আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগে যে অবদান রেখে গেছেন তা ভোলার নয়। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন নেমে আসে। সাজেদা চৌধুরীও এর শিকার। তার অপারেশন হয়েছিল, গায়ে জ্বর ছিল। এই অবস্থায় জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠান। মতিয়া চৌধুরীকেও অসুস্থ অবস্থায় গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়।’
রোববার রাতে সংসদ অধিবেশনে সংসদ উপনেতা প্রয়াত সাজেদা চৌধুরী ও শেখ এ্যানি রহমানের ওপর আনিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু আওয়ামী লীগ নয়; বিরোধী দলের রওশন এরশাদ, জেনারেল এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সবাই জিয়াউর রহমানের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। খালেদা জিয়াও একই কাজ করেছিল।
‘প্যানাল কোডে আছে মাস্টার্স ডিগ্রি পাস হলে তাকে ডিভিশন দিতে হয়। রওশনকে সেটা দেয়া হয়নি। আমরা তো তাও খালেদা জিয়াকে অসুস্থ বলে বাড়িতে থাকার সুযোগ দিয়েছি। নির্বাহী আদেশে তার শাস্তি প্রাপ্তি স্থগিত রেখে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছি। একটা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা করা।
‘খালেদা জিয়া কিন্তু সেটা করেননি। বিমান বাহিনীর প্রধান জামাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে তার নামে একটা ঘড়ি চুরির মামলা দিয়ে কোনো ডিভিশন না দিয়ে জেলে পাঠিয়েছিলেন তিনি। এভাবে মানুষকে তারা অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে। জাতীয় পার্টি বোধ হয় সেই নির্যাতনের কথা ভুলেই গেছে। ভুলে গেছে অনেকেই।’
প্রয়াত সাজেদা চৌধুরীর স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। সাজেদা চৌধুরীর মতো নিবেদিতপ্রাণ অসংখ্য নেতা-কর্মী এই সংগঠনের হাল ধরে ছিল বলেই চরম দুঃসময়েও এই সংগঠন কখনও দিক হারায়নি। আশা করি বর্তমান নেতারাও সেই আদর্শ অনুসরণ করে এগিয়ে যাবেন।’
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সাজেদা চৌধুরী দিল্লি গিয়েছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। তাকে ফুফু বলে ডাকতাম। জিয়াউর রহমান আইন করেছিলেন পার্টির রেজিস্ট্রেশনে কারও নাম দেয়া যাবে না। আমাদের দলের মধ্যেও কারও কারও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে সাজেদা চৌধুরী অটল ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু ছাড়া পার্টি হয় না।’
সাজেদা চৌধুরী নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্যাম্পের নেতৃত্বে যেমন ছিলেন তেমন মুক্তিযোদ্ধাদেরও সংগঠিত করেছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন।
‘স্বাধীনতাসংগ্রামে যেমন তার অবদান রয়েছে, আমাদের জাতীয় জীবনেও অবদান রয়েছে তার। তাকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে হারিয়েছে।
‘আমার চলার পথে তাকে সব সময়ই পেয়েছি। তিনি চলে যাওয়াতে শুধু আওয়ামী লীগের নয়, দেশেরও ক্ষতি হয়েছে। একে একে সবাই ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বয়স হয়ে গেছে, যেতেই হবে। আমিও একদিন চলে যাব। তবে যে যেটা করেছে সেটা স্মরণ করতেই হবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আমি দেশে আসার পর সাজেদা চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সব কাজ তিনি সুচারুরূপে করতেন।
‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর তাকে বন ও পরিবেশমন্ত্রী বানিয়েছিলাম। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হয়েছে। এর পেছনে অবদান রয়েছে সাজেদা চৌধুরীর। তিনি সুন্দরবনকে সাজিয়েছিলেন। তিনিও পুরস্কার পেয়েছিলেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সংবিধান সংশোধনেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন।’
আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু; সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান; আ স ম ফিরোজ, বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, বিরোধীদলীয় সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা, আওয়ামী লীগসদস্য শাজাহান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও ওয়াসিকা আয়শা খান।