বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নন-ক্যাডার প্রার্থীদের অবস্থান নিয়ে নীরব পিএসসি

  •    
  • ১ নভেম্বর, ২০২২ ১৭:৫৫

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নন-ক্যাডার চাকরিপ্রার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম পিএসসির চেয়ারম্যান অন্তত একবার বাইরে এসে আমাদের কথা শুনবেন। কিন্তু আজ অবস্থান কর্মসূচির তিন দিন হলেও চেয়ারম্যান তো দূরে থাক, পিএসসির নিম্ন পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাও আমাদের খোঁজ নেননি।’

টানা তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ৪০তম বিসিএস উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার চাকরিপ্রার্থীরা। বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) কাছে তাদের দাবি পেশ করলেও কোনো ফল নেই। গত দুই দিনেও তাদের অবস্থান কর্মসূচিস্থলে কোনো কর্মকর্তা আসেননি।

নন-ক্যাডার চাকরিপ্রত্যাশীরা তাদের ছয় দফা দাবি নিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় তৃতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। পিএসসির সামনে এই কর্মসূচির শুরুতে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশের সেই বাধা ডিঙিয়ে তারা পিএসসির প্রধান দুই ফটকের মাঝখানে অবস্থান নেন।

চাকরীপ্রত্যাশীরা বলেন, অবস্থান কর্মসূচির তিন দিন হয়ে গেলেও পিএসসির কোনো কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলেননি। তাদের কোনো আশ্বাসও দেয়া হয়নি। সকালে তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করলেও পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে তাদের দুজন আন্দোলনকারী আহত হন।

পিএসসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন কথা বলতে এসেছিলেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা। তিনি চাকরিপ্রার্থী আন্দোলনকারীদের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে যান। এক মিনিট কথা বলার কথা বলে ওই ব্যক্তি বরং উল্টো দুই মিনিট ধমকাধমকি করে যান। পরে আন্দোলনকারীরা জানতে পারেন যে ওই ব্যক্তি পিএসসির কেউ নন।

নিউজবাংলা পিএসসির কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নন-ক্যাডার চাকরিপ্রার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম পিএসসির চেয়ারম্যান অন্তত একবার বাইরে এসে আমাদের কথা শুনবেন। কিন্তু আজ অবস্থান কর্মসূচির তিন দিন হলেও চেয়ারম্যান তো দূরে থাক, পিএসসির নিম্ন পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাও আমাদের খোঁজ নেননি।’

এর আগে সোমবার বিকেলে পিএসসি চেয়ারম্যান অফিস শেষ করে বের হলে আন্দোলনকারীরা তার গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। পরে আন্দোলন সমন্বয়কদের সিদ্ধান্তে চেয়ারম্যানের গাড়ি বের হতে দেয়া হয়।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অবস্থানের পর নতুন আন্দোলন কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান নন-ক্যাডার প্রার্থীরা।

এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহরাব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। অবস্থানকারীদের বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সেই বিষয়ে জানতে চেয়ে বার্তা পাঠালেও কোনো জবাব মেলেনি।

পিএসসির সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়াটসঅ্যাপ-এ বার্তা দিলেও কোনো জবাব দেননি।

আন্দোলনের শুরু

পিএসসি বিসিএস নন-ক্যাডার পদের বিষয়ে নতুন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বিপক্ষে গত ৬ অক্টোবর ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার এবং ৪১ থেকে ৪৪তম বিসিএস চাকরিপ্রার্থীরা পিএসসির সামনে একটি মানববন্ধন করেন।

এর ধারাবাহিকতায় ১৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এই সমাবেশে চাকরিপ্রার্থীরা ৬ দফা দাবি তুলে ধরে তা পূরণে পিএসসিকে ৫ কর্মদিবসের আল্টিমেটাম দেন।

এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে দেশের ৮ বিভাগের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের চাকরিপ্রার্থী ছাত্রসমাজ ২০ অক্টোবর একযোগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে ২৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে আল্টিমেটামের মেয়াদ আরও ৬ দিন (২৯ অক্টোবর পর্যন্ত) বাড়ানো হয়। এরপরও কোনো সাড়া না পাওয়ায় ৩০ অক্টোবর থেকে পিএসসির সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

