বিএনপি আন্দোলনের নামে যেভাবে লাফালাফি ও বাড়াবাড়ি করছে, তাতে দলটির আন্দোলনের পতনধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অফ বাংলাদেশ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত ‘উদীয়মান ভবিষ্যতের জন্য চতুর্থ শিল্পবিপ্লব’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, ‘তারা (বিএনপি) বাড়াবাড়ি করছেন। ১০ ডিসেম্বর বেগম জিয়াকে নিয়ে তারা মিছিল করবেন। সরকার পতন হবে। আপনারা তো সরকারের পতনধ্বনি শুনছেন…যেভাবে বাড়াবাড়ি করছেন, আমি আপনাদের আন্দোলনের পতনধ্বনি শুনতে পাচ্ছি।’
বিএনপি আন্দোলন নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে দণ্ডিত অপরাধী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন- তা নিয়ে বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়ার জবাবও দিয়েছেন কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বাড়াবাড়ির কথা বলেছেন। বেগম জিয়াকে আপনারা মুক্ত করেননি। শেখ হাসিনার উদারতা, আজকে তার (খালেদা জিয়া) যে দণ্ড স্থগিত করে তাকে বাসায় রাখা হয়েছে। শারীরিক কারণে, মানবিক বিবেচনায়- এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন বলে বিএনপি নেতারা যে কথা বলেছেন তারও কড়া জবাব দিয়েছেন কাদের।
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই নেতা বলেন, ‘প্রতিহিংসা তো তাদের, যারা '৭১-এর প্রতিশোধ নিতে '৭৫ ঘটিয়েছে। ১৫ আগস্ট ঘটিয়েছিল যারা, তারাই প্রতিহিংসাপরায়ণ। তাদের চেয়ে প্রতিহিংসা কার বেশি?’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে প্রাইম টার্গেট করে যারা ২১ আগস্ট ঘটিয়েছিল, তাদের চেয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ বাংলাদেশে আর কে? প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনের বিরুদ্ধে বলেননি। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বলেছেন, বিরোধী দল আন্দোলন করুক, বাধা দেবেন না। আমি একই কথা আবারও উচ্চারণ করি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হচ্ছে না এবং হবেও না। প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশ সে নির্দেশ অনুযায়ী আমরা চলছি।’
বিএনপির অভ্যুত্থানের হুমকি নিয়েও সমালোচনা করতে ছাড়েননি ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানটা কোথায় করবেন? এই ঢাকা সিটিতে! কী করবেন? ১০ লাখ লোক বসাবেন! দেখা যাক। কে কত লাখ বসাতে পারে।
‘আপনারা তো লাখ ছাড়া আর কিছু দেখেন না, কথায় কথায় লাখ, আর আওয়ামী লীগ নাকি পাবে সর্বশেষ ১০ সিট। আওয়ামী লীগ ১০ সিট পাবে আগামী ইলেকশনে। মনে পড়ে, ২০০৮ সালে বেগম জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ৩০ সিট পাবে। পরে দেখা গেল বিএনপি ২৯ সিট পেয়েছিল। এগুলো তাদের মুখের কথা। বলতেই পারে।’
আওয়ামী লীগের নেতারা পালাবার পথ পাবে না বলে যে বক্তব্য দিয়ে আসছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেও বক্তব্য দেন কাদের।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্ম এ দেশে, আমরা এ দেশে মরব, জেলে যাব, পালাবার পথ খুঁজব না। এ দেশ থেকে পালাব না। আর রাজনীতি করব না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে সুদূর লন্ডনে পালিয়েছে তো আপনাদের নেতা, আপনাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। পালাবার ইতিহাস তো আপনাদের, আমরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করব।’
মন্ত্রিসভার অনুমোদনে ৪ নভেম্বর জাতীয়ভাবে সংবিধান দিবস পালিত হচ্ছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। দেশ স্বাধীনের এক বছরের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন করায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করেন তিনি।
কাদের বলেন, ‘এই সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলছে, দেশের গণতন্ত্র চলছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনও হবে এই সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
‘যখন খুশি তখন আমার ইচ্ছামতো, আমার সুবিধামতো সংবিধানকে আমি ব্যবহার করব, সেটা চলবে না। দুনিয়ার অন্য কোথাও চলে না। এখানেও চলবে না।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে বৈশ্বিক সংকটের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমাদের যে অবস্থা প্রথমে মানুষের কথা ভাবতে হবে। বিপ্লব আমরা করব। কিন্তু এখন মানুষ বাঁচাতে হবে। সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। সংকট উত্তরণই এখন প্রধান কাজ। সারা দুনিয়া কষ্টে আছে, শুধু বাংলাদেশ না।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মো. হোসেন মুনসুরের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর।