বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গরিবের ভাতার ৫০০ টাকা ‘চেয়ারম্যানের পকেটে’

  •    
  • ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ১৫:৫৯

গিয়াস উদ্দিন নামে একজন জানান, প্রতি ছয় মাস পর পর তিনি বয়স্ক ভাতার তিন হাজার টাকা পান। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পরে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বলেন ৫০০ টাকা কম নিতে হবে। জানতে চাইলে সেই ব্যক্তি বলেন, এই ৫০০ টাকা চেয়ারম্যানকে দিতে হবে। পরে চৌকিদারকে বিষয়টি জানান গিয়াস। তখন তাকে বলা হয়েছে, কিছুই করার নাই। শারীরিক প্রতিবন্ধী আবদুল খালেকও জানান, তার ভাতা থেকে ৫০০ টাকা কেটে নিচ্ছেন চেয়ারম্যান।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গরিবের ভাতা থেকে টাকা কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, ছয় মাস পর পর তিন হাজার টাকা করে যারা তুলতেন, তাদেরকে দেয়া হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা। বাকি পাঁচ শ টাকা চেয়ারম্যানের কথা বলে কেটে রাখা হয়। টাকা না দিলে ভাতার কার্ড না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে একাধিক।

সরকারি ভাতার উপকারভোগীরা ছাড়াও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন নির্বাচিত ইউপি সদস্যরাও। তারা জানিয়েছেন অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার সেই চেয়ারম্যানের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য।

ইউনিয়ন পরিষদের ৭ জন সদস্য একজোট হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন।

‘কেটে নেয়া হচ্ছে ভাতার ৫০০ টাকা’

নোয়াবাদ ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ঝাউতলা গ্রামের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী আয়েশা আক্তার বলেন, ‘অনেকদিন ধরে একটা বয়স্ক ভাতা কার্ডের লাগি চেয়ারম্যানের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। চেয়ারম্যান খালি কয় আজকে না কালকে। এইভাবে অনেকদিন ঘুরাইছে। যাদের টাকা আছে তারা একদিন গিয়েই কার্ড পাইছে।’

৭২ বছর বয়সী জরিনা আক্তার বলেন, ‘যারা চেয়ারম্যানর পাঁচশো-হাজার টেহা দিছে, হেরা একবার গেয়াই কাড পাইছে। আমার টেহা নাই, তিনবার গেয়াও কাড পাইছি না।’

৮ নং ওয়ার্ডের সিন্দীপ গ্রামের বাসিন্দা কাজলা বেগমের স্বামী মারা গেছে ১০ বছর। এখনও তিনি বিধবা ভাতার কার্ড পাননি।

তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের কাছে ম্যালাবার দেছি। হেয় কোনো পাত্তাই দেয় না। যারা টেহা দিছে, তারা কাড পাইছে।’

গিয়াস উদ্দিন নামে একজন জানান, প্রতি ছয় মাস পর পর তিনি বয়স্ক ভাতার তিন হাজার টাকা পান তিনি। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পরে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বলেন ৫০০ টাকা কম নিতে হবে। জানতে চাইলে সেই ব্যক্তি বলেন, এই ৫০০ টাকা চেয়ারম্যানকে দিতে হবে।

পরে চৌকিদারকে বিষয়টি জানান গিয়াস। তখন তাকে বলা হয়েছে, কিছুই করার নাই।

শারীরিক প্রতিবন্ধী আবদুল খালেকও জানান, তার ভাতা থেকে ৫০০ টাকা কেটে নিচ্ছেন চেয়ারম্যান।

‘স্বেচ্ছাচারী আচরণ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও’

অভিযোগে বলা হয়, প্রতি মাসে ইউপি সদস্যদের নিয়ে সভা করার কথা থাকলেও নোয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল গত আট মাসে সভা করেছেন দুটি। এ দুটি সভাতেও কোনো সদস্যের মতামত নেননি তিনি।

এছাড়া বিভিন্ন সনদ দিতে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত আদায়, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, ইউনিয়ন পরিষদের আয়ের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা না করে চেয়ারম্যান নিজে ব্যয় করার অভিযোগও করেছেন তারা।

শুক্রবার দুপুরে নোয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কে চেয়ারম্যানের অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধনও করেন স্থানীয়রা।

৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল জলিল বলেন, ‘নোয়াবাদ ইউনিয়নের ৭১টি বয়স্ক ভাতা কার্ডের বরাদ্দ আসে। চেয়ারম্যান কোনো সভা ছাড়াই এককভাবে সবগুলো নাম সমাজসেবা অফিসে জমা দেন। খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় হতে ১৬৫টি ওএমএস কার্ডের বরাদ্দ পাওয়া যায়। এটাও চেয়ারম্যান নিজের পছন্দমতো লোকদের দিয়েছেন।

‘কোনো সভা ছাড়াই সিদ্ধান্তর খাতায় তার ইচ্ছে মতো লিখে পরিষদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে যাচাই না করেই একক স্বাক্ষরে নিবন্ধন করে যাচ্ছেন তিনি।’

৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এনামুল হক বাচ্চু বলেন, ‘মোস্তফা কামাল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই একক স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের পথ বেছে নিয়েছেন।

‘তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আবদুল কুদ্দুস রনি ও আয়েশা আক্তারকে অপসারণ না করেই তার ভাতিজা মাহবুবুল আলম জয়কে বসিয়ে বাড়তি টাকা আদায় করছেন। এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করায় একাধিক ইউপি সদস্য গালি-গালাজ ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন।’

লিখিত অভিযোগে সই করেছেন ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো.জাহাঙ্গীর আলম, ৩ নং ওয়ার্ডের খোরশেদ আলম, ৬ নং ওয়ার্ডের মোঃ আব্দুল জলিল, ৭ নং ওয়ার্ডের সুন্দর আলী, ৮ নং ওয়ার্ডের এনামুল হক বাচ্চু, সংরক্ষিত ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য নাজমা আক্তার এবং ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য রোকেয়া আক্তার।

নাজমা আক্তার বলেন, ‘চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সরকারি বিধিমালা তোয়াক্কা না করে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে পরিষদ পরিচালনা করছেন। যারা তাকে ভোট দিয়েছেন সক সুযোগ-সুবিধা তাদেরকেই দিচ্ছেন। এতে করে চেয়ারম্যানের পছন্দের লোকজন ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’

রোকেয়া আক্তার বলেন, ‘অনিয়ম ঠেকাতে সাতজন পুরুষ ও তিন জন নারী সদস্য শপথ নিয়েছিলাম। এই খবর জেনে চেয়ারম্যান চারজনকে ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে তার পক্ষে নিয়ে গেছেন। তবে আমরা ছয়জন এখনও চেয়ারম্যানের অনিয়মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছি।

‘আমাকেও তার দলে নিতে লোক দিয়ে ৩০ টাকা পাঠিয়েছিল। কিন্তু আমি মরে গেলেও অনিয়ম আর দুর্নীতির সঙ্গে আপস করব না। তাই টাকা গ্রহণ করিনি। আমি জেলা প্রশাসকের কাছে চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করার দাবি জানাই।’

এ বিভাগের আরো খবর