বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে শঙ্কিত বিএনপি

  •    
  • ১ নভেম্বর, ২০২২ ২১:২৬

ফখরুল জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এই নিপীড়নকারী কর্তৃত্ববাদী, একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী সরকার যেভাবে অসংখ্য আলেম-ওলেমা ও মাদ্রাসার কিশোর ছাত্রদের হত্যা করেছে এবং পরবর্তী সময়ে অসংখ্য হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে অনেককে এখনও কারাগারে আটক রেখেছে এটা তারই স্বীকারোক্তি।’

বিএনপিকে হেফাজতের মতো দমন করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, সরকারপ্রধানের এই উক্তি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিরোধী দলের সংবিধানসম্মত গণতান্ত্রিক কর্মসূচিগুলোকে বাধাগ্রস্ত করার হুমকি।

গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। মঙ্গলবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অবস্থান জানান।

গত শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় উপস্থিত নেতাদের সূত্র দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে বাধা দেয়া হবে না। তবে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে যেভাবে দমন করা হয়েছিল, বিএনপিকেও সেভাবে দমন করা হবে।’

গত শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হয়। ছবি: পিআইডি

ফখরুল জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এই নিপীড়নকারী কর্তৃত্ববাদী, একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী সরকার যেভাবে অসংখ্য আলেম-ওলেমা ও মাদ্রাসার কিশোর ছাত্রদের হত্যা করেছে এবং পরবর্তী সময়ে অসংখ্য হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে অনেককে এখনও কারাগারে আটক রেখেছে এটা তারই স্বীকারোক্তি।’

তিনি বলেন, ‘এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের হয়রানি, মিথ্যা মামলা এবং নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। ইতিপূর্বেও বিএনপি এই ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ও প্রতিবাদ করেছে। শেখ হাসিনার এই উক্তির কারণে দেশে পুনরায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের আইনসম্মত কর্মসূচি বানচাল করার চক্রান্ত বলে প্রতীয়মান হয়।’

২০১৩ সালের ৫ মে ১৩ দফা দাবি নিয়ে মতিঝিলেন শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। সেই রাতে তাদের উৎখাতে অভিযান চালায় র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি। সেই অভিযানে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

তবে পরে এসব গুঞ্জনের সত্যতা পাওয়া যায়নি। অধিকার নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন ৬২ জনের মৃত্যুর তথ্য দিলেও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। সেই তালিকায় মৃত অনেককে জীবিত পাওয়া যায় আর হেফাজতের পক্ষ থেকেও কোনো তালিকা দেয়া হয়নি। হেফাজতে ইসলাম সেই রাতে আর হত্যাযজ্ঞের অভিযোগ এখন করেই না।

ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নির্মম হামলা ও হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বেও দাবি করেছে এবং পুনরায় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছে।

‘সভা এই অনির্বাচিত সরকারকে জনগণের সংবিধানসম্মত সকল কর্মসূচিতে কোনো বাধা প্রদান না করার আহ্বান জানায়। অন্যথায় সকল দায়দায়িত্ব সরকারকে গ্রহণ করতে হবে।’

সভায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে সরকার বাধা দিচ্ছে অভিযোগ করা হয়। বলা হয়, বাস মালিক ও শ্রমিকদের দিয়ে সমাবেশের দুই দিন আগে পরিবহন ধর্মঘট করায় জনজীবনে অসহনীয় দুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

সরকার সমাবেশ পণ্ড করার উদ্দেশ্যে এই অনৈতিক, অসাংবিধানিক পথ বেছে নিয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘এটা সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকার ও সংবিধান লঙ্ঘন।’

বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী যে সতর্কতার কথা বলছেন, সেই বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উক্তি ‘সামনের বছর দুর্ভিক্ষ হতে পারে’ নিয়ে স্থায়ী কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভা মনে করে এই উক্তিতে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সরকার আপৎকালীন খাদ্য মজুত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে খাদ্যশস্য আমদানি গত চার মাসে প্রায় ৩৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এটা উদ্বেগজনক।’

তিনি বলেন, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তরের নজিরবিহীন দুর্নীতি, উদাসীনতা ও অযোগ্যতার কারণে খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখীন। একই সঙ্গে দুর্নীতির কারণে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয়ের ফলে ডলার-সংকটে আমদানির জন্য এলসি খুলতে না পারায় আমদানিকে ব্যাহত করছে।

‘রিজার্ভ থেকে অনৈতিকভাবে ডলার সরিয়ে নেয়া, প্রবাসীদের আয় বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশ থেকে বিদেশে হুন্ডি করে প্রতিবছর ৭-৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করে এই পরিস্থিতিকে জটিল করে ফেলেছে।’

সার, বীজের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ ও ডিজেলের অভাবে সারা দেশে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে দাবি করে খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি নেতা। লোডশেডিংয়ের কারণে সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য সরকারকে দায়ী করে সব দায় নিয়ে পদত্যাগের আহ্বানও জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।

জ্বালানির অভাবে প্রায় ৩৮.৭২ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জেনারেটর অচল হয়ে গেছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘সভা মনে করে, দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও অব্যবস্থাপনা সমগ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে ফেলেছে। সরকারি হাসপাতালগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে চিকিৎসকের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না গ্রামীণ জনগণ। বেসরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত ব্যয় ও অব্যবস্থাপনা স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সারা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর