বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিজ বাসায় বিএনপির চারবারের এমপির নিঃসঙ্গ মৃত্যু

  •    
  • ১ নভেম্বর, ২০২২ ১৫:০৭

গত ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের পর থেকে তিনি বাড়িতে একা ছিলেন। নেতাকর্মীরা জানান, সোমবার বিকেলেই বুকে ব্যাথা উঠেছিল মসিউরের। একজন চিকিৎসককেও দেখিয়েছেন। সকাল ৮ টার দিকে ব্যক্তিগত গাড়িচাকলকে বাসায় আসতে বলেন মসিউর। ৯ টার দিকে বাসায় গেলে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করেন। সাড়া না পেয়ে মই দিয়ে উপরে উঠে সোফায় অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান।

নিজের বাসায় নিঃসঙ্গ মৃত্যু হলো চারবারের সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মসিউর রহমানের।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত মসিউর যে মারা গেছেন, সেটি জানা গেছে মঙ্গলবার দুপুরে।

ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার বাসায় অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে এই রাজনীতিককে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক জানান, স্ট্রোকজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

৭৪ বছর বয়সী মসিউর স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক মেয়ে আছেন। তারা ঢাকায় থাকেন। তার স্ত্রী মাহবুবা রহমান শিখা একজন আয়কর আইনজীবী। এই দম্পতির বড় ছেলে ইব্রাহীম রহমান চিকিৎসক, ছোট ছেলে শোয়াইব রহমান আইনজীবী। মেয়ের নাম শামীম রহমান শিমু।

বিএনপি নেতা রাজনীতির পাশাপাশি পরিবহন ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। মাঝেমধ্যে ঝিনাইদহ এলে একাই আসতেন। কখনও কখনও তার স্ত্রীও আসতেন।

গত ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের পর থেকে তিনি বাড়িতে একা ছিলেন।

নেতাকর্মীরা জানান, সোমবার বিকেলেই বুকে ব্যাথা উঠেছিল মসিউরের। একজন চিকিৎসককেও দেখিয়েছেন।

তার গাড়ি চালক নাজমুল হাসান বাঁধন জানান, সকাল ৮টার দিকে অসুস্থতার কথা জানিয়ে দ্রুত তাকে বাসায় যেতে ডাকেন বিএনপি নেতা। সাড়ে ৮টার দিকে তিনি শহরের গীতাঞ্জলী সড়কের বাসায় এসে ডাকাডাকি করতে থাকেন।

সাড়ে ১১টার দিকে মসিউরের ছোট ভাই আসাদুজ্জামান, প্রতিবেশী ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শেখর, পাপপু সাহা ও ম্যানেজার বকুল হোসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকেন। তখন দেখা যায় সোফায় পড়ে আছেন বিএনপি নেতা।

ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গাড়িচালক দেখতে পান, সোফায় পড়ে আছেন বিএনপি নেতা। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানান, অনেকই আগেই মৃত্যু হয়েছে তার

ইজিবাইকে করে বিএনপি নেতাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতলে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ছোঁয়া ইসরাইল জানান, অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে তার।

মৃত্যুর খবরে নেতা-কর্মীরা এখন তার বাসভবনে ভিড় করছেন। শহরের ক্যাসেল ব্রিজ সংলগ্ন নতুন বাড়িতে ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বুধবার সকাল ১১টায় ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে বিএনপি নেতাকে সমাহিত করা হবে।

রাজনৈতিক জীবন

রাজনীতি জীবনের শুরুতে বামপন্থায় দীক্ষিত হয়েছিলেন মসিউর। পাকিস্তান আমলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নের যোগ দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের বিহার রাজ্যের চাকুলিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে করেন যুদ্ধ।

ঝিনাইদহ, হরিণাকুন্ডু, শৈলকুপা, কুষ্টিয়া ও আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা নেয়ার জন্যে ঝিনাইদহ আনসার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পালন করেন বিশেষ ভূমিকা।

জিয়াউর রহমান তার সেনা শাসনের সময় রাজনৈতিক দল গঠনের যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাতে যোগ দেন মসিউর। ১৯৭৭ সালে অল্প বয়সেই তিনি হরিণাকুন্ডুর চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির মনোনয়নে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যান।

১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে দুইবার যে ভোট হয়, তাতেও জেতেন এবং ২০০১ সালেও তিনি জয় পান। তবে ২০০৮ ও ২০১৮ সালে হেরে যান।

মসিউরের মৃত্যুর খবরে তার বাসভবনে নেতা-কর্মীদের ভিড় কমে

সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় মসিউর জাতীয় সংসদে হুইপ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটি ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির দায়িত্ব পালন করেন।

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায় বিসিএস নার্স ট্রেনিং সেন্টার, ঝিনাইদহ শহরে নাসিং ইনস্টিটিউট, সরকারি শিশু হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ম্যাটস, হেলথ টেকনোলজি, খাবার স্যালাইন ফ্যাক্টরি, ভেটেরিনারি কলেজ, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত, করোনারি কেয়ার ইউনিট, বিভিন্ন ইউনিয়নে একাধিক কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসা স্থাপনে তিনি রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুর্নীতির অভিযোগে মশিউর রহমানের নামে দূর্নীতি দমন কমিশন মামলা করে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে যশোরের বিশেষ জজ আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেয়। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান মসিউর।

এ বিভাগের আরো খবর