মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার আতঙ্কসহ নানা কারণে এক যুগের বেশি সময় ধরে কোণঠাসা রংপুরের তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তবে দীর্ঘদিন পর বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে তারা আবার উজ্জীবিত বলে মনে করছেন দলীয় নেতারা।
তাদের মতে, সমাবেশে সরব উপস্থিতি, কয়েকদিন আগে থেকে বিভাগীয় শহরে বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীদের আনাগোনা, সমাবেশের দিন ও তার দুই দিন আগে থেকে দিনে-রাতে শোডাউন ছাড়াও সম্প্রতি রংপুরে সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ ঘটিয়েছে দলটি।
এ ছাড়াও গত ১৫ দিন ধরে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বাধাহীন সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে দলীয় কর্মীদের চাঙা ভাব তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন নেতারা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, এই সমাবেশের পর রংপুর বিএনপির তৃণমূল ও মধ্যম সারির নেতা-কর্মীদের ভয়-আতঙ্ক অনেকটাই কেটে গেছে। দলীয় শক্তি অনুভব করতে পারছেন তারা।
এরই ধারাবাহিকতায় সাংগঠনিক দুর্বলতা ও মামলা-হামলার ভয় কাটিয়ে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তাদের মধ্যে শক্ত মনোভাব তৈরি হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
শহিদুল ইসলাম নামে বিএনপির এক কর্মী বলেন, ‘আমরা মামলা হামলা আর গ্রেপ্তার আতঙ্কের মধ্যে থাকি। বিএনপি অনেকদিন ক্ষমতার বাইরে। তাই অনেকে বলে- বিএনপির অস্তিত্ব নেই, তাদের দিয়ে কোনো আন্দোলন হবে না। কিন্তু এটা যে ভুল কথা গত সমাবেশই তার প্রমাণ।’
পরিবহন বন্ধ না থাকলে সমাবেশে আরও লোকসমাগম হতো বলেও দাবি করেন শহিদুল।
রংপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকিপুল রহমান মনু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের নামে অসংখ্য মামলা-হামলা, জেলজুলুম আছেই। স্বাধীনভাবে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারি না। আমাদের নেতা-কর্মীদের যে ভয়ভীতি ছিল- এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে তা কেটে গেছে। সামনের দিনগুলোতে আমরা দেশের জনগণের জন্য রাজপথে সরকারের সব বাধা উপেক্ষা করে সক্রিয় থাকব।’
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি রংপুর বিভাগবাসীকে ধন্যবাদ দিতে চাই, কারণ সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তারা সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত করেছেন। বিএনপির নেতা-কর্মীদের চেয়েও এই সমাবেশে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বেশি ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে নেতা-কর্মীরা আগের চেয়েও অনেক উজ্জীবিত। নতুন উদ্যোগে, উৎসাহে তারা মাঠে কাজ করবেন, নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষকে সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত করবেন।’
রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের মাঝে মনে হয় বিজয়ের উচ্ছ্বাস। তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে অলরেডি সংগ্রাম শুরু হয়ে গেছে। মামলা-হামলা, গুলির ভয় উপেক্ষা করেই তারা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।’
রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘নেতা নয়, কর্মীরাই এখন বেশি উজ্জীবিত। তারাই আমাদের আন্দোলনের তাড়া দিচ্ছে। নেতা-কর্মীরা এতটাই উজ্জীবিত যে সমাবেশের তিন দিন আগেই তারা বাধাবিপত্তি এড়িয়ে এসেছেন। রাত কাটিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। আন্দোলনে এখন সাধারণ মানুষও জড়িয়ে গেছে।’