বারবার সাবধান করে দেওয়ার পরও দ্বিতীয়বার লার্ভা পাওয়ায় দুটি নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মেয়র নিজে এই অভিযান পরিচালনা করেন।
শনিবার সকালে রাজধানীর উত্তরায় ১১ নং সেক্টরে ৫১ নং ওয়ার্ডে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম মতবিনিময় করেন এবং ‘দশটায় দশ মিনিট প্রতি শনিবার নিজ নিজ বাসাবাড়ি করি পরিষ্কার’ শিরোনামে ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রমে অংশ নেন।
স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে মেয়র আতিকুল ইসলাম কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করেন। এ সময় দুটি নির্মাণাধীন ভবনে অসংখ্য লার্ভা পাওয়া যায়। মেয়রের উপস্থিতিতে অঞ্চল-৬-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরীন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দুটি ভবনের মালিকদের মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেন এবং নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (রিহ্যাব) থেকে ভবিষ্যতে এই ভবনে লার্ভা জন্মাতে দেয়া হবে না মর্মে অঙ্গীকারনামা জমা না দেয়া পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ থাকবে বলে জানান ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরীন।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা মাসব্যাপী কর্মসূচি পরিচালনা করছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছি। বারবার সাবধান করা হলেও অনেকে সচেতন হচ্ছে না। আগেও কয়েকবার এই নির্মাণাধীন ভবনে সাবধান করা হয়েছে। সাবধান করে দেয়ার পরও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। তারপরও দেখছি বেজমেন্টে অসংখ্য লার্ভা। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। আমরা দুটি ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছি। লার্ভা পেলে কোনো ছাড় নয়। অভিযান চলমান থাকবে। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শুরুতে মেয়র আতিকুল ইসলাম উত্তরার বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সোসাইটির নেতা, মসজিদের ইমামসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে ডেঙ্গুসহ নানা বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
মেয়র বলেন, ‘সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। জনগণ সহযোগিতা না করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। জনগণের সহযোগিতায় মাত্র ১২ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে পেরেছি। অতএব জনগণ চাইলে ডেঙ্গুও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ছাদবাগানকে আমরা উৎসাহিত করছি। ছাদবাগানের জন্য পুরস্কারও দিব। কিন্তু নিয়ম মেনে করতে হবে। ছাদবাগানে পানি জমতে দেয়া যাবে না।'
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করণীয় সম্পর্কে শিশুদের শিক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘সবাইকে জানাতে হবে ড্রেন বা নর্দমার পানিতে এডিস মশার জন্ম হয় না। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই এডিসের লার্ভা জন্মায়। নিজেদের বাসাবাড়িতে ফুলের টব, অব্যবহৃত টায়ার, ডাবের খোসা, চিপসের খোলা প্যাকেট, বিভিন্ন ধরনের খোলা পাত্র, ছাদ কিংবা অন্য কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। জমে থাকা স্বচ্ছ পানি ফেলে দিন। শিশুদেরও এ বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে। বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সম্পৃক্ত হতে হবে।'
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘সচেতনতা কার্যক্রম ও অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি আমরা ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রদান করছি। ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ডিএনসিসির ৪৬টি মাতৃসদন কেন্দ্রে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে।'
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম নিজে ট্রাকে উঠে মাইকিং করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সচেতন করেন। উত্তরা এলাকার কয়েকটি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে তিনি নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ডেঙ্গু সচেতনতাবিষয়ক লিফলেট বিতরণ করেন।
ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে। পুরো নভেম্বর মাসজুড়ে এই কর্মসূচি চলবে।
উত্তরায় ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রমে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জে. মো. জোবায়দুর রহমান, ৫১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ শরীফুর রহমান, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা, অঞ্চল ০৬-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।