খুলনায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাহাসের ঘটনায় তিন আইনজীবীকে তলব করেছে হাইকোর্ট।
২২ নভেম্বর এই তিনজনকে হাইকোর্টে হাজির হয়ে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
তিন আইনজীবী হলেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, শেখ নাজমুল হোসেন ও শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।
আদেশের পাশাপাশি তিন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
গত ২২ সেপ্টেম্বর খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবী বিরুদ্ধে অশুভ আচরণের অভিযোগ জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বরাবর চিঠি দেয়া হয়।
সেই চিঠিতে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়, “গত ২ সেপ্টেম্বর একটি মোকদ্দমায় আইনজীবী পিযুষ কান্তি দত্ত জেরা করছিলেন। সে সময় খুলনা সাইফুল ইসলাম শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু, শেখ নাজমুল হোসেন, জেসমিন পারভিন, এম এম সাজ্জাদ আলী, এস এম তারিক মাহমুদ তারা (সাধারণ সম্পাদক), সুস্মিতা, সাদিক সাদ, মিল্টন বাগচী, রাজুসহ একাধিক আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন এবং সামনে দাঁড়িয়ে গুঞ্জন করতে থাকেন। তখন বিচারক বলেন, ‘আপনারা বসেন’। কিন্তু তারা তার কথায় কর্ণপাত না করে তাদের মতো গুঞ্জন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বারের সভাপতি সাইফুল ইসলাম কৈফিয়ত তলবের সুরে বলেন, ‘আমরা একটা মোকদ্দমায় উভয়পক্ষ সময়ের দরখাস্ত করেছিলাম, আপনি সেই দরখাস্ত না-মঞ্জুর করেছেন। এরপর জিপি সাহেব হাতে লেখা দরখাস্ত দিয়েছেন। তারপর সাক্ষী হয়েছে। পরে আমরা সময়ের দরখাস্ত দিলে তাও নেয়া হয়নি। কেন নেয়া হয়নি এবং সময়ের দরখাস্ত কেন নামঞ্জুর করলেন, আমাকে বলতে হবে’।”
এ সময় তখন বিচারক বলেন, “‘সভাপতি সাহেব আপনি এভাবে আমার কাছে জানতে চাইতে পারেন?’ উনি বলেন, ‘কীভাবে পারি। কোনভাবে জানব, বলেন’। বিচারক তখন বলেন, `আপনি আমার কাছে সময়ের আবেদন করছেন। আমি না-মঞ্জুর করছি। আদেশে কারণ দেখে নেবেন। কিন্তু আপনি আমার কাছে এখন কৈফিয়ত তলব করলে তো হবে না।‘ তখন আইনজীবী বলেন, ‘কৈফিয়ত চাচ্ছি তো। কারণ আপনি যখন টাকা নিয়ে, ঘুষ নিয়ে অবৈধভাবে সিদ্ধান্ত দেন, সেটার তো জবাব আমরা চাই না’।”
একপর্যায়ে বিচারককে উদ্দেশ করে সভাপতি বলেন, ‘আগামী রোববার থেকে কোর্ট বয়কট। আমরা মিডিয়ার সামনে প্রমাণ করব আপনি দুর্নীতিবাজ। আপনার বিরুদ্ধে যা যা করার দরকার আমরা করব। আপনার যা করার আছে, আপনি করেন।’
এ অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য গত ২৫ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। এরপর মঙ্গলবার বিষয়টি আমলে নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনে তিন আইনজীবীকে তলব করে আদেশ দেয় হাইকোর্ট।