বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাজারও প্র‍ার্থনার মোমের আলোয় আলোকিত গারো পাহাড়

  •    
  • ২৮ অক্টোবর, ২০২২ ১১:৫৮

এ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে মোমবাতি প্রজ্বালন করে আলোক মিছিল করা। তবে গত দুই বছর করোনার কারণে সীমিত পরিসরে পালন করা হয় এ উৎসব। এ বছর উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তীর্থ উৎসব।

প্র‍তি বছরের মতো এবারও ক্যাথলিকদের মোমের আলোক মিছিলে আলোকিত হলো শেরপুরের গারো পাহাড়। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের বারোমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্ম পল্লীতে ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সর্ববৃহৎ উৎসব তীর্থযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

এ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে মোমবাতি প্রজ্বালন করে আলোক মিছিল করা। তবে গত দুই বছর করোনার কারণে সীমিত পরিসরে পালন করা হয় এ উৎসব। এ বছর উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তীর্থ উৎসব।

‘মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণকর্মে ফাতেমা রাণী মা মারিয়া’ এই মূল সুরে তীর্থ উৎসবে যোগ দিয়েছেন প্রায় অর্ধলক্ষ দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টভক্ত। ‘ভ্রাতৃত্ব সমাজ গঠনে ফাতেমা রাণী মা মারিয়া’ এই সুরের ওপর ভিত্তি করে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বারমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্ম পল্লীতে দুই দিনব্যাপী ২৫তম বার্ষিক ফাতেমা রাণীর তীর্থ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পবিত্র খ্রিষ্টযাগের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে শুরু হয় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় তীর্থ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পরে রাত ৯টায় আলোক শোভাযাত্রা, আরাধ্য সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশের বিকার জেনারেল রেভারেন্ড ফাদার গ্যাব্রিয়েল কোরাইয়া।

এতে পৌরহিত্য করেন ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিকার জেনারেল রেভারেন্ড ফাদার সিমন হাচ্চা।

জানা যায়, প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় ফাতেমা রাণীর তীর্থ উৎসব। শুধু শেরপুর নয়, দেশ-বিদেশের প্রায় লাখো পুণ্যার্থী অংশ নেয় এই তীর্থ যাত্রায়। ১৯৪২ সালে প্রায় ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বারমারী সাধু লিওর ধর্মপল্লীটিতে ১৯৯৮ সাল থেকে বার্ষিক তীর্থস্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গমেজ ১৯৯৮ সালে এ ধর্মপল্লীকে ‘ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। আর তখন থেকেই পালন করা হচ্ছে তীর্থ উৎসব।

তীর্থে আগত খ্রিষ্ট ভক্তরা তাদের নানা মান্নত পূরণ করতে ঈশ্বর জননী মা মারিয়ার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা জানান এবং তার অকৃপণ সাহায্য প্রার্থনা করেন। রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় বিশাল আলোক শোভাযাত্রা।

তীর্থযাত্রায় অংশ নেয় সারা দেশ থেকে আসা প্রায় অর্ধলক্ষ রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টভক্ত। তাদের হাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে খ্রিষ্টভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনে জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে খালি পায়ে ধর্মীয় বাণী উচ্চারণ করে তীর্থস্থানের উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলায় পরিভ্রমণ করেন। প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এ আলোক মিছিলে আলোকিত হয় গারো পাহাড়। এ ছাড়াও রাতব্যাপী মা মারিয়ার ৪৮ ফুট উঁচু মূর্তির সামনের চত্বরে চলে সাক্রামেন্টের আরাধনা, নিশি জাগরণ ও নিরাময় পাপ স্বীকার।

শুক্রবার সকালে জীবন্ত ক্রুশের পথ পরিভ্রমণ শেষে মহা খ্রিষ্টজাগের মাধ্যমে তীর্থ উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

তীর্থ উৎসবকে ঘিরে সবার মাঝে ব্যাপক আনন্দ সৃষ্টি হয়েছে।

হালুয়াঘাট থেকে আসা ইলিয়াস বলেন, ‘এই তীর্থে মানুষ মান্নতের জন্য আসে। আমিও এসেছি একটা মান্নতের জন্য। এখানে এলে মা মারিয়া সবার আশা পূরণ করে, তাই আসি।’

নেত্রকোণার বিরিশিরি থেকে আসা তৃপ্তি ম্র‍ং বলেন, ‘আমরা নিজেদের পাপমোচনসহ নানা সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মা মারিয়ার কাছে ছুটে এসেছি। আমি পড়াশোনা করছি। পড়াশোনায় ভালো করার জন্য তীর্থে প্রার্থনার জন্য এসেছি।’

