ওই এলাকায়ই ঘটেছে। আমরা ধারণা করছি, ব্যবসাসংক্রান্ত পূর্ববিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে।’
বিএনপি নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে নেতা-কর্মীরা ওসমানী মেডিক্যালের সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘হত্যাকারী যে-ই হোক... আজ রাতের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার না করা হলে কাল (সোমবার) সকালে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে রাজনৈতিকভাবে কাউকে যেন হয়রানি করা না হয় এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের যেন দমন-পীড়ন করা না হয়।’
সিলেট বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল জাকির বলেন, ‘রোববার রাতে বড়বাজার এলাকায় নিজের প্রাইভেট কারে বসা ছিলেন কামাল। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এমএজি ওসমানী মেডিক্যালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।’
ওসি বলেন, ‘আমরা অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রাজু নামের এক ছাত্রদল নেতাকে আটক করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।’
ওসমানী হাসপাতাল থেকে সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল আহাদ খান জামাল বলেন, ‘কে বা কারা তাকে ছুরিকাঘাত করেছে তা আমরা এখনও জানতে পারিনি। রাজনৈতিক বিরোধ থেকে এ হত্যাকাণ্ড কি না তাও আমরা নিশ্চিত নই।’