ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নৌযান বন্ধ রাখার যে অভিযোগ উঠেছে তা নাকচ করেছে লঞ্চ মালিক সমিতি। স্থানীয়ভাবে বরিশাল-ভোলা রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধের বিষয়ে তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বৃহস্পতিবার রাতে লঞ্চ চালু রাখার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন একাধিক মালিক ও সমিতির নেতারা। বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকার কথা জানিয়েছে।
রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে দেখা যায়, যাত্রীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি। রাত ৮টা পর্যন্ত ঘাট থেকে ছেড়ে গেছে নির্দিষ্ট গন্তব্যের লঞ্চগুলো। পটুয়াখালী ও বগাগামী লঞ্চ ঘাট থেকে ছেড়ে যেতে দেখা যায়।
ঘাটে থাকা বরিশালগামী সুন্দরবন, মানামী, পারাবত ও শুভরাজসহ বেশ কয়েকটি লঞ্চের যাত্রীদের ডাকা হচ্ছিল। টার্মিনালে বরিশালগামী যাত্রীদের সমাগম চোখে পড়ার মতো। সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন এমন ভীড় সব সময় থাকে বলে জানান যাত্রীরা। বিএনপির সমাবেশ ঘিরে বরিশালে লঞ্চ বন্ধ থাকার বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকলেও সদরঘাটে পৌঁছে লঞ্চ পেয়ে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা।
লঞ্চ মালিকদের দাবি, রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত তাদের ব্যবসার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। সরকারি সিদ্ধান্ত কিছু থাকলে সেটি অবশ্যই মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই নিতে হবে। স্বাভাবিক নিয়মে লঞ্চ চলবে, তবে কোনও মালিক যাত্রী সংকটে তেল খরচ না দিতে পারলে তিনি বন্ধ রাখতে পারেন।
এদিকে মালিকরা লঞ্চ চালু রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানালেও কর্মচারীরা অনেকেই বলেন, ‘শুক্রবার বরিশাল থেকে লঞ্চ সদরঘাটে নাও ফিরতে পারে। তখন বরিশালগামী লঞ্চ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।’
তারা জানান, বরিশাল নদীবন্দর ও ডিসি ঘাট থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ভোলার উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। সেখানে কার্যত লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
সদরঘাটে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। ছবি: নিউজবাংলা
ঢাকার সদরঘাট থেকে বৃহস্পতিবার ঠিক সময়েই ছেড়েছে লঞ্চগুলো। বরিশাল রুটে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় প্রতিটি লঞ্চেই ছিল ভিড়।
মিরপুরের বাসিন্দা আরিফুর রহমান পরিবার নিয়ে বরিশালে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শুনেছি লঞ্চ বন্ধ থাকবে, তবে ঘাটে এসে দেখি লঞ্চ চালু। লম্বা ছুটি পেয়েছি তাই বাড়ি যাচ্ছি।’ এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যাত্রীদের অনেকে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার প্রেসিডেন্ট মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লঞ্চ আমরা বন্ধ করব না। কোনো মালিক যদি তেলখরচ দিতে না পেরে লঞ্চ বন্ধ রাখে তাহলে সেটা তার ব্যাপার। কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে আমর লঞ্চ বন্ধ রাখব না। আমরা ব্যবসায়ী, ব্যবসার চিন্তাই করব।’
লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লঞ্চ বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সে রকম হলে অবশ্যই জানানো হবে। তবে যাত্রী ভোগান্তি হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নিবো না।’
বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. শহীদ উল্যাহ বলেন, ‘কোনো দুর্যোগ বা বৈশ্বিক কোনো সমস্যা না হলে সরকার লঞ্চ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় না। এখন পর্যন্ত আমরা এমন নোটিশ পাইনি। মালিকরা যদি লঞ্চ বন্ধ রাখে, তাহলে সেটা তাদের ব্যাপার। তবে তা অবশ্যই আমাদের জানাবে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক সময় অনেক স্থানে পুলিশও লঞ্চ বন্ধ রাখে।’