সরকারদলীয় লোকদের কারণেই ডলার সংকট বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। দাবি করেছেন, পকেট ও ভ্যানিটি ব্যাগ হাতড়ালেই পাওয়া যাবে আমেরিকার এই মুদ্রা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বিএনপি নেতা এও বলেছেন যে, দেশের প্রতি তার দরদ নেই। সব দরদ ছাত্রলীগ-যুবলীগ আর স্বজনদের প্রতি।
চার মামলায় দণ্ডিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরেক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের বিক্ষোভে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, মানুষের হাতে টাকা নেই। তো টাকা গেল কোথায়? রিজার্ভ তলানিতে কেন। চাল-ডাল, আটা, তেল কিনতে ডলার নেই কেন? এই ডলার গেল কোথায়। আমরা যদি আপনাদের লোকের পকেট ও ভ্যানিটি ব্যাগ হাতড়াই তাহলে ডলার মিলবে।’
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে সামিট গ্রুপকে কত টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়েছে জানতে প্রধানমন্ত্রীকে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই সংকটের দিকে কে ঠেলে দিয়েছে। আপনি দিয়েছেন। কারণ আপনার দেশের প্রতি দরদ নেই। আপনার দরদ ছাত্রলীগ-যুবলীগ আর আপনার স্বজনদের প্রতি। তা না হলে তো গণভবনের পুকুরে চিতল মাছ ধরে নিজের বোনকে দেখাচ্ছেন যে দেশে কোনো সংকট নেই। সেই মাছ খেয়ে কাটা ফেলে দেবেন রিকশাওয়ালার দিকে। এই হচ্ছে আপনার মানসিকতা।’
‘জনগণ এবার চূড়ান্ত আঘাত হানবে’
এই মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘জনগণ আপনার সিংহাসন ধরে টান দেবে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ, যুবলীগকে লেলিয়ে দিয়েছেন যাতে বিএনপির সমাবেশে লোকজন না হয়। তার পরও মানুষ হেঁটে, নদী সাঁতরে, সাইকেল নিয়ে চিড়ামুড়ি বেঁধে নছিমন-করিমন-ভটভটিতে করে সমাবেশে যাচ্ছে।
‘তিনি বাস বন্ধ করে দিলেন, অন্য যানবাহন বন্ধ করেও বিএনপির জনসভায় এত লোক হচ্ছে কেন? ৬৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বাগেরহাটের একজন। মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল অসুস্থ অবস্থায় রংপুরের সমাবেশে স্ট্রোক করে মারা গেছেন। এসব দেখে শেখ হাসিনা ভাবছেন, তিনি তো নড়বড়ে সিংহাসনে বসে আছেন। বিদেশি প্রভু ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দিয়ে সেই চেয়ারের চারটি খুঁটি ধরে রেখেছেন।’
‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চলছে’ বলে বিএনপিকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যেরও জবাব দেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘আমি বলব, ঘোলা পানিতে না। আপনাকে প্রকাশ্যে রাজপথে মানুষ মোকাবিলা করবে। তারা এখন ঐক্যবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ।
‘তাদের উদ্বেল অভিযাত্রায় মিছিলে মিছিলে আপনার পদত্যাগের ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে। আপনি আপনার প্রাসাদে কাসিমবাজার কুঠি নির্মাণ করেছেন। আপনি সেখানে বসে বিশ্বাসঘাতক ঘসেটি বেগমের ভূমিকা পালন করছেন।
‘আপনি দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্রকে হরণ করেছেন, ধ্বংস করেছেন। আপনি ঘসেটি বেগমের চেয়েও বড়। আপনার বিরুদ্ধে মানুষ প্রকাশ্যে মিছিলে স্লোগান দিচ্ছে। সে জন্যই মসনদকে উল্টে পড়া থেকে শেষবারের মতো ধরে রাখার চক্রান্ত করছেন।’
‘তারেক দূর থেকে জাতিকে সংগঠিত করছেন’
এমন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, এ কারণেই বিএনপি নেতাকে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করেছেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কত নিষ্ঠুর ও কত অমানবিক তার উদাহরণ হলো দেশনায়ক তারেক রহমানের সঙ্গে তার সহধর্মিণী, যার রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, তার নামেও মিথ্যা ও চক্রান্তমূলক মামলা দিয়েছেন।
‘কেন দিয়েছেন সেটা তিনিই জানেন। এই মামলা চক্রান্তমূলক ও মিথ্যা। জনদৃষ্টিকে ভিন্নদিকে নেয়ার মামলা। মসনদকে উল্টে পড়া থেকে শেষবারের মতো ধরে রাখার চক্রান্ত। কিন্তু এবার জনগণ চূড়ান্ত আঘাত হানবে।’
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় হেলেন জেরিন খান, নায়াবা ইউসুফ, শাহিনুর নার্গিস, মিসেস শামীমা রাহিমসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।