হাওর জেলা সুনামগঞ্জে বেড়েছে বিয়েবিচ্ছেদের সংখ্যা। জেলায় প্রতি মাসে অন্তত ১৭৫টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে।
নারীরা তাদের অধিকার ও অবস্থান বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং পুরুষশাসিত সমাজের ধারণা থেকে নারীরা বের হয়ে আসার চেষ্টা করছেন বলেও বিচ্ছেদ বাড়ছে বলে মনে করছেন জেলার অনেকেই।
সুনামগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে জেলায় বিয়েবিচ্ছেদ ছিল ২ হাজার ১১০টি। গ্রামের তুলনায় শহরে বিচ্ছেদের হার বেশি। বিয়েবিচ্ছেদের হারের দিক থেকে প্রথম দিকে রয়েছে ছাতক উপজেলা। গেল এক বছরে ছাতকে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৪৪১টি।
তারপরই আছে সুনামগঞ্জ সদরের স্থান। এক বছরে উপজেলায় বিচ্ছেদ হয়েছে ৩৫৪টি। তবে এক বছরে শাল্লায় বিচ্ছেদ হয়েছে সবচেয়ে কম, ১৭টি।
এ ছাড়া ২০২১ সালে জগন্নাথপুর উপজেলায় ১৩৪টি, দিরাইয়ে ১৮২টি, জামালগঞ্জে ১৮১টি, দোয়ারাবাজারে ২৩১টি, তাহিরপুরে ১৫১টি, ধর্মপাশায় ৮৬টি, বিশ্বম্ভরপুরে ৯৭টি এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ২৩৬টি বিয়েবিচ্ছেদ হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি সানজিদা নাসরিন দিনা ডায়না বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক নারীরা আসেন তারা স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স নিতে চায়, তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি সংসার যেন না ভাঙে। এ ছাড়া করোনা ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণেও নানা সময়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে, পরে তারা আলাদা হয়ে যায়।’
সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরি ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘মহিলা পরিষদ কখনো চায় না কারও সংসার ভাঙুক, আমরা যত বড় সমস্যা হোক সেটা সমাধানের চেষ্টা করি। তবে আমাদের সুনামগঞ্জে করোনা, বন্যা ও যৌতুক এই তিনটির ফলে অনেক সংসার ভেঙে যাচ্ছে।
‘আমাদের এসব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের চিন্তার বিকাশ করতে হবে করোনাকালে বেশিই বাল্যবিয়ে হয়েছে, অনেক মেয়েতো পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। সংসার কী বুঝে ওঠার আগেই তাকে বিয়ে দিচ্ছে।’
সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নান্টু রায় বলেন, অনেক পরিবারের অভিভাবকরা অসচেতন। অল্প বয়সেই ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেন। পরিবার ও সংসার সম্পর্কে বোঝাপড়ার আগেই নানা কারণে দম্পতির মধ্যে মনোমালিন্য-কলহ বাঁধে, যা বিচ্ছেদে গড়ায়।
এ ছাড়া আরেকটি কারণকে বিচ্ছেদের জন্য দায়ী করেন তিনি। বলেন, ‘অল্প বয়সে প্রেমে পড়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বা কোর্টে হলফনামা করে সংসার জীবনে আবদ্ধ হন অনেকেই। পরে সেসব পরিবার বিচ্ছেদের ঝুঁকিতে থাকে। যৌতুক, নারী নির্যাতন, পারিবারিক বিরোধও বিয়েবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ।
নান্টু রায় বলেন, ‘পরিবার তথা সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিয়ের মতো বন্ধন যেন একটা ভুল সিদ্ধান্তে ভেঙে না যায়, সেটা সবাই চায়। সেদিকে আমাদের আরও যত্নশীল হতে হবে।’