উপজেলা প্রশাসন শিশুপার্কের চারদিকে সীমানা দেয়াল না থাকায় এটির ভেতর দিয়ে যাতায়াত করছে স্থানীয়রা। পার্কের ভেতর প্রকাশ্যে চলছে কিশোর ও যুবকদের মাদক সেবন। সংস্কার কাজ স্থবির হয়ে যাওয়ায় মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে এ শিশু পার্ক।
ঠাকুরগাঁওয়ের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা হরিপুর উপজেলা প্রশাসন পার্কে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।
উপজেলা ডাকবাংলো রোড দিয়ে একটু সামনে এগোলেই হাতের ডান পাশে ঠাঁয় দাঁড়ানো সীমানা প্রাচীরবিহীন পার্কের মূল ফটক। ভেতরে মাঝখানে গোল টিনশেডের ঘর, যেগুলো পার্কের জন্য তৈরি বসার স্থান। এসব ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছেন স্থানীয় কয়েকজন কিশোর।
তাদের অভিযোগ, পার্কের ভেতর প্রকাশ্যে মাদক সেবন করা হয়। অন্য কিশোররা এসব দেখে দেখে উৎসাহিত হচ্ছে।
পার্কের শুধু জমিটুকু পড়ে আছে অযত্নে। নামকাওয়াস্তে শিশুপার্ক। এখানে দেখার বা বলার মতো কেউ নেই।
তারা আরও জানান, সন্ধ্যার পর মাদক কারবারীরা এখান থেকেই মাদক ব্যবসা করে। অথচ পাশেই হরিপুর থানা। কোনো কিছুর তোয়াক্কা করা হয় না।
২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বিস্তর জায়গা জুড়ে ‘উপজেলা প্রশাসন শিশু পার্ক’ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পার্কটি চালু হয় ২০১৮ সালের শেষের দিকে।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যমতে, প্রকল্পের প্রায় ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ থেকে পার্কে তারকাঁটার বেড়া, একটি গেট, কয়েকটি বসার বেঞ্চ ও কিছু সংখ্যক গাছ রোপনের পেছনে ব্যয় করা হয়েছে। তার মধ্যে ছাতা নির্মাণের কাজ এখনও বাকি রয়েছে।
তখনকার ইউপি সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি ছিলেন ফজলুর করিম। তার কাছে মোট ব্যয় ও কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বরাদ্দ থেকে এসব কাজ করা হয়েছে বলে জানান। এ ছাড়া শিশুদের দোলনা এডিপি বরাদ্দ থেকে এসেছে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী মাসুম রানা বলেন, ‘যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সেভাবে কাজ হয়নি পার্কের। কিছু ফুলগাছ লাগানো হয়েছিল, সেগুলো যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে পার্কটি নেশাখোরদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এটি দ্রুত সংস্কার করে সুন্দর করে গড়ে তোলা দরকার।’
এরই মাঝে দুই জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন। বর্তমানে যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি নতুন। তিনি সব হিসাব বুঝে নিয়ে পার্কটি সুসজ্জিত করে তুলতে পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন প্রত্যাশা উপজেলাবাসীর।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মোহম্মদ সাইফুল্লাহ্ বলেন, ‘পার্কটি যখন কাজ শুরু হয় তখন এই ভেবে আমাদের খুব গর্ব হচ্ছিল যে, হরিপুর সীমান্তবর্তী একটি উপজেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্কের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু বর্তমানে এটি উল্টো শিশুদের বিচরণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা হয়ে উঠেছে। বখাটেদের উৎপাত, মাদক সেবন, ইভটিজিং সবই চলে এখানে।’
পার্কে শিশু সন্তান নিয়ে বেড়াতে আসা অভিভাবক জামাল ইকবাল বলেন, ‘শিশুদের খেলার একটি মাত্র স্লিপার। মরিচা পড়ে গেছে, নিচের অংশে ফেটে গেছে। তার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে শিশুরা উঠানামা করছে। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ভেতরে একটি পুকুর আছে, যেটিতে বেড়া নেই, খেলনা সরঞ্জাম একটি কে বা কারা খুলে নিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এখানে এটির কোনো তত্ত্বাবধান নেই।একবার কেউ এখানে এলে পরের বার আসার ইচ্ছা পোষণ করবে না।’
বেলি আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দিনেদুপুরেও পার্কের ভেতরে আসা যায় না। স্থানীয় ও বহিরাগত ছেলেরা আড্ডা দেয়, নেশা করে ও মেয়েদের উত্যক্ত করে। হরিপুর উপজেলায় বিনোদনের কোনো জায়গা নেই। উপজেলা প্রশাসন পার্কটি সুন্দর করে সাজালে এবং সেইরকমভাবে দেখভাল করলে নিশ্চয় সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হবে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষদের বিনোদনের জায়গা হবে পার্কটি।’
স্থানীয় বাসিন্দা জেসমিন রহমান বলেন, ‘পার্কটি প্রায় আট বিঘা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। সীমানা প্রাচীর দিয়ে ফুটপাত করে দিলে অবসরে গ্রামের নারীরাও হাঁটাহাঁটি করতে আগ্রহ পাবে। শিশুদের জন্য খেলার সরঞ্জাম পর্যাপ্ত থাকলে মায়েরা তাদের সন্তানদের পার্কে আনতে আগ্রহী হবে।’
হরিপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বহ্নি শিখা আশা জানান, মাদক নির্মূলে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট করা হচ্ছে। শিশু পার্কের ভিতরেও মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে।
পার্ক সংস্কারের বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘এলজিএসপি ও এডিপির বরাদ্দ থেকে পার্ক উন্নয়নের কাজ করা হয়। পার্কটি অনেক বড়, তাই আর্থিক বরাদ্দ সংকটের কারণে খুব বেশি কাজ করা হয়নি। শিঘ্রই সামনে বরাদ্দ থেকে পার্ক সংস্কারের কাজ করা হবে। সীমানা প্রাচীর দেয়া হবে।’