রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট থেকে বরিশালগামী সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রকাশ্য কোনো সরকারি নিষেধাজ্ঞা কিংবা লঞ্চ কর্তৃপক্ষের নোটিশ ছাড়াই বন্ধ রয়েছে বরিশাল রুটের সব লঞ্চ। কারও পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্যও মেলেনি। তবে যাত্রী সংকটের দোহাই দিয়েছেন অনেক লঞ্চ মালিক।
শুক্রবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বরিশাল থেকে কোনো লঞ্চ আসেনি। এমনকি বরিশালের উদ্দেশে কোনো লঞ্চ ছেড়েও যায়নি। লঞ্চ চালু না থাকায় ঘাটে এসে অনেক যাত্রীই ফিরে গেছেন।
লঞ্চের স্টাফ ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন, শনিবারও বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকতে পারে।
সরেজমিনে সদরঘাটে দেখা যায়, সরকারি ছুটির দিনে অন্যান্য রুটের লঞ্চ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলেও বরিশালগামী লঞ্চগুলো ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে না। বরিশালগামী অ্যাডভেঞ্চার-৯, পারাবত-১১, পারাবত-১২, সুন্দরবন-১২, প্রিন্স কামাল-১ লঞ্চগুলো পণ্টুনে বাঁধা। লঞ্চের প্রধান ফটক বন্ধ রেখে বিশ্রামে কর্মচারীরা।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া লঞ্চ বন্ধ করায় সদরঘাটে এসে ভোগান্তিতে পড়েন বরিশালগামী যাত্রীরা।
তাদের একজন সুমনা খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এসেছি বাড়ি যাওয়ার জন্য। এখানে এসে দেখি লঞ্চ বন্ধ। বাচ্চা নিয়ে এসে বিপদে পড়েছি। এখন আবার ফিরে যেতে হবে। আগে জানালে আমাদের এই ভোগান্তি হতো না।’
গার্মেন্টকর্মী রফিকুল হক বলেন, ‘ভেবেছিলাম রাতের লঞ্চে বাড়ি যাব। কিন্তু এসে দেখি লঞ্চ চলছে না। বাধ্য হয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।’
সুমনা ও রফিকুলের মতো আরও বেশকিছু যাত্রী বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটা কর্তৃপক্ষের আগেভাগে জানানো উচিত ছিল। তাহলে এতোটা ভোগান্তি পোহাতে হতো না। এখানে ঘাটে এসে তো মাথায় হাত। সময় ও শ্রম দুটোই নষ্ট হয়েছে।’
লঞ্চ বন্ধ থাকার কারণ জানতে যোগাযোগ করলে লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া হেসে উত্তর দেন, ‘আপনি সাংবাদিক না? আপনি বোঝেন না?’
কারণ জানতে তিনি সুন্দরবন নেভিগেশনের স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে রিন্টুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি বন্ধা পাওয়া গেছে।
ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাটের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করেও কোনো লঞ্চ বন্ধ থাকার কারণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট উত্তর মেলেনি।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, ‘আপনারা তো জানেনই কেন বন্ধ আছে। এসব নিয়ে আমরা কথা বলতে পারব না। এর উত্তর সবারই জানা।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব মো. বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘লঞ্চ তো আর আমরা বন্ধ রাখতে পারি না। এটা আমাদের হাতে না। বরিশালের মেয়র আমাদের ধমক দিলেই আমরা বন্ধ করে দেই। সমস্যা হলে মালিকরা বন্ধ রাখেন।’
সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন যে লঞ্চ বন্ধ থাকবে না। তাহলে শুক্রবার কেন লঞ্চ বন্ধ রয়েছে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ এমনিতেই কম চলে। আর আমরা লঞ্চ বন্ধ রাখার কেউ না। এটা আমি আগেও বলেছি। মালিক পক্ষ যদি তেলের খরচ না মেটাতে পারে তাহলে লঞ্চ বন্ধ রাখলে আমরা তো আর কিছু করতে পারব না।’
বরিশাল রুটের কোনো লঞ্চই কেন চলছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার তো কোনো লঞ্চ নেই এখানে। আজকে যেসব জাহাজ চলার কথা সেগুলোর মালিকরাই ভালো বলতে পারবেন যে কেন চলছে না।’
বরিশালে বিএনপির সমাবেশকে উপলক্ষ করে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে- এমন গুঞ্জনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সেসব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা ব্যবসায়ী, আমাদের কাছেই ব্যবসাটাই মুখ্য। পারিপার্শ্বিক কারণে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তবে সমাবেশের সঙ্গে লঞ্চ বন্ধ থাকার কোনো সম্পর্ক নেই।’
বরিশাল ও ঢাকা প্রান্ত থেকে কোনো লঞ্চ ছাড়বে না বলে জানিয়েছেন কীর্তনখোলা লঞ্চের মালিক মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার হওয়ায় যাত্রী নেই। তাই লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। যে যাত্রী পাওয়া যাবে তাতে লঞ্চের ব্যয় উঠবে না। আর্থিক ক্ষতি করে তো আর লঞ্চ চালানো যাবে না।’
বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মো. শহীদ উল্যাহ বলেন, ‘লঞ্চ বন্ধ থাকার কারণ আমরা জানি না। এ বিষয়ে লঞ্চের মালিকরা ভালো জানেন। আমাদেরকে কোনো মালিকই কিছু জানাননি।’
এদিকে শনিবার বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে যাত্রী সংকটের অজুহাতে লঞ্চ মালিকরা ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট থেকে বরিশালগামী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছেন বলে মন্তব্য করেন ঘাটে এসে ঘুরে যাওয়া যাত্রীরা।