বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ক্রেতার সামনেই গাছ থেকে রস পেড়ে গুড়

  •    
  • ৪ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:৫৪

কুষ্টিয়া সদরের জগতি-ফুলবাড়িয়া এলাকায় ২ হাজার খেজুরগাছ লিজ নিয়ে খেজুরের রস বিক্রি করছেন গাছিরা। ভোরবেলা এখানে আসতে থাকে মানুষ। কেউ মোটরসাইকেলে কেউবা অটোরিকশায়, কেউ আবার মোটরগাড়িতে। তাদের সামনেই গাছ থেকে রস পেড়ে ঢেলে দেয়া হয় গ্লাসে।

কুষ্টিয়ায় খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু করেছেন গাছির দল। সদরের জগতি, ফুলবাড়িয়া ও বাইপাস এলাকায় তারা অস্থায়ী ঘর তুলে দিনরাত পরিশ্রম করে আহরণ করছেন রস। ভেজালের সন্দেহ দূর করতে চোখের সামনেই গাছ থেকে খেজুরের রস পেড়ে দিচ্ছেন ক্রেতাদের। জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করছেনও সামনেই।

শনিবার কুয়াশাঘেরা সকালে কুষ্টিয়া সদরের জগতি-ফুলবাড়িয়ায় এ দৃশ্য চোখে পড়ে। এসব গ্রামে এখন শীতের আবহ। ফুলবাড়িয়ায় গ্রাম্য মেঠো সড়কের দুই পাশে ধানক্ষেত। সড়কের সঙ্গে আছে ২৮০টি খেজুরের গাছ।

স্থানীয় যুবকরা এসব গাছ দেখভাল করেন। এগুলো থেকে রস সংগ্রহের জন্য তাদের কাছ থেকে শীতের চার মাসের জন্য ৯৫ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছেন রাজশাহীর গাছি সিহাব উদ্দিনের দল। তার দলে চারজন সদস্য। এই মেঠো সড়কের পাশে অস্থায়ী থাকার ঘর বানিয়ে নিয়েছেন তারা।

ভোরবেলায় যখন সূর্যের আলো কুয়াশা ভেদ করার চেষ্টা করে, তখনই হইহই করে বাইসাইকেল নিয়ে ছুটে আসেন একদল কিশোর। তাদের দেখে গাছিরা রসের পাতিল পেড়ে এনে গ্লাসে ঢেলে দেন। ১০ টাকা গ্লাস। একেকজন টপাটপ গিলে নেন কয়েক গ্লাস। এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করে আবার হইহই করতে করতে ফিরে যান তারা।

এভাবে আসতে থাকে মানুষ। কেউ মোটরসাইকেলে, কেউবা অটোরিকশায়, কেউ আবার মোটরগাড়িতে। এই দৃশ্য চলে সকাল ৮টা পর্যন্ত। মানুষ আসে, রস খায়, আনন্দ করে, ছবি তোলে, চলে যায়।

সাতসকালে রস খেতে আসা মানুষজনকে ম্যানেজ করতেই ব্যস্ত থাকেন গাছিরা। এরপর অবশিষ্ট রস বড় টিনের পাত্রে (তাপাল) জ্বালাতে থাকেন তারা। নির্দিষ্ট সময় পর গুড়ের রং আসে, ছড়িয়ে পড়ে গন্ধ।

এ সময় গুড় ও পাটালি কিনতে আসতে থাকে মানুষ। আসেন ব্যাপারীরাও। ২০০ টাকা কেজি দরে ভেজালমুক্ত গুড় কিনে তৃপ্তির হাসি দিয়ে যাচ্ছেন সবাই।

সলিম উল্লাহ নামের এক বৃদ্ধের সঙ্গে কথা হয়। তিনি এসেছেন গুড় কিনতে। বলেন, ‘এখন রস খাওয়া নিষেধ। কিন্তু মন কী মানে? এক গ্লাস খেতে গিয়ে দুই গ্লাস খেয়ে ফেললাম।’

তিনি কিশোর বয়সের স্মৃতি রোমন্থন করেন। বলেন, ‘সে সময় কত খেজুরগাছ ছিল। গাছির চোখ ফাঁকি দিয়ে আমরা পাটকাঠি পাত্রে ডুবিয়ে কত চুরি করে রস খেয়েছি। এখন রস খুঁজতে হলে এসব এলাকায় আসতে হয়। সার্বিকভাবে খেজুরগাছের সংখ্যা কমে গেছে।’

বাড়ির আশপাশে আগের মতো খেজুরগাছ না থাকায় শীতের আবেশে রসের স্বাদ নিতে এখানে আসতে হয়েছে বলে জানান কিশোর সামিউর।

রস-গুড় বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে গাছিদের রস সংগ্রহে মনোযোগ দিতে দেখা যায়। রশি ও বাঁশের লাঠির সাহায্যে নিজেকে গাছের সঙ্গে বিশেষ ভঙ্গিতে ঝুলিয়ে নিবিষ্ট মনে গাছের বুকে আলতোভাবে চালান ধারালো অস্ত্র। আর গাছের বুকে পুঁতে দেয়া কঞ্চির নালা বেয়ে মাটির পাত্রে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়তে থাকে রস।

গাছি সিহাব উদ্দিন বলেন, 'পাখি ও পতঙ্গের মাধ্যমে কোনো জীবাণু যাতে রসে না যায়, সে কারণে ঢেকে দেয়া হচ্ছে নেট নিয়ে। রস ভালো রাখার জন্য পাত্রে শুধু চুন ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া আর কোনো কেমিক্যাল বা কোনো কিছুই ব্যবহার হয় না। মানুষ ভেজালের ভয়ে নানা প্রশ্ন করে। তাই আমরা সব কিছু মানুষের সামনেই করি। এখানে ভেজালের কোনো সুযোগ নেই।’

সিহাব বলেন, ‘চার মাস শেষে আমাদের অমানুষিক পরিশ্রমে লাভ আসে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি ভালো লাগে এত মানুষকে আনন্দ দিতে পারছি- এ কারণে।’

তিনি বলেন, ‘এখান থেকে রস ও গুড় নিয়ে কীভাবে হাসিমুখে যায় মানুষ, বাড়িতে গিয়ে পিঠা-পুলি বানায়, এগুলো ভেবে অনেক ভালো লাগে।’

কুষ্টিয়ার জগতি, ফুলবাড়িয়া ও বাইপাস এলাকায় ২ হাজারেরও বেশি খেজুরগাছ আছে। গাছিদের কয়েকটি দল এগুলো লিজ নেন।

এ বিভাগের আরো খবর