আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জনে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে মোট ৮০টি দল। এসব দলের মধ্যে সিংহভাগই অখ্যাত। কখনও তাদের অস্তিত্বের কথা এতদিন জানাই যায়নি।
নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক আসাদুজ্জামান আরজু দলগুলোর সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেড় বছরেরও বেশি আগে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নিবন্ধন আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর মে মাসের মধ্যেই নতুন দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করতে চায়।
আগামী বছর ডিসেম্বরে অথবা পরের বছর জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা করছে আউয়াল কমিশন। যার ফলে নিবন্ধন পেলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটারদের কাছে নিজেদের পরিচিত করতে সময় পাবেন সাত থেকে আট মাস।
বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানের সেনাশাসনের সময় প্রথম রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর ২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দ্বিতীয় দফা নিবন্ধন দেয়া হয়। নিবন্ধিত না হলে কোনো দল তাদের প্রতীক ব্যবহার করে ভোটে অংশ নিতে পারে না।
তখন ১১৭টি দল নিবন্ধনের আবেদন করে। যাচাইবাছাই শেষে নিবন্ধন দেয়া হয় ৩৯টি দলকে। পরে আরও পাঁচটি দল পায় নিবন্ধন। আবার পাঁচটি দল শর্ত ভঙ্গ করায় তাদের নিবন্ধন বাতিলও হয়। ফলে এখনও নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৩৯।
যেসব দলের পক্ষে নিবন্ধন আবেদন
নতুন যেসব দল নিবন্ধন চেয়েছে, তাদের মধ্যে আছে বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ আম জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি মুভমেন্ট (বিডিএম), বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি (বাংলাদেশ টিজেপি), এবি পার্টি, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, বাংলাদেশ এলডিপি, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি।
আরও আছে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল গ্রিন পাটি, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক লীগ, গণ রাজনৈতিক জোট (গর্জো), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), নতুন ধারা বাংলাদেশ এনডিবি, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, যুব স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
আবেদন জমা পড়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দল, জাতীয় জনতা পার্টি, কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), ভাসানী অনুসারী পরিষদ, নাকফুল বাংলাদেশ, মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলনের পক্ষ থেকেও।
বাংলাদেশ তৃণমূল কংগ্রেস, মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিজম ডেমোক্রেটিক পার্টি, রাজনৈতিক আন্দোলন, বাংলাদেশ জনতার অধিকার পার্টি, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএনডিপি), জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী-ন্যাপ), ন্যাপ ভাসানী, বাংলাদেশ জাতীয় লীগের (বিজেএল) পক্ষ থেকেও।
আবেদন করেছে বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ, বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি, বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি)ও আবেদন করেছে।
আবেদন জমা দিয়েছে নৈতিক সমাজ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি, মুসকিল লীগ, নতুন বাংলা, বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলন (বিজিএম), বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পাটি (কেএসপি), বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টিও।
প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট (পিডিএফ), বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি), বৈরাবরী পার্টি, বাংলাদেশ বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও নন প্রবাসী কল্যাণ দল, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, জনতার অধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশও আবেদন করেছে।
বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি, বাংলাদেশ মানবতাবাদী দল, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি (বিইউআইপি), বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল (বিডিপি), মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, গণ অধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি, যুবসমাজ পার্টিও চেয়েছে নিবন্ধন।
ন্যাপ (ভাসানী), সাধারণ জনতা পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ এনভায়নমেন্ট গ্রিন পার্টি, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা কল্যাণ পরিষদ পক্ষ থেকেও জমা পড়েছে আবেদন।
নির্বাচন কমিশনের অবস্থান কী
নতুন দলের নিবন্ধন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘হয়তো কালকে কমিশন সচিবালয় ফাইল তুলবে। এরপর তারা যাচাইবাছাই করে দেখবে। তারপর আমাদের কাছে দেবে, আমরা যদি কাগজপত্র দেখে মনে করি আরও যাচাই করতে হবে, তাহলে সেটা করা হবে। আর যদি ১০০ ভাগ শর্ত পূরণ হয় নিবন্ধন পাবে। সব দলের জন্য সেই একই শর্ত।’
কবে নাগাদ শেষ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা আছে মে মাসে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হবে। মে মাসের শেষে যারা নিবন্ধন পাবে তাদের দেয়া হবে, আর যারা পাবে না তাদের জানিয়ে দেয়া হবে কোন শর্ত পূরণ না করার জন্য তাদের নিবন্ধন দেয়া হলো না।’
নিবন্ধন দেয়নি হুদা কমিশন
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের কাছে ৭৬টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও কোনো দলকে নিবন্ধন দেয়া হয়নি। আগ্রহী দলগুলো শর্ত পূরণ করেছে বললেও যাচাইবাছাইয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
অবশ্য ভোটের পরে আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় দুটি দল। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।