দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুতের উৎপাদন জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। সব দেশেই দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য ৮০ শতাংশ বাড়িয়েছে।
‘আমরা দাম বাড়াইনি, দ্বিতীয় অপশন ছিল বেশি দামে জ্বালানি কেনা। এক জাহাজ এলএনজি আনলে ১৫শ’ কোটি টাকা লাগত, আর বিক্রি করতে হতো ৫৮ কোটি টাকায়। সব দেশ সাশ্রয়ের দিকে যাচ্ছে। আমরাও সেদিকে যাচ্ছি। লোডশেডিং করায় অনেক সাশ্রয় হচ্ছে।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘পরিস্থিতি এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও খারাপ অবস্থা হলে তা মোকাবেলায় পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। শিল্পকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। আমরা মার্চ-এপ্রিল নিয়ে এখনই পরিকল্পনা করছি।
‘এক সময় দেশীয় গ্যাসফিল্ড থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হতো। মজুদ কমে যাওয়ায় বর্তমানে কম-বেশি ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এর মধ্যে আমেরিকান কোম্পানির মালিকানাধীন বিবিয়ানা ফিল্ড থেকেই আসছে ১২৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি উৎপাদন হচ্ছে ওই একটি গ্যাস ফিল্ডেই। শঙ্কার কথা হচ্ছে, গ্যাসক্ষেত্রটির মজুদ শেষ হয়ে আসছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী (২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর) গ্যাস ফিল্ডটিতে অবশিষ্ট মজুদ (প্রমাণিত ৪৪১৫ বিলিয়ন ঘনফুট, প্রমাণিত ও সম্ভাব্য মিলে ৫৭৫৫ বিলিয়ন ঘনফুট এবং প্রমাণিত সম্ভাব্য ও সম্ভাবনাময় মিলে ৭০৮৪ বিসিএফ) রয়েছে মাত্র ৭৬৩ বিসিএফ।
অন্যদিকে দৈনিক সাড়ে ১২শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। সে হিসাবে বছরে উত্তোলন হচ্ছে প্রায় ৪৫৬ বিসিএফ। অর্থাৎ দুই বছর গ্যাস উত্তোলন করার মতো অবস্থায়ও নেই বিবিয়ানা।
পেট্রোবাংলার হিসাব প্রকাশের পর ইতোমধ্যে ১০ মাস গত হয়েছে। সে হিসাবে বড়জোর ১ বছর গ্যাস পাওয়া যাবে বিবিয়ানায়। সেটুকুও অনেক ‘যদি’র ওপর নির্ভরশীল।
ভোলার শাহাবাজপুরের টবগী-১ কূপ খনন করে গ্যাস পাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন ডাকেন প্রতিমন্ত্রী। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
তিনি বলেন, ভোলা গ্যাস ফিল্ডের টবগি-১ খনন দারুণভাবে সফল হয়েছে। কূপটি থেকে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে কূপটি খনন করেছে গ্যাজপ্রম। ৩৫১৯ মিটার খনন শেষ হয়েছে। কূপটি থেকে পাইপলাইনের দূরত্ব ৩ দশমিক ১৭ কিলোমিটার। মজুদ বিবেচনায় এখানে ৩০-৩১ বছর গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে। তবে এই গ্যাস ব্যবহারের জন্য দুই বছর সময় লাগতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোলার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে আনার পরিকল্পনা নিয়েছি। পাইপলাইন করার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। ইলিশা-১ এবং ভোলা নর্থ-২ কূপও খনন করা হবে। এখান থেকে আগামী জুনে আরও ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে।