যে মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ জারি হয়েছে, সে মামলাকে ভিত্তিহীন দাবি করেছে বিএনপি। দলটির দাবি, তাদের রাজনীতি থেকে সরাতে এই পরোয়ারা জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকার একটি আদালত এই পরোয়ার জারির পর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এই পরোয়ানা।…সরকার মামলাকে অস্ত্র হিসেবে নিয়েছে বিরোধী রাজনীতিকে দমন করার জন্য।’
ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে আসেন গত ৩১ অক্টোবর দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে। তবে কথা বলেন বেশি এই মামলা নিয়ে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের নেতা তারেক রহমান সাহেব ও তার সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ারা জারি করা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নাই। আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য এসব মামলা করেছে। উদ্দেশ্য একটাই, এই সমস্ত মামলা করে তাদের মূলত বাংলাদেশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা, রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার একটা প্রচেষ্টা মাত্র।
‘আমরা এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে আসবেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘সেটা সময়ই বলে দেবে।’
‘বিএনপিকে নির্মূল করা যাবে না’বিএনপিকে নির্মূল করা সরকারের লক্ষ- এমন অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘সেই কারণে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ারি জারি করছে….। কিন্তু করলে কী হবে? মানুষ তো বিএনপিকে চায়। বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে মানুষের রাজনীতি।
‘আপনারা নিজেরাই দেখেছেন যে, এত অত্যাচার নির্যাতনের পরেও, আমি নিজে যে কথা প্রায় বলি যে, ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠে বিএনপি। এটা কিন্তু রোধ করার কোনো উপায় নেই। কারণ, ইটস অ্যা পিপলস পার্টি, বিএনপি হচ্ছে জনগণের দল। এখানে শত চেষ্টা করেও বিএনপিকে নির্মূল করা যায় না।’
‘জেলে দিয়ে কি এই আন্দোলন রোধ করা যায়?- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটা সরকারি দলের বেশি জানা উচিত। তাদের নেতাদের পাকিস্তান রোধ করতে পেরেছিল, পারেনি। পারা যায় না।
‘আজকে দুর্ভাগ্য আওয়ামী লীগ সেই পাকিস্তানি শাসকদের মতোই বিহেব করছে। এই কথা বললে আবার তাদের গায়ের মধ্যে লাগে আর কী।’
‘আপৎকালীন খাদ্য মজুতে সরকার ব্যর্থ’বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী যে সতর্কতার কথা বলছেন, সেই বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উক্তি ‘সামনের বছর দুর্ভিক্ষ হতে পারে’ নিয়ে স্থায়ী কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভা মনে করে এই উক্তিতে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে সরকার আপৎকালীন খাদ্য মজুত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে খাদ্যশস্য আমদানি গত চার মাসে প্রায় ৩৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এটা উদ্বেগজনক।’
তিনি বলেন, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তরের নজিরবিহীন দুর্নীতি, উদাসীনতা ও অযোগ্যতার কারণে খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখীন। একই সঙ্গে দুর্নীতির কারণে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয়ের ফলে ডলার-সংকটে আমদানির জন্য এলসি খুলতে না পারায় আমদানিকে ব্যাহত করছে।
‘রিজার্ভ থেকে অনৈতিকভাবে ডলার সরিয়ে নেয়া, প্রবাসীদের আয় বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশ থেকে বিদেশে হুন্ডি করে প্রতিবছর ৭-৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করে এই পরিস্থিতিকে জটিল করে ফেলেছে।’
সার, বীজের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ ও ডিজেলের অভাবে সারা দেশে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে দাবি করে খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি নেতা। লোডশেডিংয়ের কারণে সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।