৬০ বছর বয়সেও গত ১২ অক্টোবর বিকেলে বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়েছিলেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার ইসমাইল হোসেন। কিন্তু রাত ১০টার দিকে ফোন করে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পায় পরিবারের লোকজন।
পরে সারা রাত খুঁজাখুঁজি করেও ইসমাইলকে পাওয়া যায়নি। সকালে তারা জানতে পারেন, চাটমোহরের ফৈলজানা মিশন স্কুলের পাশে ধানক্ষেতে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ পড়ে আছে।
পরিবারের সদস্যরা সেখানেই ছুটে গিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ইসমাইলের মরদেহটি চিহ্নিত করেন। তবে তার অটোরিকশাটি কোথাও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে পরে তারা মামলা করেন।
চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর সেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ছিনতাই করা অটোরিকশাটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- চাটমোহর উপজেলার পবাখালি গ্রামের ২২ বছর বয়সী আতিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার শিমুলতলির বাসিন্দা ২২ বছরের মুক্তা প্রামাণিক ও চাটমোহরের দিমুনিয়া গ্রামের ৩২ বছর বয়সী আনিছুর রহমান।
পুলিশ সুপার জানান, মামলার সূত্র ধরে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনাসহ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামিদের ঢাকা ও গাজীপুর থেকে আটক করা হয়। এ অভিযানে পুলিশের একটি চৌকস দলের নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম ও সজীব শাহরীন।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, ফরিদপুর জেলায় কৃষিকাজ করতে গিয়ে সাদ্দামের সঙ্গে পরিচয় হয় মুক্তা প্রামাণিকের। পরে তারা অপর অভিযুক্ত আতিকুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় পাবনা জেলার টেবুনিয়ায় গিয়ে তিনজন একত্রিত হন এবং একটি অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন।
সেখান থেকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আটঘরিয়ায় এসে তারা অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ও দুর্বল অটোরিকশা চালক খুঁজতে থাকেন। এ সময় তারা অটোরিকশা চালক ইসমাইলকে টার্গেট করেন এবং বেশি ভাড়ার কথা বলে অপেক্ষাকৃত নির্জন এলাকা চাটমোহরের ফৈলজানা মিশন স্কুলের উদ্দেশে রওনা হন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, অটোরিকশার পেছনের সিটে বসেন আতিকুল ও মুক্তা। সাদ্দাম বসেন চালক ইসলামাইলের বাম পাশে।
রাত আনুমানিক রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর অটোরিকশা থেকে নেমে ইসমাইলকে পেছন থেকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরে মাটিতে ফেলে দিয়ে বুকের ওপর চেপে বসেন সাদ্দাম। এ সময় ইসমাইলের দুই হাত বেঁধে ফেলেন মুক্তা এবং দুই পা বাঁধেন আতিক।
এভাবে শ্বাসরোধ করে ইসমাইলকে হত্যার পর পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেতে ফেলে দেন তারা। পরে ইসমাইলের অটোরিকশাটি নিয়ে তারা সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে যান। সেখানে রাতেই দরদাম করে অটোরিকশাটি ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে যে যার মতো চলে যান।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপর আসামি ফরিদপুরের ২২ বছর বয়সী সাদ্দামকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।