নোয়াখালীর হাতিয়ায় মেঘনা নদীর তীরে ঘূর্ণিঝড়ে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত চলাকালে ভূমিষ্ঠ হওয়া এক শিশুর নাম রাখা হয়েছে সিত্রাং।
২৩ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের রাতে হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের বয়ারচরে শিশুটি জন্মগ্রহণ করে।
বৃহস্পতিবার নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান মিষ্টি ও উপহার নিয়ে শিশুটিকে দেখতে যান।
স্থানীয়রা জানান, গত রোববার সন্ধ্যার পর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূল অতিক্রম করার সময় জোয়ারের পানি যখন ঘরে প্রবেশ করে। ঠিক তখন ফারজানা আক্তারের প্রসব ব্যথা ওঠে। রাত বাড়ার সঙ্গে ঝড়, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও চলে যায়। বাড়ির পাশে ধাত্রীকে ডেকে আনতে গেলেও ঝড়ের কারণে তিনি ঘর থেকে বের হতে রাজি হননি।
ফারজানা আক্তারের দিনমজুর স্বামী মো. শরিফ উদ্দিন তখন এলাকার বাইরে ইটভাটায় ছিলেন বলে জানান স্থানীয়রা।
তারা আরও জানান, ঘরে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। নিরুপায় হয়ে ফারজানাকে চৌকির ওপর রেখে তার মা ও শাশুড়ি ঘরের খুঁটি ধরে রাখেন। জোয়ারের পানি যখন চৌকি ছুঁই ছুঁই তখন ধাত্রী আসেন। গভীর রাতে ফারজানা জন্ম দিলেন কন্যা সন্তান। ততক্ষণে ঝড়ে ঘর উড়ে যাওয়ার অবস্থা। সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুকে নিয়ে মা ঘর ছেড়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেন। সেখানেও একের পর এক গাছ ভেঙে পড়তে থাকে। এভাবেই ঝুঁকিতে রাত পার করেন তারা।
পরে ফারজানা তার কন্যার নাম রাখেন জান্নাতুল ফেরদৌস সিত্রাং।
ডিসি দেওয়ান মাহবুবুর রহমান শিশুটিকে দেখতে গিয়ে বলেন, ‘সিত্রাং এর দায়িত্ব আমি নিলাম। তার জন্য নতুন জামা, মিষ্টিসহ উপহার এনেছি। নগদ টাকা দিয়েছি তার মাকে। ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছি, যেকোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাতে বলেছি। পরিবারটি বেড়িবাঁধের কাছে থাকে। নদীগর্ভে ভিটে চলে গেছে, তাদেরকে মুজিববর্ষের ঘর উপহার দিব।’
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসককে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন সিত্রাংয়ের মা, দাদি ও নানি।
ফারজানা আক্তার বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যার আমাদের বাড়িতে আসবেন তা স্বপ্নেও ভাবিনি। তিনি আমার মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। টাকা ও খাদ্য দিয়েছেন। আমরা সবাই তার কাছে কৃতজ্ঞ।’