ইতালি পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন পিরোজপুরের নাজিপুরের সফিকুল ইসলাম ওরফে শফিউল্লাহ শেখ। এর জন্য বাদশা নামে একজনের সঙ্গে ১৩ লাখ টাকা চুক্তি করেন তিনি।
ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ার বেনগাজিতে নিয়ে তাকে অপরহণ করা হয়। সেখানে তাকে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতনের পর ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
এভাবে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার শফিউল্লাহ শেখ শফিক জানান, তিনি ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ৭ লাখ টাকা দেন মানব পাচারকারী একটি চক্রের হাতে। ওই চক্রের সদস্যরা তাকে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে দুবাই পাঠান, সেখান থেকে তাকে তারা সিরিয়া হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘দুবাই এয়ারপোর্ট আমাদের ৭ জনকে রাজিবের সহযোগী সবুজ নামে একজন একটি বাসায় নিয়ে যান। সেখান থেকে আমাদের ৪২ জনকে তারা সিরিয়ায় নিয়ে যায়। সেখানে আমরা তিন দিন খাবার খেতে পারি নাই। সেখান থেকে আমাদের লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়।
‘লিবিয়ার বিমানবন্দর থেকে একটু দূরে বেনগাজিতে একটি বাসায় নিয়ে যায়। ওরা আমাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে রাজিবের ভগ্নিপতি সুলতান এবং অন্যরা আমাদের নির্যাতন করে এবং ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। পরে পরিবারকে ফোন দিয়ে টাকা চায়। সময় যত যায়, আমাদের ওরা তত মারধর করতে থাকে।
‘পরে আমার ভগ্নিপতি দেশে পুলিশের সহয়তা নেন। লিবিয়া থেকে আমাকে ফেরত আনা হয়।’
শফিউল্লাহর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (তেজগাঁও) বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনাল টিম গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা এলাকায় অভিযান চালায়। এসব জায়গা থেকে ইউরোপ, ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্যে আন্তদেশীয় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত বাদশা ও রাজিব মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর-রশিদ বলেন, ‘রাজিবের আত্মীয় দুবাইতে অবস্থানকারী পাচারকারী চক্রের সদস্য সবুজ দুবাই এয়ারপোর্টে ভুক্তভোগীসহ আরও ২০ জনকে রিসিভ করে একটি বাসায় নিয়ে যান। দুবাই থেকে সিরিয়া হয়ে লিবিয়ার মিসরাত এলাকার একটি ক্যাম্পে বাদশা ও রাজিবের বোনজামাই সুলতানের নেতৃত্বে ভিকটিমকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।’
হারুন-অর রশিদ আরও জানান, ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করে মোবাইল ফোনে তার পরিবারের কান্না শুনিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার নিরুপায় হয়ে গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের শরণাপন্ন হলে যাত্রাবাড়ী থানায় মানব পাচার আইনে গত ২৭ অক্টোবর একটি মামলা করা হয়। গোয়েন্দা তেঁজগাও বিভাগ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের দেশীয় দুই সদস্য বাদশা ও রাজিব মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মাধ্যমে লিবিয়ায় অবস্থান করা সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের সদস্য সুলতানের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপহৃত সফিকুল ইসলামকে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আন্তদেশীয় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তারা দেশের বেকার যুবক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকদের ইতালি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাচার করে থাকে। এ চক্রের বিদেশে অবস্থান করা অন্য সদস্যদের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের অপহরণ করে ক্যাম্পে আটক রেখে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে ভিকটিমদের পরিবারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়।