বৈশ্বিক জলবায়ুসংকট মোকাবিলায় খুব বেশি সময় হাতে নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) যুক্তরাষ্ট্র সময় শুক্রবার জলবায়ুসংকট ও মোকাবিলা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘অ্যাডাপশন গ্যাপ রিপোর্ট’ নামের ওই প্রতিবেদনের পর এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন জাতিসংঘ প্রধান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব জলবায়ুসংকটের অনিবার্য প্রভাব থেকে জনগণকে রক্ষায় আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।
শনিবার রাতে জাতিসংঘ মহাসচিবের কার্যালয় এক বিবৃতিতে প্রকাশ করা হয়।
এতে মহাসচিব বলেন, জলবায়ুসংকট মোকাবিলায় সম্মুখভাগে থাকা ব্যক্তিদেরই এখন সহযোগিতা প্রয়োজন। গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন, অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন শুরু- উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্ব ব্যর্থ হচ্ছে।
উন্নয়নশীল বিশ্বে অভিযোজন প্রয়োজনীয়তা ২০৩০ সাল নাগাদ বেড়ে ৩৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
কিন্তু অভিযোজন সহায়তা আজও ওই পরিমাণ অর্থের দশ ভাগের এক ভাগেরও কম। সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী ও সমাজকেই মূল্যটা দিতে হচ্ছে বেশি। এটা অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অভিযোজনকে অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে, যাতে মানবসমাজের সব সদস্য সমান গুরুত্ব পায়।
অজুহাতকে পাশে ঠেলে এবং সমস্যা সমাধানের উপকরণগুলো নিয়ে জলবায়ু অভিযোজন জোরেশোরে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শুরু করার এখনই সময় বলে বলা হয়।
আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন থেকেই অভিযোজন ঘাটতিগুলো অবশ্যই চারটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে চিহ্নিত করতে হবে।
প্রথমত, অভিযোজন প্রয়োজনীয়তার জন্য অর্থায়ন গুণগতমান ও পরিমাণে নাটকীয়ভাবে বাড়াতে হবে।
গত বছর উন্নত দেশগুলো অভিযোজনের জন্য ২০২৫ সাল নাগাদ সহযোগিতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৪০ বিলিয়ন ডলার করতে রাজি হয়েছিল।
কপ-২৭-এ তাদের অবশ্যই অর্জনযোগ্য পরিষ্কার মাইলফলকসহ বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে হবে- যেখানে অর্থায়ন হবে ঋণ হিসেবে নয়, অনুদান হিসেবে।
বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সরকারি অংশীদার হিসেবে অভিযোজন, পুনরুদ্ধার ও ঝুঁকিকে অগ্রাধিকার দিতে তাদের অবশ্যই নিজেদের প্রভাব খাটাতে হবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
জলবায়ু অর্থায়নের কমপক্ষে অর্ধেক অভিযোজন খাতে প্রবাহিত হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, অভিযোজন অগ্রাধিকারকে বিনিয়োগযোগ্য প্রকল্পে রূপান্তরিত করতে বিশ্বে জরুরি ভিত্তিতে নতুন ব্যাবসায়িক মডেল প্রয়োজন।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের প্রস্তাব ও অর্থায়নকারীদের বিবেচনার মধ্যে এখনো পার্থক্য রয়ে গেছে। বিনিয়োগের পথ এখন অবরুদ্ধ; আমাদের অবশ্যই এখনই এই পথ খোলাসা করতে হবে বলে জানান গুতেরেস।
জলবায়ু দুর্যোগ থেকে কোটি জীবন বাঁচাতে আমাদের বৈশ্বিকভাবে ব্যাপক অভিযোজন বিনিয়োগ প্রয়োজন। গ্রহীতা সরকার, উন্নয়ন অংশীদার ও অন্যান্য অর্থায়নকারীদের মধ্যে অভূতপূর্ব সমন্বয়ের এখনই উপযুক্ত সময়।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোজন উদ্যোগগুলোকে সহায়তা দিতে অগ্রাধিকারগুলোকে এই পথে নিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করার এটাই একমাত্র উপায়।
তিনি বিবৃতিতে বলেন, নতুন একটি অ্যাডাপটেশন পাইপলাইন অ্যাক্সিলারেটর দাঁড় করাতে আমি ইউএনডিপি, এনডিসি অংশীদারত্ব, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড এবং অন্যান্য জলবায়ু তহবিলকে সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নকারী এবং গ্রাহক দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছি। কপ-২৭-এ তারা তাদের কাজের প্রাথমিক বিবরণ তুলে ধরবে।
তৃতীয়ত, আমাদের আরও ভালো জলবায়ু ঝুঁকি ডেটা ও তথ্য প্রয়োজন।
অভিযোজন কার্যক্রমকে কার্যকর করতে ঝুঁকিতে থাকা দেশ ও জনগোষ্ঠীগুলোর জলবায়ু ঝুঁকি বিষয়ক স্থানীয় ডেটা ও তথ্য জানা প্রয়োজন।
এই বিষয়টিকে বাস্তবায়ন করতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার, শিক্ষাবিদ, ডেটা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আমি চ্যালেঞ্জ করছি।
এটি জীবন বাঁচাবে, জীবনযাপনের সুরক্ষা দেবে।
আর শেষ উপায়টি হলো, আমাদের অবশ্যই আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দেয়ার মাধ্যমে আমার আহ্বান করা সার্বজনীন আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই বিষয়ে কপ-২৭-এ ডব্লিউএমও একটি কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করবে।
এই চার অগ্রাধিকার বাস্তবায়ন করতে হলে অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহায়তা প্রয়োজন।
আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে অনেক জায়গায় এরই মধ্যে অভিযোজন পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেকটা বিলম্ব হয়ে গেছে।
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে আর্থিক ঘাটতি পূরণে কপ-২৭-এ অবশ্যই পরিষ্কার ও সময়ানুবর্তী একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন গুতেরেস।
এটিই হবে কোপ-২৭-এ সফলতা পাওয়ার মূল লিটমাস টেস্ট।
বিবৃতি জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘জলবায়ু জরুরি অবস্থার চলমান ও ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির হাত থেকে জনগণ ও সমাজকে সুরক্ষা দিতে বিশ্বকে অবশ্য পদক্ষেপ জোরদার করতে হবে। অপচয় করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই।’