চলতি বছরের মে মাসের এক ঝড়ে ভেঙে পড়ে প্রাচীন দুই গাছ। এর একটি পাকুড়, অপরটি জয়তুন। এর মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ছয় মাস, কিন্তু গাছগুলো সরানোর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বগুড়া শহরের শহীদ খোকন পৌর শিশু উদ্যান ও জেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গেলে দেখা যায় এমন চিত্র।
উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, ফটকের দরজা বন্ধ হলেও পশ্চিম পাশের দরজা খোলা। ভেতরে কয়েকটি বেঞ্চে কিছু মানুষ বসা। পশ্চিম গেটের ধারেই একটি পাকুড়গাছ উপড়ে পড়ে রয়েছে। গাছের আঘাতে দুটি পাকা বেঞ্চ ভেঙে যায়। একটি কাঠের বেঞ্চও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেগুলো একইভাবে পড়ে আছে।
মাঠের মাঝখানে জয়তুন গাছটির কাণ্ডের একটি অংশ উপড়ে গেছে। অপরটি ঝড়ের তাণ্ডব উপেক্ষা করে কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে। ওই সময় পার্কের গেটের দায়িত্বরত কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গেটের পাশের চা দোকানি মমিন মিয়া বলেন, ‘মে মাসে প্রথম ঝড়েই গাছ দুটি ভেঙে পড়ে। তারপর থেকে এ অবস্থায় পড়ে আছে। শুক্রবার গেটের দারোয়ান আসেনি। তিনি না থাকলে আমি দায়িত্বে থাকি।’
ওই সময় শহরের শাকপালার বাসিন্দা হেলাল আহমেদ বলেন, ‘আমি নিউ মার্কেটের দোকানে কাজ করি। পাশাপাশি গরুর খাওয়ার জন্য পার্ক থেকে আগাছা ঘাস কেটে নিয়ে যাই।
‘আজ কয়েক মাস ধরে দেখছি গাছ দুটি এভাবে পড়ে আছে। গাছগুলো ফেলে রেখে অযথাই নষ্ট করছে।’
বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি এ বি এম জিয়াউল হক বাবলা বলেন, ‘শহীদ খোকন পার্ক জেলার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য একটি গুরত্বপূর্ণ স্থান। আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু গাছ পৌরসভা একা অপসারণ করতে পারে না। বন বিভাগসহ অন্য দপ্তরের অনুমতি লাগে। এ জন্য বোধ হয় কাজে দেরি হচ্ছে।’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমন পরিস্থিতিকে অব্যবস্থাপনার স্বাক্ষর হিসেবে দেখেন বগুড়া পরিবেশ উন্নয়ন নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক।
তিনি বলেন, ‘খোকন পার্কের ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের মধ্যে একটি বিরল জয়তুন গাছও আছে। এটি আমাদের একটি ঐতিহ্যও বলা যায়। গত মাসে পৌরসভার সচিবের সঙ্গে গাছ দুটি নিয়ে কথা হয়েছিল। তিনি সে সময় জানিয়েছিলেন, এগুলো অপসারণের অনুমতি পাওয়া গেছে, কিন্তু এ কথা বলার পরও এক মাস পেরিয়ে গেল, কাজের দৃশ্যমান কোনো কিছুই নজরে পড়ল না।’
আব্দুল খালেক আরও বলেন, ‘জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মতো স্থানের দুটি গাছ সরাতে ছয় মাস লাগছে। এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, এটি সরকারি দপ্তরের লাল ফিতার ফাঁদে পড়েছে। এটাকে চরম অবহেলা ও কাজের অব্যবস্থাপনা বলা ছাড়া অন্য কোনো শব্দ নেই।’
মে মাসের শুরুতে ঝড়ে গাছ দুটি ভেঙে পড়ার বিষয়টি জানান বগুড়া পৌরসভার সচিব রেজাউল করিম।
অপসারণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি স্থাপনায় গাছ কাটার বিষয়টি একটু জটিল। আমরা বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে সেটি জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তাদের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় হয়ে টেন্ডারের অনুমোদন পেয়েছি। এখন সব কাজ শেষ। এ মাসে নিলাম ডাকা হবে। গাছ বিক্রির পর পার্কটি আবার আগের মতো হবে।’