জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা আর জাতীয় সংসদে যাবেন না।
রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি সংসদে যোগ দেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
প্রয়াত এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি বর্তমানে কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। সংগঠনে নতুন করে সংকট দেখা দেয় ৩১ আগস্ট থেকে। ওই দিন রওশন এরশাদ হঠাৎ করে ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলনের ডাক দেন।
এর পরের দিন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে অপসারণ করতে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকেন জি এম কাদের। রওশনকে অপসারণের সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বরাবর চিঠি দেন জাতীয় পার্টির অধিকাংশ সংসদ সদস্য।
সেই চিঠির বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি স্পিকার। এ কারণে পরে আবার দলীয় সভাপতিমণ্ডলীর সভা ডেকে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর সমর্থন নেন জি এম কাদের। কিন্তু এর পরও কোনো কাজ না হওয়ায় এখন দলের সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংসদে না যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টি।
জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশন শুরু হয়েছে রোববার থেকে। এ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা।
এ ছাড়া জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের চলতি সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে রওশনের পক্ষে কথা বলায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাকে প্রথমে দলের সব পদ থেকে এবং গত শনিবার চিফ হুইপ পদ থেকেও অপসারণ করে জাতীয় পার্টি।
জি এম কাদেরের প্রেসসচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, রোববার বিকেলে সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় উপনেতার কার্যালয়ে জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
জি এম কাদেরের বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এটা না হওয়ার কিছু নেই। কারণ এটা পুরোপুরিভাবে আমাদের দলের সিদ্ধান্তের বিষয়। স্পিকারের স্বীকৃতি না দেওয়ার তো কোনো যুক্তি নেই। আমাদের উনি (স্পিকার) সিদ্ধান্তও দেননি, বলেনওনি। আমরা অপেক্ষা করছি। আমরা যে সংসদে যাব, কার নেতৃত্বে যাব? একজন অফিশিয়ালি আছেন, আরেকজনকে আমরা বানালাম, কার নেতৃত্বে আমরা যাব- এটা তো একটা কনফিউজিং বিষয়।
‘সে জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিছি যে, আমরা অপেক্ষা করছি, স্পিকারের সিদ্ধান্ত পেলে আমরা যাব।’
রওশন এরশাদ তো সংসদে যোগ দেবেন, তাহলে ওনার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি সংসদে যাবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনি তো সংসদ সদস্য, সংসদে যোগ দিতেই পারেন। কিন্তু উনি তো এখন আমাদের সংসদীয় দলের নেতা না। আমরা তো ওনাকে অব্যাহতি দিয়েছি। আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটাই আমরা দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে। দলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই এটা করা হয়েছে। সংসদের কার্যবিধিতেও এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। আর স্পিকার মহোদয় দেখবেন- আমরা কোনো প্রতারণা করছি কি না, সব সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর ঠিক আছে কি না।’
স্পিকারের সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকার কারণে এটি দলের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে ক্ষোভের কিছু নেই। আমাদের মধ্যে কোনো ক্ষোভ নেই। আমরা তো সংসদীয় দল থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েই নেতা পরিবর্তন করে এমনটা করেছি। আমাদের অধিকার আছে, গঠনতন্ত্র অনুসারে আমরা এটা করেছি।’
যদি গেজেট না হয় তাহলে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা পরের বিষয়।’