বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নীলক্ষেতে দোকানে তালা মারতে গিয়ে ধাওয়া খেল ছাত্রলীগ

  •    
  • ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:৩০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের ২০-২৫ জন কর্মী শুক্রবার রাতে নীলক্ষেতে মনির বুক হাউসে জোর করে তালা মারতে যান। এ সময় দোকানিরা বাধা দিলে দুই পক্ষে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে দোকানিরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যান।

রাজধানীর নীলক্ষেতে একটি বইয়ের দোকানে জবরদস্তি তালা মারতে গিয়ে দোকানিদের ধাওয়া খেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একদল কর্মী। অন্যরা পালিয়ে যেতে পারলেও একজনকে ধরে ফেলেন দোকানিরা। এ সময় তাকে মারধরও করা হয়।

শুক্রবার রাত ৭টা ৫২ মিনিটে সংঘটিত এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ নিউজবাংলার হাতে এসে এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের ২০-২৫ জন কর্মী নীলক্ষেতে মনির বুক হাউসে জোর করে তালা মারতে যান। এ সময় দোকানিরা বাধা দিলে দুই পক্ষে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে দোকানিরা একজোট হয়ে ধাওয়া দিলে পালিয়ে যান ছাত্রলীগ কর্মীরা।

দোকানিদের ধারণা, তালা খুলে দেয়ার বিনিময়ে চাঁদা আদায়ের পরিকল্পনা থেকেই ছাত্রলীগ কর্মীরা কোনো কারণ ছাড়াই দোকানে তালা মারতে চেয়েছিলেন।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পুরো ঘটনায় নেতৃত্ব দেন স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল্লাহ আল জুবায়ের ও জামান সামি। আর তাদের সঙ্গে থাকা অধিকাংশই প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ধাওয়া খেয়ে জামান সামি এবং জুবায়েররা পালিয়ে যেতে পারলেও তাদের সঙ্গে যাওয়া প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী পেছনে পড়ে যান। পরে দোকানিরা তাকে মারধর করে ছেড়ে দেয়।

প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দোকানিদের মারধরের শিকার ওই শিক্ষার্থী মাত্র কয়েক মাস হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। বড় ভাইদের নির্দেশে তাকে বাধ্য হয়ে সেখানে যেতে হয়েছে।

এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ওই শিক্ষার্থী।

জামান সামি ও জুবায়ের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী এবং হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলামের অনুসারী।

জানা যায়, ঘটনাস্থলের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন হল ছাত্রলীগের সাবেক উপ-ক্রীড়া সম্পাদক শাহারাত খান ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রবিউল। তাদের নির্দেশেই দোকানে তালা মারতে যান সামি-জুবায়েররা। তারা দুজনই হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ উদ্দীনের ঘনিষ্ঠ।

মনির বুক হাউসটি নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটে অবস্থিত। ইসলামিয়া মার্কেট বণিক বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়া নিউজবাংলাকে ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি নিউমার্কেট যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়কও।

তিনি বলেন, ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাত ৭টা ৫২ মিনিটে। মুনির বুক হাউস আমার চাচাতো ভাইয়ের। সেদিন ২০-২৫ জন এসেছিল। তারা সবাই নিজেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দেয়।

‘তারা এসে প্রথমেই দোকানে থাকা কর্মচারীদের বলে- তোরা দোকান থেকে বের হ। আমাদের বড় ভাই তোদের ডাকে। কর্মচারীরা বলে, আমরা দোকান থেকে বের হতে পারব না। আপনাদের কিছু বলার থাকলে সমিতির অফিসে গিয়ে মালিকের নম্বর নিয়ে ওনাকে বলেন।

‘এ সময় তারা দোকানের কর্মচারীদের হুমকি-ধমকি দেয়। আমি সমিতির অফিসে বসা ছিলাম। হঠাৎ একজন এসে বিষয়টি জানানোর পর আমি গিয়ে ঘটনা কী তাদের জিজ্ঞেস করি।’

‘তারা বলে, দোকানদার তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। কিন্তু কখন, কে, কী খারাপ ব্যবহার করেছে সেটি তারা বলতে পারছে না।

