বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নারীদের দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক তৈরিতে সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর অর্থায়নে এ ব্যাপারে তিন বছরের একটি প্রকল্প চলমান আছে।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য স্থানীয় সফল বাণিজ্যিক সংস্থা, বহুজাতিক করপোরেশন, সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওসহ বৃহৎ ক্রেতাদের সঙ্গে নারী নেতৃত্বাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংযোগ তৈরি করে দেয়া। সেই সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনায় আধুনিক বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতার বিকাশ।
অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন শীর্ষক এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কায় বাস্তবায়নের কাজ করছে উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনাল। সম্প্রতি প্রকল্পটির আওতায় দেশের প্রধান দুটি নগরী ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী নারীদের নিয়ে দুটি পৃথক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ওইসব সম্মেলনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও দেশীয় এবং বহুজাতিক বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া দেশের ১০০টির মতো নারী নেতৃত্বাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের নেটওয়ার্ক বাড়াতে এবং ৩০টিরও বেশি বড় বাণিজ্যিক করপোরেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
দুটি সম্মেলনেই মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সিনিয়র কর্মসূচি ব্যবস্থাপক চার্লস প্রিচার্ড। প্রকল্পটি সম্পর্কে তিনি বলেন, নারীদের নিয়ে এই ধরনের বিশেষ ফোরাম এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি মূলত দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকারমূলক দুটি প্রয়াস বাস্তবায়নে তৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে - যার একটি হচ্ছে, এই অঞ্চলে একটি চলমান এবং টেকসই সরবরাহ শেকল বা বাজার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং অপরটি হচ্ছে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করা ও তার মধ্য দিয়ে নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সেলর শন জে. ম্যাকইনটোশ বলেন, ‘নারী ও কন্যা শিশুদের স্বপ্ন পূরণে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, তা চিহ্নিত করা, সুরাহা করা এবং দূর করা আমাদের সবার দায়িত্ব। যুক্তরাষ্ট্র উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনালের মতো সংস্থাগুলির সাথে দাঁড়িয়েছে, যাতে নারী মালিকানাধীন ব্যবসার জন্য তাদের নেটওয়ার্ক বাড়াতে এবং বৃহত্তর করপোরেশনগুলির সাথে সংযোগ বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়।'
সম্মেলনে ব্যবসায়ী নারী নেতৃবৃন্দ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। তার মধ্যে রয়েছে নারীদের মালিকানাধীন ব্যবসা বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কমপক্ষে দুটি দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালা বাস্তবায়ন, নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বা সেবাসমূহের জন্য বাজারজাতকরণ কৌশল বা ইউনিক সেলিং প্রস্তাব, টেকসই এবং লাভজনক ব্যবসা বিনির্মাণে সহনশীল বাণিজ্যিক কৌশল, বৃহৎ বাণিজ্যিক করপোরেশনের সমন্বয়ে সরবারহকারীর বৈচিত্র্য নিয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠক, জেন্ডার সমতা এবং নারীবান্ধব বাণিজ্যিক প্রসার গড়ে তুলতে একটি নারী নেতৃত্বাধীন পণ্য প্রদর্শনীর সুযোগ করে দেয়া। পাশাপাশি ব্যবসা প্রচারের জন্য নারী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকৃত পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করারও দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে ম্যাচমেকিং সেশনের মধ্য দিয়ে বিজনেস পিচিং সেশনটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপর্ণূ। এতে অংশ নেন ম্যানুফ্যাকচারিং, প্রফেশনাল সার্ভিস, আইটি এবং টেক সার্ভিসসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিত্বকারী উদ্যোক্তা নারীরা। পাশাপাশি দেশের বেশ কিছু প্রথম শ্রেণির বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যেমন নিউ এশিয়া গ্রুপ, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড, শস্য প্রবর্তনাসহ কয়েক ডজন করপোরেশন এতে অংশ নেয়। ইস্টার্ন ব্যাংক এবং প্রাভা হেলথ বিডি লি. তাদের ব্যবসার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি সম্ভাব্য ক্রেতাদের সাথে তাদের পরিষেবাগুলি নিয়ে কীভাবে যোগাযোগ এবং বাজারজাত করতে হবে তা তুলে ধরে। নারী উদ্যোক্তারাও ব্যবসার নারী মালিকদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরির সুযোগ পান যা আসলে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উইকানেক্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অপারেটিং অফিসার সারিতা ভেনুম্বাকা এই সম্মেলন সম্পর্কে বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল পরিকাঠামো গঠনে ভূমিকা রাখে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথকে আরো সুগম করাসহ জেন্ডারভিত্তিক অসমতা দূর করে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাম্যতা সৃষ্টির পাশাপাশি কেবল নারী উদ্যেক্তারাই অর্থনীতির চাকাকে অদূর ভবিষ্যতে সচল করতে পারবে বলে আমি মনে করি।'
প্রকল্পটি শুরু হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জনেরও বেশি নারী উদ্যোক্তা দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি বহু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক করপোরেশনের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসার প্রসার ঘটানোর সুযোগ পেয়েছেন।