নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলার চাঞ্চল্যকর রাজীব হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নিশ্চিত হয়েছে, মাদক কারবারে সহযোগিতা না করার জেরেই ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করা হয় তাকে।
এই কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিলেন মোট ৮ জন। এদের মধ্যে গত দুই দিনে দুজনসহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পিবিআইয়ের নেত্রকোণা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এ সময় সংস্থাটির পরিদর্শক অভিরঞ্জন দে ও জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, গত বছরের ৭ মে মোহনগঞ্জ উপজেলার ভাটিয়া গ্রামের শেখ ইসলামের পুকুর থেকে রেজাউল করিম রাজীবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাজীব ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। তার বাড়ি একই উপজেলার দেওথান গ্রামে।
এই ঘটনার দুই দিন পর রাজীবের বাবা বাচ্চু মিয়া মোহনগঞ্জ থানায় ১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হলেও কেউ হত্যার দায় স্বীকার করেননি। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয় পিবিআই।
তদন্তে পিবিআই নিশ্চিত হয়, মোহনগঞ্জের হাটনাইয়া গ্রামের ইয়াবা কারবারি মিজানুর রহমান, মাহবুব ও আবুল হোসেন এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। তারা রাজীবের মোটরসাইকেলে এলাকায় ইয়াবা আনা-নেয়া করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজীব তাতে রাজি হননি। এতে তারা রাজীবের প্রতি ক্ষুব্ধ হন।
এ ঘটনার জের ধরে রাজীবকে মেরে ফেলার জন্য একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন দিলুকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দেয়া হয়। ওই টাকার বিনিময়ে দিলুসহ ৮ জন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। বাকি সাতজন হলেন মোহনগঞ্জের হাটনাইয়া গ্রামের মিজানুর রহমান, মাহবুব, আবুল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, যতন মিয়া, কলমাকান্দার শুক্কুর ও ময়মনসিংহের তারাকান্দার নলদীঘি গ্রামের সিরাজুল।
তারা রাজীবকে প্রথমে পরিকল্পিভভাবে ভাটিয়া গ্রামের শেখ ইসলামের পুকুর পাড়ে নিয়ে যান। পরে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে সিমেন্টের জমাটবাঁধা পাথরের সঙ্গে বেঁধে মরদেহটি পুকুরে ফেলে দেয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক জাকির হোসেন বলেন, ‘ওই পুকুরের পাহারাদার যতন মিয়াকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হলে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং হত্যায় জড়িতদের নাম বলেন। তার দেয়া তথ্যে সোমবার রাতে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে দেলোয়ার হোসেন দিলু ও মঙ্গলবার সকালে হাটনাইয়া গ্রাম থেকে মাহবুবকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার দুপুরে দিলুও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির বলেন, ‘অন্য আসামিদেরও দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’