বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মহিলা সংস্থার প্রশিক্ষণার্থী শুধু কাগজে

  •    
  • ৬ নভেম্বর, ২০২২ ০৯:২১

অভিযোগ আছে, ঝালকাঠির রাজাপুরে নারী উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণে নামে-বেনামে শিক্ষার্থী দেখিয়ে বরাদ্দ অর্থ লোপাটের পাঁয়তারা করছেন প্রশিক্ষণ কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক প্রশিক্ষণার্থী নিউজবাংলার কাছে এটি স্বীকার করেছেন।

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় জাতীয় মহিলা সংস্থার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চলছে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ। ভর্তি নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি ব্যাচে আলাদা পাঁচটি ট্রেডে ৫০ জন করে মোট আড়াই শ প্রশিক্ষণার্থী থাকার কথা। বাস্তবে তা নেই।

অভিযোগ আছে, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভর্তি ফরম এবং হাজিরা খাতায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে এখান থেকে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর জন্য সরকারি বরাদ্দ রয়েছে নগদ ১২ হাজার টাকা।

বিষয়টি নিয়ে এক মাস অনুসন্ধান করে নিউজবাংলা এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।

অভিযোগ আছে, এই প্রশিক্ষণে নামে-বেনামে শিক্ষার্থী দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা লোপাটের পাঁয়তারা করছেন প্রশিক্ষণ কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক প্রশিক্ষণার্থী নিউজবাংলার কাছে এটি স্বীকার করেছেন।

তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প-৪-এর আওতায় যেসব ট্রেডে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা সেগুলো হলো চার মাস মেয়াদি বিউটিফিকেশন কোর্স, ক্যাটারিং কোর্স, ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোর্স এবং ফ্যাশন ডিজাইনার কোর্স। এ ছাড়া ৪০ দিন মেয়াদি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ই-কমার্স কোর্সও আছে।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই কেন্দ্রের যাবতীয় কাগজ এবং হাজিরা খাতায় প্রতিটি ট্রেডেই ৫০ জন করে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি দেখানো হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে ভুয়া নামগুলোর মাথাপিছু ১২ হাজার টাকা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করে নেবেন বলে মনে করছেন প্রশিক্ষণার্থীরা।

এই কেন্দ্রে প্রশিক্ষণার্থীদের টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল অ্যাকাউন্টে না দিয়ে নগদ দেয়া হয়। নগদ টাকা দেয়ার তথ্যটি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন জাতীয় মহিলা সংস্থা ঝালকাঠির জেলা কর্মকর্তা মো. ফাহাদ হোসেন হাওলাদার।

সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখ সকাল ১১টায় রাজাপুর প্রশিক্ষণকেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চারটি ট্রেডের প্রশিক্ষণার্থীদের চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা চলছে। এই কেন্দ্রে ছয়জন প্রশিক্ষক থাকার কথা থাকলেও ওই সময় মাত্র দুজন প্রশিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। এমনকি সেখানকার দায়িত্বরত প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সামিরা আক্তার নিজেও অনুপস্থিত ছিলেন।

ভেতরে তিনটি কক্ষে ৪৬ জন নারী পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কেন উপস্থিত নেই, তা জানতে চাইলে সেখানে থাকা বিউটিফিকেশন ট্রেডের প্রশিক্ষক শাহানারা খাতুন বলেন, ‘ম্যাডাম ছুটিতে আছেন।’

তাৎক্ষণিকভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২-৪ দিনে তার কোনো ছুটি মঞ্জুর করেনি যথাযথ কর্তৃপক্ষ। সাংবাদিক উপস্থিতি টের পেয়ে প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা দ্রুত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চলে আসেন।

আড়াই শ প্রশিক্ষণার্থীর মাত্র ৪৬ জন নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে কেন, জানতে চাওয়া হলে প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সামিরা আক্তার বলেন, ‘দুই মাস ক্লাস চালানোর পর কেন্দ্রের নির্দেশে ৪০ দিন মেয়াদি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ই-কমার্স কোর্সটি বন্ধ আছে। আর তাই ভর্তি ও হাজিরা খাতায় তাদের ৫০ জনের নাম রয়েছে, কিন্তু তারা উপস্থিত নেই। বাকি চারটি ট্রেডে ৫০ জন করে ২০০ জন ভর্তি থাকলেও কেন্দ্রের নির্দেশে বিকেলের ক্লাস বন্ধ রয়েছে। সে কারণে বর্তমানে সকালে ১০০ জন প্রশিক্ষণার্থীর ক্লাস চলমান রয়েছে। সেই ১০০ জন নারীর মধ্যে বিভিন্ন কারণে আজ পরীক্ষা দিতে অনেকে আসতে পারেনি।’

এদিকে প্রশিক্ষণার্থীদের হাজিরা খাতার কিছু অংশ সংগ্রহ করেছে নিউজবাংলা। তাতে দেখা যায়, প্রকৃত যে প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে, তাদের উপস্থিতির ঘরে বলপেন দিয়ে স্বাক্ষর করানো হয় এবং অনুপস্থিতির ঘরে কাঠ পেনসিল দিয়ে ক্রসচিহ্ন দেয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকৃত যারা প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে তাদের ক্লাসে অনুপস্থিতির দিনগুলোতে ১৫০ টাকা করে কেটে রাখা হবে। কিন্তু টাকা কেটে দিয়ে কাঠ পেনসিলের ক্রসটিহ্ন রাবার দিয়ে মুছে স্বাক্ষর বসিয়ে ওই অর্থ সামিরা আক্তারের নেতৃত্বে তুলে নেবেন প্রশিক্ষকরা। হাজিরা খাতায় কেন কাঠ পেনসিল দিয়ে ক্রসচিহ্ন দেয়া হলো সে বিষয় প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকেন সামিরা আক্তার।

রাজাপুরের কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব নারীরাও পরীক্ষা দিচ্ছেন বিউটিফিকেশন ট্রেডে। তবে ক্যামেরার সামনে সবাই লেখা বন্ধ করে বসে ছিলেন। যে জিনিসটি লক্ষ্য করা গেছে, তা হলো পরীক্ষার্থীদের বেশির ভাগ নারীর হাতের লেখা একই রকম। বোঝা যায়, পরীক্ষার খাতা নির্ধারিত কেউ লিখে দিয়েছেন। কথা বলে জানা গেল, অনেক পরীক্ষার্থী জানেন না তারা কী পরীক্ষা দিতে এসেছেন।

একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২ বা ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে গ্রামের অনেক গৃহিণী পরীক্ষা দিতে এসেছেন। তাদের নামে বরাদ্দ হবে ১২ হাজার টাকা। পরীক্ষা কেন্দ্রের একটি কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, ষাটোর্ধ নারীরা ফ্যাশন ডিজাইনার ট্রেডে পরীক্ষা দিতে এসেছেন।

মাকসুদা বেগম নামের পঞ্চাশোর্ধ এক প্রশিক্ষণার্থীকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি কোন ট্রেডে পরীক্ষা দিয়েছেন?’ তিনি কোনো জবাব দিতে না পেরে কেন্দ্র থেকে চলে যান।

নিউজবাংলার সঙ্গে এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় প্রকল্পের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা সহকারী প্রোগ্রামার মো. সাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সব ট্রেডে ভর্তিসংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে এবং ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণার্থীর বয়সসীমা হতে হবে।

এই প্রকল্পের সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন) মো. কাইয়ুম মিয়া মুঠোফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমাদের প্রকল্পের বাজেট মন্ত্রণালয় থেকে অর্ধেক করে দিয়েছে। আর তাই প্রকল্পে ব্যয় সংকোচন করতে সকল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিকেলের ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে। শুধু সকালের ক্লাসে ১০০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করবেন। তবে রাজাপুর কেন্দ্রে সকালেও ১০০ জন কেন নেই, সে বিষয়ে ওখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর