রংপুরে গণসমাবেশে যোগ দিতে কী কৌশলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা সেখানে পৌঁছাচ্ছেন তার একটি নমুনা দেখা গেল এবার। বিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন জানিয়ে, পুলিশের বাধা কাটিয়ে সমাবেশস্থলে গেছেন দলটির কুড়িগ্রামের কয়েকজন।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল হাশেম চৌধুরী শুক্রবার সকালে এ তথ্য দিয়েছেন নিউজবাংলাকে।
তিনি জানান, রৌমারী থেকে প্রথমে নৌকায় নদী পার হওয়ার পর দুটি মাইক্রোবাসে চেপে সমাবেশস্থলে যাচ্ছিলেন ২৭ বিএনপি নেতা-কর্মী। কিন্তু চিলমারী পর্যন্ত ঠিকঠাক এলেও উলিপুরে পুলিশে বাধার মুখে পড়েন তারা।
আবুল হাশেম বলেন, ‘পরে কুড়িগ্রামে বিয়ে বাড়িতে দাওয়াতে যাচ্ছি এমন অজুহাতে রক্ষা পেয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রংপুরে পৌঁছাই। এরপর রাতে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে থেকে সকালে সমাবেশের মাঠে আসি।’
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরের পর জানতে পারি পরিবহন ধর্মঘট, এই খবরে কিছুটা হোঁচট খাই। সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়ে রাতেই ২৭ জন রওনা দিয়েছি আমরা।’
রৌমারী উপজেলা বিএনপির আরেক নেতা অধ্যাপক সুজন বলেন, ‘আমরা কম্বল-তাঁবু নিয়ে এসেছি, দিনে এবং রাতে মাঠে থাকব। যেহেতু সরকার বাধা দিচ্ছে, বিভিন্ন উপায়ে তাই আমাদেরও নতুন নতুন উপায় খুঁজতে হচ্ছে।’
শুক্রবার দুপুরে বিএনপির সমাবেশস্থল রংপুর কালেক্টরেট মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক নেতা-কর্মীই মাঠে ঘোরাঘুরি করছেন। তারা বৃহস্পতিবার রাতে এসেছেন বিভিন্ন পরিবহনে, অনেকে সকালের ট্রেনে এসেছেন।
সমাবেশস্থলে আসা নেতা-কর্মীরা বলছেন, পরিবহন এবং পুলিশি হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে তারা রাতেই রওনা হয়েছিলেন, আবার অনেকে আসছেন।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে আসা আরেক বিএনপিকর্মী বলেন, ‘আমরা মাঠে থাকব, মাঠে খাব। এই টুকু কষ্টে কোনো সমস্যা হবে না।’
রংপুরে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ছবি: নিউজবাংলা
বিএনপি নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, রংপুরের শনিবারের গণসমাবেশকে ঘিরে পরিবহন ধর্মঘট চলছে বিভাগ জুড়ে। কিন্তু বিকল্প পথে সমাবেশের একদিন আগে থেকেই সমাবেশস্থলে আসা শুরু করেছেন নেতা-কর্মীরা।
এদিকে, সকালে সমাবেশস্থলে এসেছেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুদু, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ জেড জাহিদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
দুলু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সমাবেশ সফল হবেই, ধর্মঘট দিয়ে আটকাতে পারবে না সরকার। আমাদের নেতা-কর্মীরা কেউ বাইসাইকেলে, কেউ হেঁটে, কেউ অটোরিকশায় আসতেছেন, আসতেই থাকবে কোনো বাধা মানবে না।’
রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশের আগে শুক্রবার সকাল থেকে কার্যকর হয়েছে ৩৬ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার সব ধরনের যানবাহন। এতে দূরপাল্লা এবং আন্তঃবিভাগের যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। বাসস্ট্যান্ড, টার্মিনালে গিয়েও বাস বা অন্য যান না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে।
৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ ও ২২ অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করেছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ অক্টোবর রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে চতুর্থ গণসমাবেশের ঘোষণা রয়েছে তাদের।