আরেক ভক্ত সিনভিয়া তনুজা চাম্বু গং বলেন, ‘আমি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করছি। মা মারিয়ার কাছে মান্নত করতে এসেছি যেন আরও ভালো কিছু করতে পারি।’

শিক্ষার্থী বিনিসিং ম্র‍ং বলেন, ‘আমরা যেন ভালোভাবে শিক্ষা অর্জন করতে পারি। আগামী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারি- এ জন্য মা মারিয়ার সাহায্যের জন্য এসেছি।’

অর্থি বলেন, ‘অনেকে এখানে অনেক ধরনের মান্নত করতে আসে। আর মান্নত পূরণ হয়। আমিও মান্নত করলাম।’

তীর্থযাত্রা উপলক্ষে আয়োজন করা হয় মেলার। মেলায় এবার কেনাকাটা অন্য বছরের চেয়ে ভালো হয়েছে বলে জানান মেলায় আসা ব্যবসায়ীরা।

মেলার ব্যবসায়ী কবির মিয়া বলেন, ‘আমি এবার ব্যাগ বিক্রি করতে আসছি প্রথম। বেচাকেনা ভালোই হয়েছে।’

মেলার আরেক ব্যবসায়ী রহমান জানান, এবার আগের বছরের থেকে লোকজন অনেক বেশি তাই বেচাকেনাও বেশি। তারা এবার কিছুটা লাভবান হতে পারবে।

মেলায় নতুন নতুন জিনিস পেয়ে খুশি ক্র‍েতারা।

পূর্ণতা চিরাণ বলেন, ‘আমি মেলা থেকে নতুন নতুন জিনিস কিনলাম। ভালোই লাগল, মান্নতও করা হলো জিনিসও কিনা হলো।’

মেলায় আসা ইমরান হাসান জয় বলেন, ‘আমরা তীর্থ দেখতে আসি। কারণ আমি তাদের ধর্মের লোক নয়। তীর্থ দেখা শেষে মেলা থেকে কেনাকাটা করি। আর মেলায় অনেক নতুন নতুন জিনিস পাওয়া যায়।’

পাপ্র‍ী আরেং বলেন, ‘এ রকম মেলা আসলে সব জায়গায় হয় না। এখানে ভালো মানের জিনিস পাওয়া যায়। আর অনেক জিনিস একসঙ্গে পাওয়া যায়। অনেকে কিনেও নেয়, তাই ভালোই লাগে। আমিও মেলা থেকে কিছু কেনাকাটা করলাম।’

তীর্থ উৎসবের সমন্বয়কারী বারোমারি ধর্মপল্লীর ফাদার রেভারেন্ড তপন বনোয়ারি জানান, প্রতি বছর একটি মুলসুরের ওপর ভিত্তি করে বারোমারি ধর্মপল্লীতে দুই দিনব্যাপী ফাতেমা রাণীর তীর্থ উৎসব উদযাপিত হয়। এবার ২৫তম তীর্থের মুলসুর হলো ‘মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণা কর্মে মা মারিয়া’।

বারমারী খ্রিষ্টধর্মপল্লীর সহসভাপতি, সাবেক ট্রাইবাল চেয়ারম্যান ও তীর্থ উৎসব আয়োজক কমিটির সভাপতি মি. লুইস নেংমিনজা জানান, দুই বছর করোনার কারণে সীমিত পরিসরে তীর্থাযাত্রা হয়েছে। করোনা-পরবর্তী সময়ের এবারের তীর্থ উৎসবে হাজার হাজার খ্রিষ্টভক্ত অংশগ্রহণ করছে। আমরা খুবই আনন্দিত।

এদিকে তীর্থযাত্রা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বিভাগের পক্ষ থেকে নেয়া হয় নিরাপত্তাব্যবস্থা। নিয়োজিত থাকেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ৩০০ সদস্য। তিন স্তরের নিরাপত্তা বিধানে সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিয়োজিত থাকে। এ ছাড়া পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম বলেন, 'আমরা এ তীর্থ উৎসবকে সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এটা এ অঞ্চলের খ্রিষ্ট সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এখানে বাইরে থেকেও অনেক খ্রিষ্টভক্ত তীর্থযাত্রী রয়েছেন। সবার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সর্বদা তৎপর রয়েছে। সবার সহযোগিতায় এ উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়।

ঢাকা মহাধর্মপদেশের ভিকার জেনারেল ফাদার গাব্রিয়েল কুরাইয়া বলেন, ‘এবারের তীর্থযাত্রায় বিশ্বমানবতার কল্যাণে বিশেষ করে বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধানের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে। এ উৎসব শুধু ক্যাথলিকদের নয়, সবার। কারণ মা মারিয়া সবার মঙ্গল করে থাকেন।’

এ বিভাগের আরো খবর