বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুদকের মামলায় অব্যাহতি চান এমপি জিন্নাহর কোটিপতি স্ত্রী

  •    
  • ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ২০:৩৭

দুদক সূত্র জানায়, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে জাতীয় পার্টির বগুড়া-২ আসনের সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর বিরুদ্ধে ২০২১ সালে মামলা হয়েছিল। ওই মামলার সূত্র ধরেই তার স্ত্রী মোহসীনা আকতারের বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান শুরু হয়। অনুসন্ধানে তার আড়াই কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদের তথ্য মেলে।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে অব্যাহতি চান জাতীয় পার্টির নেতা ও বগুড়া-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর কোটিপতি স্ত্রী মোহসীনা আকতার।

মোহসীনা আকতার এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন। আবেদন বিবেচনায় নিয়ে ২৪ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক অজয় কুমার সাহাকে সব নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে মতামত দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।

দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক চিঠির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও মোহসীনা আকতারের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১১ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুদক। এর পরপরই মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন মোহসীনা আকতার। আবেদনের সঙ্গে তিনি এর সপক্ষে কিছু কাগজপত্র সংযুক্ত করেছেন বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্র জানায়, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে জাতীয় পার্টির বগুড়া-২ আসনের সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর বিরুদ্ধে ২০২১ সালে মামলা হয়েছিল। ওই মামলার সূত্র ধরেই তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান শুরু হয়। অনুসন্ধানে আড়াই কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়।

‌এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদ বিবরণী নোটিশ ইস্যুর জন্য দুদকের তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম সুপারিশ করেন। ওই সুপারিশে কোটি টাকার বেশি সম্পদের সন্দেহজনক তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। ওই সম্পদ মূলত তার স্বামী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর বলে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।

ওই সুপারিশকে বিবেচনায় নিয়ে মোহসীনা আকতারের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করে দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি মোহসীনা আকতার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও দায়-দেনার বিবরণ দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বরাবর দাখিল করেন।

মোহসীনা আকতার তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে নিজ নামে ৩০ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকার স্থাবর ও ২ কোটি ৪ লাখ ৮১ হাজার ১৯৭ টাকার অস্থাবর সম্পদের বিবরণ দেন। সব মিলিয়ে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের কথা বলা হয়।

সম্পদ বিবরণী ও আয়কর নথি অনুসারে তার প্রদর্শিত সম্পদের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ব্যবসার মাধ্যমে আয় দেখানো হয় ১০ লাখ টাকা। ২০১৯-২০২০ করবর্ষে ১৯(ই) ধারায় ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৯ টাকা জরিমানা আয়কর দিয়ে ৫৪ লাখ টাকা আয় প্রদর্শন করেন তিনি।

২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত প্রদর্শিত মোট ২ কোটি ৮ লাখ ৬ হাজার ৮৯২ টাকা আয়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৫০ টাকার। সব মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে মোট ২ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭২ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের প্রমাণ পায় দুদক।

প্রসঙ্গত, আয়কর অধ্যাদেশে ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, অতীতের যেকোনো বছরের আয় গোপন করা হয়ে থাকলে ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়ে বৈধ করা যাবে। ওই করবর্ষেও তার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা রেমিট্যান্স আয়ের কথা বলা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান যা বলে

অনুসন্ধানকালে মোহসীনার সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাইকালে ৩০ লাখ ৯২ হাজার টাকার স্থাবর ও ২ কোটি ৯ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্যসহ মোট ২ কোটি ৪০ লাখ ৩৯ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। সে হিসাবে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৪২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, আসামি মোহসীনা আকতার ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরুর পর তার অবৈধ আয়কে বৈধ করার জন্য ২০১৯-২০২০ করবর্ষে মোহসীনা আকতার আয়কর নথি খোলেন। ওই করবর্ষে তিনি বিবিধ ব্যবসার আয় বাবদ ১০ লাখ টাকা, ১৯ই ধারায় ৫৪ লাখ টাকা আয় দেখিয়ে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৯ টাকা আয়কর দিয়েছেন।

ওই করবর্ষে তিনি তার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা রেমিট্যান্স পেয়েছেন। এভাবে তিনি ১ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার টাকা প্রদর্শন করেন। এর বিপরীতে ১ কোটি ৯ লাখ ৭২ টাকার গ্রহণযোগ্য উৎস পাওয়া গেলেও ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকার আয়ের কোনো বৈধ উৎস পায়নি দুদক।

মোহসীনা আকতার একজন গৃহিণী। তার আয়ের কোনো উৎস নেই। তার এক ভাই সৌদি আরবে থাকেন। তার নিজ ব্যাংক হিসাবে ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা রেমিট্যান্স আসে। কিন্তু তিনি ওই টাকা তাদের দান করেছেন কি না তার কোনো তথ্য ও রেকর্ডপত্র প্রদর্শন করেননি তিনি। দুদক মনে করে মোহসীনা আকতার তার স্বামীর অবৈধ আয়কে বৈধ করার জন্য তার সৌদি প্রবাসী ভাইয়ের টাকা আনার বিষয়টি সাজিয়েছেন।

সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায়, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বিগত তিন বার সংসদ সদস্য হিসেবে কর্মরত। মোহসীনা আকতারের নিজের কোনো গ্রহণযোগ্য ও বাস্তব আয়ের উৎস নেই। মূলত সংসদ সদস্য স্বামীর অবৈধ আয়কে বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে তার নিজ নামে বিবিধ ব্যবসায়ী হিসেবে আয়কর নথি খুলেছেন।

২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত প্রদর্শিত মোট ২ কোটি ৮ লাখ ৬ হাজার ৮৯২ টাকা আয়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৫০ টাকার। সব মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে মোট ২ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭২ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের প্রমাণ পায় দুদক।

এ বিভাগের আরো খবর