বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে কাঠ ও বাঁশের লাঠি হাতে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে যাচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সঙ্গে চলছে নানা স্লোগান।
শনিবার বেলা ২টার দিকে শুরু হবে সমাবেশ, তার আগে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশপথ ও মোড়ে মোড়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
কেউ হেঁটে, কেউ ভ্যানে, কেউ রিকশায় চড়ে আবার কেউ মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে করে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু উদ্যানের আশপাশের সড়কে এখন মানুষ আর মানুষ।
মিছিল, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস বহরে নেতা-কর্মীদের হাতে গাছের কাণ্ড, কাঠ এবং বাঁশ দিয়ে বানানো লাঠির উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া বিভিন্ন মিছিলে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকায় ব্যবহার করা হয়েছে লম্বা লাঠি ও বাঁশের কঞ্চি।
প্রত্যক্ষদর্শী সেলিম জানান, গত দুই দিনের চেয়ে সকালে বেশি লোক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে যাচ্ছেন। বেলা যত বাড়ছে, বিএনপির সমাবেশস্থলে লোকজন ততই বাড়ছে।
নগরের জিলা স্কুল মোড়ের এক দোকানদার বলেন, ‘সকাল থেকেই আশপাশের সড়কগুলো বিএনপির সমাবেশে আসা লোকজনে ভর্তি। সকাল সোয়া ৮টার দিকে একটি মাইক্রোবাস বহর যেতে দেখেছি, যার প্রতিটি গাড়ির গ্লাস খুলে নেতা-কর্মীরা লাঠি উঁচিয়ে দলের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিল। আবার আশপাশের অনেকের হাতেই জাতীয় পতাকার সঙ্গে লাঠি রয়েছে।’
জিলা স্কুলের মোড়, চাঁদমারি মোড়, ক্লাব রোডের মোড় থেকে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এসব জায়গা থেকে মানুষ হেঁটে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, ‘এরই মধ্যে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছে। সরকারের কোনো বাধাই কাজে আসেনি। সাধারণ মানুষ ও নেতা-কর্মীরা নৌপথে কেউ ট্রলারে, কেউ মাছ ধরা নৌকায় আর সড়ক পথে, কেউ হেঁটে, আবার কেউ ভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেলে, বাইসাইকেলে করে সমাবেশস্থলে আসছে।’
শনিবার দুপুরে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুই-এক দিন আগে থেকেই বরিশালে ঢুকতে শুরু করেন সারা দেশের নেতা-কর্মীরা। বুধবার থেকে আসতে শুরু করেন তারা।
এই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে সমাবেশস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন বিএনপির হাজারও নেতা-কর্মী। সকাল থেকে সমাবেশস্থলে শুরু হয় শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মাঠে ঘুমিয়ে থাকা অনেকে তখনও ঘুম থেকে উঠছিলেন। সমাবেশের মাঠে আসছিলেন কেউ।
বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় এই গণসমাবেশের আগেই নানা কারণ দেখিয়ে জেলায় গণপরিবহনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে শুক্রবার থেকে। তবে নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন নানা কৌশলে।
নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, বুধবার থেকেই এই উদ্যানে রাতযাপন করেছেন বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ এখানেই আদায় করেছেন তারা। রাতও কাটিয়েছেন এখানে।
মূলত শুক্রবার রাত ৮টার পর থেকে সমাবেশস্থলে ঢল নামতে থাকে; মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা সেখানে আসতে থাকেন। এর আগে বিকেলে বরিশাল পৌঁছান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা নগরীর বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান নিয়েছেন।
রাত ১০টার দিকে সমাবেশস্থল ও মঞ্চ ঘুরে দেখে গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরমাইক্কা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রহিম সরদার বলেন, ‘সবকিছু বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবারই সমাবেশস্থলে এসেছি। ট্রলার নিয়ে চরফ্যাশন থেকে আমরা ২০০ নেতা-কর্মী বরিশালে এসে এখানেই থাকছি। নিরাপত্তার জন্য তাঁবু টানিয়ে ছিলাম রাতে। সমাবেশ সফল করেই বাড়ি ফিরব।’
বরগুনার বেতাগী থেকে এসেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলকর্মী অলিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কোনো বাধাই আটকে রাখতে পারবে না আমাদের। অনেক নেতা-কর্মী সাইকেল চালিয়ে ও হেঁটেও আসছে। আমরা রাতে এখানে থাকছি সমাবেশ সফল করার জন্য। শীত উপেক্ষা করেও আমরা দেশকে স্বৈরশাসকের হাত থেকে মুক্ত করতে আন্দোলন সফলে থাকছি।’
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন। সরকারের কোনো বাধাই কাজে আসেনি।’
সমাবেশের মঞ্চ প্রস্তুত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার আবুল হোসেন লিমন বলেন, ‘৫০ ফুট দীর্ঘ ও ২৫ ফুট চওড়া মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ব্যানারও লাগানো শেষ হয়েছে। সমাবেশস্থলসহ আশেপাশে ১২০টি মাইক লাগানো হয়েছে।’
উচ্ছ্বসিত কিছু বিএনপি কর্মী সাংবাদিকদের জন্য তৈরি করা মঞ্চে বারবার ওঠা-নামা করছিলেন। এক পর্যায়ে সেটি ভেঙে পড়লে আহত হন সময় টিভির বরিশালের ভিডিওগ্রাফার সুজয় দাস। সেই মঞ্চটি আবার ঠিকঠাক করা হয় রাতেই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, কয়েকটি জায়গায় নেতা-কর্মীকে হত্যার অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দেশব্যাপী দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি।
এরই ধারাবাহিকতায় সমাবেশ হয়েছে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে। শনিবার বরিশালে বিএনপির পঞ্চম বিভাগীয় সমাবেশ।