বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভয় যদি না পাও, গাড়ি কেন বন্ধ করো: ফখরুল

  •    
  • ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ১৭:৪২

বিএনপির চতুর্থ বিভাগীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে রংপুরে। এর আগে চট্টগ্রাম, মংমনসিংহ ও খুলনায় এ কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।

‘সরকার নাকি বিরোধীদলকে ভয় পায় না! ভয় যদি না পাও, তাহলে গাড়ি কেন বন্ধ করো, কেন এই সমাবেশ বন্ধ করো? কারণ একটাই। আমাদের ভয় পাও।’

শনিবার রংপুরের গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘হাসিনা কবে যাবে, সরকার কবে যাবে, দাবি একটাই- এই সরকার কবে যাবে। আমাদের যত অর্জন ছিল এই সরকার গত ১৫ বছরে শেষ করে দিয়েছে। চুরি আর চুরি।’

ফখরুল আরও বলেন, ‘একটা মানুষ, একটা দল গত ১৫ বছর ধরে অত্যাচর নির্যাতন করে শেষ করে দিয়েছে। চিবিয়ে চিবিয়ে অর্থনীতিকে শেষ করে দিয়েছে।

‘রাস্তায় চুরি, কালভার্টে চুরি, আশ্রয়ণ প্রকল্পে চুরি। এ যে সর্বলুট, সব খেয়ে ফেলছে। এই সরকার সর্বলুট সরকারে পরিণত হয়েছে।

‘এই সরকার, আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটকে রেখেছে।’

এদিকে সমাবেশে উপস্থিত বিএনপির সাংসদ ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশীদ সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘ধানাই ফানাই বাদ দেন, নাটক বন্ধ করুন। ১০ তারিখ কর্মসূচি নিয়ে আসছি। আপনাদের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। মানুষ এক মুহূর্ত আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’

এ সময় ১০ ডিসেম্বরের ১০ দিন আগেই নেতাকর্মীদের ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান তিনি।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষকে ঠকানোর ইতিহাস। আজকের সমাবেশ শেখ হাসিনার জন্য বড় বার্তা। আওয়ামী লীগের মতো একটা অবিশ্বাসীর দল মাথার ওপরে জোর করে বসে শাসন করছে।’

টুকু আরও বলেন, ‘এবারের লড়াই, জেতার লড়াই। আমরা লড়াই করে বাঁচতে চাই। এই লড়াইয়ে আমরা জয়লাভ করতে চাই। সারা বাংলাদেশ অচল করে দেব। আপনাদের পদত্যাগে বাধ্য করবো। মানুষের ভাত এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ বলেন, ‘সময় থাকতে পদত্যাগ করুন। সেইফ এক্সিট নেবেন? সময় থাকতে থাকতে বিদায় হন।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত দুদিন ধরে সরকারের বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা গণসমাবেশে উপস্থিত হয়ে সরকারকে বলে দিয়েছে, এই রংপুর আর সেই রংপুর নাই। এটা শহীদ জিয়ার রংপুর। আগামীতে রংপুরে ধানের শিষের চারা গজাবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘যদি জনতা বিক্ষুব্ধ হয়, তাহলে তাদেরকে কোনো শক্তি দমিয়ে রাখতে পারে না। আজকে তারা জানান দিচ্ছে, বর্তমান অবৈধ সরকার তোমার সময় শেষ।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলু, ড্যাব মহাসচিব আব্দুস সালাম, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্নাসহ অনেকেই।

এর আগে দুপুর ২টার দিকে রংপুর কালেক্টরেট মাঠের এই সমাবেশের মঞ্চে ওঠেন ফখরুলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

সমাবেশস্থল ছাপিয়ে এ সময় আশপাশের সড়কেও অসংখ্য মানুষ ছড়িয়ে পড়েন। রংপুরের রাধাবল্লভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়, সুরভী উদ্যান, সিটি বাজার, পায়রা চত্বর ও জাহাজ কোম্পানি, বঙ্গবন্ধু চত্বর পর্যন্ত মানুষের সমাগম চোখে পড়ে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি ও দূব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদসহ নানা দাবিতে হচ্ছে এই সমাবেশ।

বিএনপিকর্মী মোকছেদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার যখন কোনোভাবে লোক আসা ঠেকাতে পারে না, তখন ধর্মঘট দিয়ে জনগণকে দুর্ভোগে ফেলার প্রয়োজন হয় না। সমাবেশে মানুষ আসা ঠেকাতে পারবে না কেউ।’

আরিফ হোসেন বলেন, ‘মানুষ আমাদের গালি দেয়। বলে তোরা যে দল (বিএনপি) করিস সে দলের অস্তিত্ব নাই। অথচ কত মানুষ আসছে।’

সমাবেশস্থল ও আশপাশ ঘুরে দেখা গেছে, সমাবেশকে ঘিরে মামলা, গ্রেপ্তারে দীর্ঘদিন কোণঠাসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত।

নাগেশ্বরী থেকে আসা মোখলেছুর বলেন, ‘মানুষ বলে বিএনপি নাই, আজ দেখুক বিএনপি আছে না নাই। আমরা বিএনপির সাথে ছিলাম, আছি।’

দুপুর ১২টার দিকে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে নগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়।

বিএনপির পূর্বঘোষিত এই সমাবেশে আসতে পরিবহন-সংকট এবং পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে নেতা-কর্মীদের। এ অবস্থাতেই নানা কৌশলে সমাবেশে যোগ দিতে রংপুরে ঢোকেন তারা।

আগের দিন রংপুরে আসেন অনেক নেতা-কর্মী। শনিবার সকালেও এসেছেন অনেকে। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন তারা। নেতা-কর্মীদের মিছিলে মুখর হয়ে ওঠে পুরো শহর। জাতীয় ও দলীয় পতাকা, হাতে ধানের শীষ, বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে ছোটেন তারা।

সকাল থেকে রংপুর শহরের প্রত্যেকটি প্রবেশমুখে বিএনপির শত শত নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে। তাদের কেউ স্লোগান দিচ্ছেন, কেউ অপেক্ষা করছিলেন তখনও রংপুর আসতে না পারা অন্য নেতাকর্মীদের জন্য।

বেলা ১১টার দিকেই সমাবেশস্থল রংপুর কালেক্টরেট মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোক বাড়তে থাকে।

সমাবেশ ঘিরে নগরীজুড়ে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। প্রবেশদ্বার এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ছিল পুলিশ। সাদাপোশাকেও পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিপুল সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি ছিল শহরজুড়ে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি, দূব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ ও ২২ অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করেছে দলটি। সবশেষ শনিবার রংপুরে গণসমাবেশ করেছে দলটি। তাদের পরবর্তী বিভাগীয় সমাবেশ হবে বরিশালে।

এ বিভাগের আরো খবর