আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপি মহাসাচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আমন্ত্রণ জানিয়ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে উপস্থিতি নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের পর জনসমাবেশ কাকে বলে, সেটি দেখিয়ে দিতে ২৯ অক্টোবর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কথা তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দলের নেতা এ-ও বলেছেন, মির্জা ফখরুলের মুখের দিকে এখন তাকানো যায় না।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সভাপতিত্ব করেন। এ সময় চৌদ্দ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ২২ হাজার হাজার চেয়ার ছিল বলে মির্জা ফখরুল যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি নিয়েও জবাব দেন কাদের। বলেন, ‘ফখরুল সাহেব দূরবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে দেখেন নাকি? …আমি চ্যালেঞ্জ করছি, ৭০ হাজার চেয়ার সেখানে ছিল। মিথ্যা কথা বলবেন না।
‘নিজেরা কয়েকটা সমাবেশ করে লাফালাফি শুরু করেছেন। এখন মুখ কালা কেন? মোকাবিলার ভয়ে মুখ কালা। মির্জা ফখরুলের দিকে তাকানো যায় না। রংপুর থেকে ঢাকার খবর পেয়ে উনার মনটা বড় খারাপ।’
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের ঘোষণা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা বলেন, ‘আপনাদের ঢাকায় ১০ লাখ লোক টার্গেট? ৪ তারিখ চট্টগ্রামে ১০ লাখ লোক দেখে আসবেন। সেদিন চট্টগ্রাম জনতার মহাসমুদ্র হয়ে যাবে। সেদিন চট্টগ্রামে আপানাকে দাওয়াত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।’
কোন মুখে বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় সেই প্রশ্ন রেখে কাদের বলেছেন, ‘কী করেছেন তার মুক্তির জন্য? নেতা বানাবেন কাকে? হাওয়া ভবনের যুবরাজকে? আর রাজনীতি করবে না বলে প্রকাশ্যে মুচলেকা দিয়ে যে বিদেশ গিয়েছে? বিদেশে যে পালিয়েছে বাংলার মানুষ তাকে মেনে নেবে না। এই নাম শুনলেই লোকে ভয় পায়। আতঙ্কে শিউরে উঠে।’
‘শেখ হাসিনা হেরে গেলে হেরে যাবে বাংলাদেশ’
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বানও জানান কাদের। বলেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি এ দেশে আমাদের কেউ হারাতে পারবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরাই বিজয়ের বন্দরে পৌঁছে যাব।’
জাসদকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘১৪ দল, ইনু ভাই, আপনারা ঠিক থাকুন। ভুল ত্রুটি রাজনীতিতে আপনাদেরও আছে।’
শেখ হাসিনাকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিনিধি উল্লেখ করে কাদের বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা হেরে গেলে বাংলাদেশ হেরে যাবে। শেখ হাসিনা হারতে পারে না।’
জাসদের সমাবেশে ১৪ দলের নেতারা
তিনি বলেন, ‘আমরা পরাজয় মানি না। স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে আমরা পরাজিত হব? কেন বেঁচে আছি? কাজেই এই চোদ্দ দলীয় জোটকে আরও জোটকে শক্তিশালী করতে হবে। শেখ হাসিনা আপনাদের সঙ্গে আছেন এবং থাকবেন।‘
‘যারা বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে যারা রাজনীতি করে তারা আবারও ক্ষমতায় আসবে?- শ্রোতাদের উদ্দেশে এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন আওয়ামী লীগ নেতা।
এ সময় উপস্থিত সবাই ‘না’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠেন।
‘ফখরুলের টাকার বস্তার তথ্য কেন ব্যক্তিগত আক্রমণ’
মির্জা ফখরুল দুবাই থেকে আসা টাকার বস্তার ওপর বসে আছেন বলে কাদের যে বক্তব্য রেখেছেন, তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ বলে বিএনপি নেতা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি নিয়েও কথা বলেন কাদের।
তিনি বলেন, ‘এটা কেন ব্যক্তিগত আক্রমণ? আমি তাকে আক্রমণ করলাম? তিনি তো একটা দলের প্রতিনিধি। আমরা রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছি। ফখরুল সাহেব আরও বলেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে সামাল দিতে পারবেন না।’
জাসদের সমাবেশে দলের নেতা-কর্মীরা
রাজনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গের যে অভিযোগ বিএনপি নেতা এনেছেন, তারও জবাব দেন আওয়ামী লীগের নেতা। বলেন, ‘ফখরুল সাহেব, আপনার কাছ থেকে শিষ্টাচার শিখতে হবে না। আপনাদের কী শিষ্টাচার সেটি তো দেখেছি। সন্তান মারা গেছে। শোকাতর মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়েছেল প্রধানমন্ত্রী। যাকে আপনারা হত্যা করতে চেয়েছিলেন। ঘরের বাইরের সব গেইট বন্ধ। এই শিষ্টাচারও তো আপনারা দেখিয়েছেন।
‘আপনাদের শিষ্টাচার ২১ আগস্ট আর ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর। সেই ইতিহাস কি ভুলে গেছেন?’
১৫ আগস্ট জন্মদিন না হলেও দিনটিকে খালেদা জিয়ার জন্মদিন হিসেবে পালনের কথাও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এবারও আপানারা দোয়া মাহফিল করে তার জন্মদিবস পালন করেছেন। একটা মানুষের ছয়টা জন্মদিবস কী করে হয়? বেগম জিয়াকে আর কত তেল দেবেন? ১৫ আগস্টে যতদিন আপনারা এই দিবস পালন করবেন ততদিন আপনারা পিছিয়ে পড়বেন।’