বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে কিশোরের মৃত্যু

  •    
  • ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ১৮:০০

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার রাজিব মৈত্র বলেন, ‘রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ল্যাবরেটরি টেস্ট। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকার কারণে ঘটছে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তাদের রোগ নির্ণয়ের মেশিনপত্র ও উপাদানগুলোও মানসম্পন্ন নয়। বিষয়গুলোতে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।’

কুষ্টিয়ায় একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দেয়া ভুল রিপোর্টের কারণে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সদরের আমিন ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সোমবার দুপুরে সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মৃত কিশোরের বাবা।

মৃত মো. আজমিরের বয়স ১৩। সে সদর উপজেলার মাঝিলা গ্রামের আক্তার মণ্ডলের ছেলে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। অসুস্থ অবস্থায় গত শনিবার সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

তার বাবা আক্তার সিভিল সার্জনকে দেয়া অভিযোগে লিখেছেন, ২৩ অক্টোবর পেটে ব্যথার কারণে ছেলের চিকিৎসা করাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসক রুমন রহমান তার আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার পরামর্শ দেন।

আক্তার বলেন, ‘ওই দিনই ছেলেকে নিয়ে আমিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করাই। সেখানে রিপোর্ট আসে যে লিভারে ইনফেকশন হয়েছে। চিকিৎসক ওই রিপোর্ট দেখে ওষুধ লিখে দেন। ওষুধ খাওয়ার পর ব্যথা চলে গেলেও পেট ফুলতে থাকে। পেটের ওপরের দিকের ব্যথা নিচের দিকে করতে শুরু করে। আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যায়।

‘গত ২৬ অক্টোবর আবারও ছেলে আজমিরকে নিয়ে হাসপাতালে আসি। ওষুধে পেটের ব্যথা না কমায় চিকিৎসকের সন্দেহ হয় টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে। তাই আবারও করাতে বলেন। পরদিনই অন্য একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করালে রিপোর্টে আসে বার্স্ট অ্যাপেন্ডিক্স। তখন ডাক্তার আরও নিশ্চিত হতে আরও একটা ডায়াগনস্টিকে পাঠান। ওই রিপোর্টও একই রকম আসে- বার্স্ট অ্যাপেন্ডিক্স।’

আক্তার জানান, এ ঘটনার পর জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের জন্য আজমিরকে হাসপাতালে ভর্তি করান চিকিৎসক। সেদিনই অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু গত শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রুমন রহমান বলেন, ‘আমি প্রথম দিকে এই রোগীকে দেখেছিলাম। অনেক সময় রোগ হঠাৎ করে বেড়ে যায়, তখন ডায়াগনসিসে ধরা পড়ে। সব রোগীকে আমরা হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা করাতে বলি। কিন্তু রাত ১২টার পর এখানে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে রোগীরা বাইরে থেকে টেস্ট করায়।’

হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘রোগীর ক্লিনিক্যাল ফিচার দেখে প্রথমে অনুমান করা হয়। পরে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাবরেটরি টেস্ট দেয়া হয়। সে অনুসারে দেয়া হয় চিকিৎসা। তবে যদি রিপোর্ট ভুল হয়, চিকিৎসায় রোগীর সমস্যা হবেই।’

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার রাজিব মৈত্র বলেন, ‘রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ল্যাবরেটরি টেস্ট। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকার কারণে ঘটছে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তাদের রোগ নির্ণয়ের মেশিনপত্র ও উপাদানগুলোও মানসম্পন্ন নয়। বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।’

ভুল রিপোর্টের কারণে ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না পরিবারের সদস্যরা।

মা শাহানারা খাতুন বলেন, ‘ডাক্তারের কোনো দোষ নেই। আমিনের ভুল রিপোর্টের কারণেই আমার ছেলে মারা গেল। টেস্ট রিপোর্টের ব্যবসা করতে এত বড় ভুল করল যার জন্য আমার ছেলেকে হারাতে হলো।’

এ বিষয়ে আমিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জনসংযোগ কর্মকর্তা চঞ্চল হোসেন বলেন, ‘আমাদের রিপোর্ট ভুল হওয়ার কথা না। বিষয়টি সোনোলজিস্ট ডাক্তার রবিউল ইসলাম বলতে পারবেন।’

তবে রবিউল ইসলামকে ফোনে বা ওই প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায়নি।

জেলা সিভিল সার্জন আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এটি খুব গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর