‘সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা দাঁড়ালে স্পিকার মাইক দিতে বাধ্য। এটি সংসদীয় আইন। কিন্তু ২০০৪ সালে শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার পর তিনি সংসদে কথা বলতে চাইলে সেই সুযোগ দেয়া হয়নি। সেদিন যারা কথা বলতে দেয়নি তারাই আজ আবার গণতন্ত্রের কথা বলছে।’
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। ইন্সটিটিউটে জেল হত্যা দিবস স্মরণে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এই সভার আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট।
এ সময় চার জাতীয় নেতা স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আমির হোসেন আমু তার বক্তব্যে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিরা গণমাধ্যমের সামনে খুনের কথা স্বীকার করেছিল। অনেকেই বলেছিল, তারা যেহেতু স্বীকার করেছে তাই তাদের বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বা শুটিং স্কোয়াডের মাধ্যমে হোক। বঙ্গবন্ধু-কন্যা তা করেননি। ইতিহাসের কুখ্যাত অপরাধীরাও আইনের সব সুযোগ পেয়েছিল।’
৪৭ বছর আগে ভয়াল ৩ নভেম্বর রাতের কথা স্মরণ করে আমু বলেন, ‘আমি সেদিন একই সঙ্গে কারাগারে ছিলাম। আমার পাশের কক্ষেই জাতীয় চার নেতা দুই কক্ষে থাকতেন। কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন আলোচনা হতো। আমরা শুনলাম, সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় চার নেতার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
‘ওইদিন রাত ২টায় বুটের আওয়াজ পাওয়া গেল। জেলার সাহেব তাদেরকে বললেন আলোচনার জন্য লোক এসেছে। এর ২০ মিনিট পর আমরা ব্রাশ ফায়ারের আওয়াজ পেলাম। এর ১০ মিনিট পর আবারও ব্রাশ ফায়ার। পরদিন আমাদের কক্ষের লকআপ আর খোলা হল না। শুনলাম সব শেষ। পরে বুঝলাম মেরে ফেলা হয়েছে। কাদেরকে মারা হয়েছে তা জানতে আরও চার দিন লেগেছে আমার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের শুরু হয়েছিল ১৫ আগস্ট। এই হত্যাকাণ্ড কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকেন্দ্রিক ছিল না। এরপর ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ডে আর বুঝতে বাকি ছিল না স্বাধীনতা বিরোধীরাই এসব কাণ্ড ঘটাচ্ছে।
‘বঙ্গবন্ধুর আমলে সাড়ে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী কারাবন্দি ছিল। তাদের মধ্যে সাড়ে ৪শ’ লোকের বিচার হয়েছিল। ৫২ জনের ফাঁসির আদেশও হয়েছিল। কিন্ত জিয়াউর রহমানের কলমের এক খোঁচায় সবাইকে মুক্ত করে দেয়া হয়। কোন আইনে তা করা হয়েছিল?’
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান।
দীপু মনি বলেন, ‘জাতীয় চার নেতাকে খন্দকার মোশতাক সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মোশতাকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তারা তা গ্রহণ করেননি। সমঝোতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করেছেন তারা।’
তরুণ প্রজন্মকে উদ্দেশ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখন আর স্বাধীনতা ও ভাষার জন্য রক্ত দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের পূর্বসূরিরা এ কাজগুলো করে গেছেন। এখন আমাদের কাজ, যে গণতন্ত্র আছে তা আরও সুসংহত করা।’