‘আমি তাদের বলি, কেউ যদি আপনাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে থাকে তাহলে আমাদের অফিসে আসেন। আমরা বিচার করব।

কিন্তু তারা কোনো কথা না শুনে দোকান বন্ধ করতে চায়। কোনো কথা না শুনে দোকানের শাটার টেনে নামিয়ে বন্ধ করে দিতে চায়।‘

গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমি বলি, বন্ধ করতে হলে বা তালা মারতে হলে মালিক সমিতি আছি, প্রশাসন আছে। আমরা মারব। আপনারা তালা মারার কে? আপনারা তালা নিয়ে আসছেন কেন? এরপর তারা একটা শাটার টেনে নামিয়ে সেটাতে তালা মারতে গেলে আমি বাধা দেই। এ সময় তারা আমার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে।

‘এ সময় সেখানে নিউমার্কেট থানার কয়েকজন দারোগাও ছিলেন। ওরা তাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেছে। আমাকে ধাক্কা দিতে দেখে দোকানদাররা ক্ষেপে যায়। এরপর আমি ধর ধর বললে বাকি দোকানদাররা সবাই মিলে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।

‘এ সময় তাদের সঙ্গে আসা একজনকে উপস্থিত লোকজন ধরে মারতে শুরু করলে তাকে রক্ষা করে পাঠিয়ে দেই।’

এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেবেন কি না জানতে চাইলে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা থানায় গিয়েছিলাম। থানার ওসিকে অবহিত করেছি। উনি আমাদের বলেছেন, দুয়েক দিন পর্যবেক্ষণ করে তাদের শনাক্ত করতে পারেন কি না দেখেন। যেহেতু তারা অনেকেই মাস্ক পরা ছিল।

‘আমরা ঘটনার হোতা সামি আর জুবায়েরকে শনাক্ত করেছি। আরও কয়েকজনকে শনাক্তের চেষ্টা করছি। তারপর ব্যবস্থা নেব।’

জুবায়ের আহমেদকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন।

ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ আছে জানালেও তিনি বলেন, ‘না, এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আপনি রিয়াজ ভাইয়ের (হল ছাত্রলীগের সভাপতি) সঙ্গে কথা বলেন।’

আরেক অভিযুক্ত জামান সামি বলেন, ‘এরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। আর হল থেকে পোলাপান নিয়ে গিয়ে শাটার বন্ধ করার মতো ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি সেখানে ছিলাম না। যদি থাকতাম তাহলে দোকানিদের বাইরে আসতে বলতাম না। সরাসরি মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলতাম। দোকানে গিয়ে কোনো কিছু করার নেই।’

আরেক অভিযুক্ত শাহারাত খান বলেন, ‘আমি মনে হয় ওই সময় ছিলাম না। আমি হলের সিনিয়র। এজন্য হয়তো ছোট ভাইয়েরা আমার নাম বলে দিছে। এ বিষয়ে আমার খোঁজ নিতে হবে।’

সার্বিক বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জুবায়েরের সঙ্গে কথা বলেছি। সে বলল, শুক্রবার সে নীলক্ষেতের আশপাশেই যায়নি। আর জুনিয়র কেউ গেছে কি না তা জানতে তাদের রুমে কয়েকজন সিনিয়রকে পাঠিয়েছি। জুনিয়ররাও বলছে, তারা সেদিন নীলক্ষেতে যায়নি।’

সিসিটিভি ফুটেজ আছে জানালে তিনি বলেন, ‘সংগঠনের স্বার্থে কারও প্রতি কোনো ছাড় নেই। কেউ এই ঘটনায় জড়িত প্রমাণ হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কেউ কোনো ধরনের সংগঠন, শৃঙ্খলা ও নৈতিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে আমরা সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটা আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য আমরা রাজনীতি করি। সেই আদর্শের বিপরীতে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। দেশের আইন-শৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিলে আমরা সহযোগিতা করব।’

নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘উনি গতকাল এই ঘটনায় অভিযোগ করতে থানায় এসেছিলেন। কিন্তু কারও নাম উনি বলতে পারেননি। এরপর উনি চলে যান।’

এ বিভাগের আরো খবর