দরিদ্র মানুষের কাছে কম দামে চাল বিক্রিতে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে উপকারভোগীদের মাপে কম দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফরিদপুরে খাদ্যগুদাম ও ডিলারদের বিরুদ্ধে কেজিপ্রতি ১৫ টাকায় ৩০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও গুদাম থেকে আনা বস্তায় চাল কম জানিয়ে উপকারভোগীদের দেয়া হচ্ছে ২৮ থেকে ২৯ কেজি।
গুদাম থেকে আনা বস্তায় চাল কম থাকে জানিয়ে তিনজন ডিলারের অভিযোগ পাওয়ার পর বস্তা মেপে দেখা গেছে, অভিযোগ সত্য। তবে সরকারি যে গুদাম থেকে চাল সরবরাহ করা হয়, তারা কেউ দায় নিচ্ছেন না। তারা বলছেন, ডিলাররা ওজন দিয়ে চাল বুঝে নেবে। এরপর কিছু হলে তার দায় তাদের নয়।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সদরের খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ও ডিলারদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে। একে অপরকে দুষছেন তারা। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দোষারোপ করার মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে গরিবের চাল সরাচ্ছে কে?
এই কর্মসূচিতে ফরিদপুর সদর উপজেলায় ৪০ জন ডিলারের আওতায় ২০ হাজার ৭১২ জন কার্ডধারী রয়েছে। একজন ডিলার প্রবাসে চলে যাওয়ায় এবং অন্য আরেকজন মারা যাওয়ায় ৩৮ জন ডিলারের মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে এ চাল।
বছরে পাঁচ মাস এই সুবিধা পেয়ে থাকেন ভোক্তারা। মার্চ, এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর মাসে খোলাবাজারে এ কর্মসূচির চাল বিক্রয় করা হয়। এর আগে এ কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা দরে চাল পাওয়া যেত। গত বাজেটে দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে। বিক্রি শুরু হয়েছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে।
বৃহস্পতিবার ফরিদপুর সদরের কয়েকজন ভোক্তার কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে অনিয়মের প্রমাণ মেলে।
ঈশানগোপালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর বাজারের ক্ষিতিশ বিশ্বাসের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ৩০ কেজির জায়গায় ২৮ কেজি চাল দেয়া হচ্ছে। ৫০ কেজি ওজনের কয়েকটি বস্তা ওজন করে দেখা যায়, কোনো কোনো বস্তায় ৪৫ কেজি, কোনো বস্তায় ৪৬ কেজি, কোনো বস্তায় ৪৭ কেজি চাল আছে।
ক্ষিতিশ বিশ্বাস বলেন, ‘প্রায় বস্তায় চাল কম রয়েছে, এ জন্য আমি কার্ডধারীদের বলেই ২৮ কেজি করে চাল দিচ্ছি। অম্বিকাপুর খাদ্যগুদাম থেকে এভাবেই আমাদের চাল দিয়েছে, যেখানে বস্তাপ্রতি চাল কম রয়েছে ৩ থেকে ৫ কেজি করে। এই চালগুলোর ঘাটতি আমি কোথায় পাব? এত মালের শর্টের (কম) ঘাটতি পূরণ করতে না পারলে অনেক কার্ডধারীকে চাল দিতে পারব না। বিষয়টি আমি অম্বিকাপুর খাদ্যগুদামের সারোয়ার নাম করে একজনকে বলেছি, ফুড অফিসেও বলেছি। ৪০ জন ডিলারের মধ্যে আমার একার কথা তারা গ্রাহ্য করে না।’
একই ইউনিয়নের পিঠাকুমরা বাজারের ডিলার এস এম সুলতানের দোকানেও একই চিত্র পাওয়া যায়। তারা স্বীকারও করেন ভোক্তাপ্রতি ২৮ থেকে ২৯ কেজি চাল দেয়া হচ্ছে। এখানেও ৫০ কেজি ওজনের বস্তায় চাল কম পাওয়া যায়। এ সময় এক কর্মচারী জানান, একটি বস্তায় ৪১ কেজিও পাওয়া গেছে।
সুলতানের ব্যাবসায়িক অংশীদার ওসমান হোসেন জানান, প্রতি ১০টা বস্তার মধ্যে পাঁচটি বস্তায় ৩ থেকে ৫ কেজি করে চাল কম পাওয়া যায়। এই ঘাটতি পূরণ করার জন্য তারা ২৮ থেকে ২৯ কেজি করে চাল দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে অম্বিকাপুর খাদ্যগুদামের এসএমও মুশফিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খাদ্যবান্ধবের চাল তা ডিলাররা নিজ জিম্মায় বুঝে নিয়ে যান। এখানে থেকে মাল গেটের বাইরে গিয়ে কিছু হলে সে দ্বায়ভার আমাদের না। যার মাল সে নিজে বুঝে নেবে এটা তার দায়িত্ব।’
খাদ্যগুদামের দুই নিরাপত্তা প্রহরী লিটন ও সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা তাদের ওজন দিয়ে মাল বুঝিয়ে দেই। যেটা কম হয়, সেটা তারা নেয় না। মাল যে কোথায় কম হইতেছে, কেন কম হইতেছে- এটা আমরা বলতে পারি না।’
সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তারেক রহমান বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অধিকার আছে শতভাগ মাল বুঝে নেয়ার এবং স্পটেই তাদের বুঝে নিতে হবে। বস্তা ছেঁড়া-কাটা থাকলে সেটাও সেলাই করে দিতে বাধ্য। ডিলাররা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যদি কম দেয় এবং আমরা যদি অভিযোগ পাই তাহলে ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী বলেন, ‘বিষয়টি আমি খাদ্য কর্মকর্তাদের বলব এবং অভিযোগ তদন্তে প্রমাণ হলে ডিলারদের ডিলারশিপ বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’