গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর বিভিন্ন এলাকায় ভোটের পরিস্থিতি দেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের বিশ্বাস জন্মেছে, ভোট নিয়ে মানুষের যে উৎসাহ ছিল, সেটি ফিরে এসেছে।
বুধবার উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ মিলিয়ে স্থানীয় সরকারের এক শটি এলাকায় ভোট দেখে এই মত প্রকাশ করেন তিনি।
সিইসি বলেন, 'সহিংসতা, উছৃঙ্খলতা বা ভোটচুরি বা কারচুপি; এ ধরনের কোনো দৃশ্য আমরা দেখিনি। এ ধরনের কোনো অভিযোগও পাইনি। আমরা এখানে পৌরসভার চারটা কেন্দ্র মনিটরিং করেছি।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত যেসব এলাকায় ভোটের ব্যবস্থা করেছে, তাতে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন ছাড়া বাকিগুলোতে তেমন কোনো গোলযোগ হয়নি। বরং কমিশন শুরু থেকেই বেশ কঠোর অবস্থানে ছিল।
প্রচার চলাকালে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর হামলা বা ভোট ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করার ঘটনায় ভোট স্থগিত করা হয়েছে, মামলা হয়েছে সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে। গাইবান্ধায় ইভিএমে পরিচয় শনাক্তের পর গোপন বুথে ভোটারের হয়ে ভোট দিয়ে দেয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ভোট চলাকালে নির্বাচন বাতিল হয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই ক্ষমতার প্রয়োগ হয়েছে।
এই কমিশনের অধীনে ভোটগুলো যেমন শান্তিপূর্ণ ছিল, তেমনি ভোটারের অংশগ্রহণও ছিল বেশ ভালো। এই কমিশন প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে ভোট পর্যবেক্ষণ করছে, যে দাবি আগের কমিশন প্রত্যাখ্যান করেছে।
বুধবারের ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে সিইসি বলেন, ‘প্রচুর লোক দাঁড়ানো, তারা সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিয়েছেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা একটা সংস্কৃতি যে ভোটাররা সংযমের সঙ্গে, ধৈর্যের সঙ্গে অনেক সময় দাঁড়িয়ে ওরা ভোট দিয়েছেন। এটা একটা শুভলক্ষণ। ‘এটা যদি ধরে রাখা যায়, তাহলে ভবিষ্যতেও ওদের যদি এনকারেজ (উৎসাহ) করা যায় ওরা ভোট দিতে যাবেন। ভোটের পরিবেশ আছে। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।’
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচনের ভোটও কমিশন ঢাকা থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানান তিনি।
মুন্সীগঞ্জে একটি এলাকায় ভোটের সময় গোলযোগ হয়েছে জানালে সিইসি বলেন, ‘সেটা কেন্দ্র থেকে বেশ দূরে। ওটা কী আমরা জানি না। আমাদের নির্বাচন কেন্দ্রে ও ভোটের এলাকায় কোনো রকম উছৃঙ্খলতা আমরা পাইনি।’
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তিন যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন পেয়ে কমিশন কী করছে- জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘প্রতিবেদন দুই দিন হলো পেয়েছি। ওটা নিয়ে আমরা বসতে পারিনি। কাজেই কিছুই এখনও বলতে পারব না। ওটা আলাদা করে দেখতে হবে। পরে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে।’
খালেদার ভোটে অংশগ্রহণ নিয়ে এখনই মন্তব্য নয়দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভোটে অংশ নিতে পারবেন কি না, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, এ বিষয়ে আগাম কিছু বলার নেই।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে দাঁড়ালে তখন আইনানুগভাবে খতিয়ে দেখা হবে, আগাম কিছু বলার নেই।’
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার ভোটে অংশ নেয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী ও তার আইনজীবীদের বক্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকেরা সিইসির কাছে এ নিয়ে জানতে চান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ায় বেগম খালেদা জিয়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।
তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা গণমাধ্যমে বলছেন, আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন বেগম জিয়া। তার মামলার ফায়সালা রাজপথেই হবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীর এমন বক্তব্যের কথা জানিয়ে সিইসির কাছে প্রশ্ন ছিল, বিএনপি নেত্রীর আসলে ভোটে অংশ নেয়ার সুযোগ আছে কি না।
জবাবে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর এখন দেব না। এটা যখন হবে দেখা যাবে। সবকিছু আইন অনুযায়ী হবে। এখন অ্যাডভান্স কোনো কথা বলতে পারব না।’
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা কী বলেছেন, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। যিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন। আপনি দাড়াঁন যে-ই দাঁড়ান আমরা তার বিষয়টি আইনানুগভাবে পরীক্ষা করে দেখব। আমাদের আইনের কিছু কাঠামো আছে। কেউ ভোট করতে চাইলে ওই কাঠামোর মধ্যে করতে হবে। আগাম কিছু বলাও ঠিক হবে না।
‘তিনি (খালেদা জিয়া) আদৌ নির্বাচনে দাঁড়ালে আমরা সেটা আইনানুগভাবে পরীক্ষা করে দেখব। এখানে আইনগত দিক অগ্রিম কিছু বলার নেই। সময় আসুক সব খতিয়ে দেখব। তখন সব জানাব। এখন এত আগে কোনো কথা বলা ঠিক নয়।’