বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাসে কোটি টাকার চারা বিক্রি সমেষপুরে

  •    
  • ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ১১:৩৩

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সমেষপুর গ্রামে চার মাস ধরে চলে শীতের শাকসবজির চারা উৎপাদন। এই চার মাসে গড়ে ৪ কোটি টাকারও বেশি চারা বিক্রি করেন গ্রামের কৃষকরা।

এক পাশে গোমতী নদী, অন্য পাশে রানি ময়নামতির প্রাসাদ। তার মাঝে সমেষপুর। ছায়া সুনিবিড় এ গ্রামে এখন চারাচাষিদের ব্যস্ততা।

কেউ জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ বা পানি ছিটাচ্ছেন। কেউ আবার চারা তুলে আঁটি করছেন। পাশে দাঁড়িয়ে থেকে পাইকাররা চারা গুনে গাড়িতে তুলছেন।

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সমেষপুর গ্রামে বছরের ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত চার মাস চারা উৎপাদন ও বিক্রি হয়। এ চার মাসে ৪ কোটি টাকারও বেশি রবিশস্যের চারা উৎপাদন ও বিক্রি করেন কৃষকরা। এসব রবিশস্যের চারা দেশের সবজিচাষিদের চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে পাশের দেশ ভারতেও।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট প্লটে গায়ে গায়ে লেগে হাজারো চারা দোল খাচ্ছে। রোদ থেকে বাঁচাতে চারার ওপর বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাষিরা নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করছেন। কেউ বা পানি ছিটিয়ে চারাগুলোকে সতেজ করার চেষ্টা করছেন।

প্লটগুলোতে মাথা তুলে আছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, টমেটো, শিং নাথ বেগুন, তালবেগুন, লাউসহ নানা সবজির চারা। এ চারাগুলোই কিছুদিন পর বিভিন্ন জমিতে ফুল-ফলে ভরিয়ে দেবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বুড়িচং উপজেলার সমেষপুরসহ পাশের কয়েকটি গ্রামে প্রায় ৩০ একর জমিতে চারা চাষ করেছেন কৃষকরা। চারটি ব্লকে ৯৪ চাষি চারা উৎপাদনে যুক্ত।

সমেষপুর এলাকার চারাচাষি মো. হুমায়ূন কবির জানান, তিনি এ বছর ১০০ শতক জমিতে চারা চাষ করেছেন। তার বাগানে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানান জাতের চারা আছে।

হুমায়ূন কবির জানান, এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। আবহাওয়া ঠিক থাকলে খরচ বাদে তার মুনাফা হবে অন্তত ৫ লাখ টাকা।

আরেক চাষি মামুনুর রশীদ বলেন, বীজের দাম, সারসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। কৃষিশ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। জনপ্রতি কৃষিশ্রমিককে মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। সেই সঙ্গে বর্ধিত দামে কিনতে হয় বীজ, সার ও কীটনাশক।

আরেক চাষি মোতাহের হোসেন জানান, ১০০ ফুলকপির চারা আকার-আকৃতি ও জাত হিসেবে ৫০ থেকে শুরু করে ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন। তালবেগুনের চারাও ১০০টি ১০০ টাকা। বিভিন্ন শাকসবজির এসব চারার গড় দাম এমনই।

তিনি আরও জানান, সমেষপুরের চারা সিলেট, সুনামগঞ্জ, ছাতক, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়, তবে গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকেও পাইকাররা এসে চারা নিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ভারতে বক্সনগর ও সোনামুড়ার কৃষকেরা আসেন। কেউ কেউ লোক পাঠিয়েও নিয়ে যান।

ছাতক থেকে চারা কিনতে আসা পাইকার আবদুর রউফ জানান, তিনি গত ১০ বছর ধরে সমেষপুর থেকে চারা কেনেন। এখানের চারা যেমন সাশ্রয়ী, তেমনি চারা মরে যাওয়ার প্রবণতা কম। ফলনও ভালো হয়।

বুড়িচং উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চারা উৎপাদনের সময় রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পরামর্শ উপসহকারী কৃষি অফিসাররা দিয়ে থাকেন। তা ছাড়া রবি প্রণোদনা, বোরো হাইব্রিড প্রণোদনা, পারিবারিক সবজি পুষ্টি বাগান, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রদর্শনীসহ কৃষক প্রশিক্ষণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কৃষিবিদ বানিন রায় আরও জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে চারাশিল্পের কৃষকদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ এ মাসেই আয়োজনের কথা রয়েছে। কারণ বুড়িচং উপজেলার চারাশিল্প একটি প্রসিদ্ধ ও লাভজনক ব্যবসা। দেশের ১০-১৫টি জেলায় চারা বিক্রির মাধ্যমে শীতকালীন সবজি উৎপাদনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

এ বিভাগের আরো খবর