কেন এই আন্দোলন

৪০তম বিসিএস সবচেয়ে দীর্ঘ সময় পার করা বিসিএস। ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এর সার্কুলার হয় এবং চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হয় ৩০ মার্চ ২০২২ সালে। চূড়ান্ত ফল প্রকাশের ৬ মাস পার হলেও নন-ক্যাডারের কোনো তালিকা এখনও প্রকাশ হয়নি।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত জমাকৃত পদগুলোতে পিএসসি ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে এবং ৪৫তম বিসিএস থেকে সার্কুলারে নন-ক্যাডার পদেরও উল্লেখ থাকবে।

আগের নিয়ম অনুযায়ী, বিসিএস পরীক্ষায় পাস করা চাকরিপ্রত্যাশীদের মেধার ভিত্তিতে পরবর্তী বিসিএসের ফল প্রকাশ করার সময় পর্যন্ত নন-ক্যাডার শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হতো।

নতুন নিয়ম বিধির মধ্যে থাকলেও তা ৩৮তম বিসিএসে লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে দাবি চাকরীপ্রত্যাশীদের। তারা বলছেন, ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের আগে যেসব পদ খালি হয়েছে তা ৩৮তম বিসিএস প্রার্থীদের দেয়া হয়েছে। একইভাবে তার আগেও এমন নিয়ম ছিল। তবে ৪০ বিসিএসের সার্কুলারের পর যেসব পদ ফাঁকা হয়েছে তা পরবর্তী বিসিএসের সার্কুলারের আগ পর্যন্ত ধরা হলে সেটির দাবিদার ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীরা। কিন্তু নতুন চেয়ারম্যান সেটি শুধু ৪০তম বিসিএসে সীমাবদ্ধ না রেখে ৪১, ৪৩ ও ৪৪ তম বিসিএসের মধ্যে ভাগ করে দিতে চাইছেন।

৪০তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করা হয় ৩০ মার্চ। যেখানে ১ হাজার ৯৬৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাডার পদে সুপারিশ করা হয়নি এমন আট হাজার ১৬৬ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়।

চাকরিপ্রাথীরা বলছেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় সব নন-ক্যাডার পদ ৩৭তম বিসিএস যেটির সার্কুলার ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি হয়েছে তাদের দেয়া হয়েছে। এরপর ২০১৯, ২০২০, ২০২১ ও ২৯ মার্চ ২০২২ সাল পর্যন্ত খালি হওয়া নন-ক্যাডার পদগুলো দেয়া হয়েছে ৩৮তম বিসিএসের (সার্কুলার হয় ২০১৭ সালের ২০ জুন) নন-ক্যাডারদের।

নতুন চেয়ারম্যান আসার পর দুই নিয়ম

বিসিএস উত্তীর্ণ অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা প্রার্থীদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদপ্তরের অধিযাচনের ভিত্তিতে প্রাপ্ত নন-ক্যাডার শূন্যপদে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। নন-ক্যাডার সুপারিশের এই প্রক্রিয়া পরবর্তী বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করার আগ পর্যন্ত চলমান ছিল। ২৮তম বিসিএস থেকে ৩৮তম বিসিএস পর্যন্ত এই নিয়মেই পিএসসি নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ করে আসছে। সেখানে কোথাও নন-ক্যাডার পদের উল্লেখ ছিল না।

তবে নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন আসার পর ৩৮তম বিসিএস থেকে প্রায় ৩ হাজার ৩০২ জনকে এই নিয়মেই নিয়োগ দেয়া হয়। তবে পরবর্তী চারটি বিসিএসের ক্ষেত্রে তিনি নতুন নিয়মের কথা উল্লেখ করেছেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত না এলে নতুন এই নিয়ম বাতিলের দাবিতে আমরণ অমশনের ঘোষণা দিয়েছেন ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার চাকরিপ্রার্থীরা।

এ বিভাগের আরো খবর